বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ভালো নেই কামার শিল্পীরা

শাহজাহান দোলন

প্রকাশিত: ২২ মে ২০২১  

নারায়ণগঞ্জে ভালো নেই কামার শিল্পের সাথে জড়িত কারিগররা। মূলত বহু আগে থেকেই কামাররা ভালোবাসা ও শক্ত হাতের কারু কাজের মাধ্যমে লোহা দিয়ে দা, বটি, কাস্তে ও খুন্তিসহ নানান গৃহস্থালির যন্ত্রপাতি তৈরীর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। তবে সময়ে সাথে সাথে তাদের ভালোবাসার এই জীবিকা এখন ফিকে হতে চলেছে। যুগের পরিবর্তন ও অধুনিকতার ছোঁয়ায় একটু একটু করে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে হাতে তৈরী লোহার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। এর পরিবর্তে নতুন করে স্থান করে নিচ্ছে চায়না ও ভারত থেকে আসা এলুমোনিয়াম ও স্টিলের যন্ত্রপাতি।

 

এছাড়া দাম বেশি হলেও টেকসই হওয়াতে ক্রেতারা ক্রয় করছেন স্টিলের চাকু, খুন্তি, কাস্তেসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি। ফলে স্টিল ও এলুমোনিয়ামের যন্ত্রপাতির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে কামার শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই এখন এই পেশা পরিবর্তন করে ফেলছেন। কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় শুধু নারায়ণগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত বাণিজ্যিক এলাকা নিতাইগঞ্জ, কালীর বাজার, চাষাঢ়া বালুরমাঠ ও খানপুরে প্রায় ১০০ টি কামারের দোকান ছিলো। এসব দোকানে অতীতে কাজকর্মের প্রচুর গতিশীলতা থাকলেও এখন সেটি নেই। এছাড়া লকডাউনের প্রতিবন্ধকতা ও সেইসঙ্গে কয়লা এবং লোহার মূল্য বৃদ্ধির মতো বেশ কয়েকটি জটিলতার কারণে সবদিক থেকে এই পেশার সাথে জড়িত থেকে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই এখন বড় কষ্টকর বলে জানিয়েছেন কামার শিল্পীরা।

 

তাই এখন সড়েজমিনে ঘুরে পুরো শহরে হাতে গনা কয়েকটি কামারের দোকানই চোখে পড়ে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের বন্দর, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁ উপজেলায়ও এক সময় বহু কামারের দোকান ছিলো। তবে কালের বিবর্তণে এসব দা, বটি তৈরীর দোকানগুলোর এখন বন্ধের পথে। কালীরবাজারের চারারগোপ খালের পাশে অবস্থিত ষাটোর্ধ্ব মানিক কর্মকারের দা-বটি তৈরীর দোকান। তিনি বলেন, বাজারে স্টিলের যন্ত্রপাতির কারনে এখন আমাদের কাছে বেশি কাজের অর্ডার আসেনা। অন্যদিকে করোনা আর লকডাউনতো লাইগাই আছে।

 

আগে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসতো নারায়ণগঞ্জে জিনিসপত্র ক্রয় করতে। সেই যিনিসের মধ্যে আমাদের হাতে তৈরী লোহার যন্ত্রপাতির একটা ভালো চাহিদা ছিলো। তখন স্টিলের যন্ত্রপাতি ছিলোনা, আর থাকলেও খুব কম ছিলো, কিন্তু এখন স্টিলের যন্ত্রপাতি বৃদ্ধি পাওয়াতে হাতে তৈরী লোহার যন্ত্রপাতি কেউ ক্রয় করেনা। সাধারণত ধান কাটার একটা কাস্তে, এটাও এখন স্টিল দিয়ে তৈরী হয়! এ সময় রঞ্জণ সরকার নামে অন্য এক কামার শিল্পী বলেন, এই কাজ করে এখন প্রতিদিনের দোকান ভাড়া ও খাবারের খরচ বের করাটাই সম্ভব হচ্ছেনা। আগে এক বস্তা কয়লার দাম ছিলো ৬’শ থেকে ৭’শ টাকা কিন্তু এখন সেই এক বস্তা কয়লার দাম হয়েছে ৩ হাজার ৫’শ টাকা। লোহার দামও কেজিতে বহুটাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সামনে এই কাজ করবো কি ভাবে বলুন? আমার নিজের অনেক অত্মীয় এই কাজের সাথে জড়িত ছিলো কিন্তু এখন আর নাই। সাবাই অন্য পেশায় চলে গেছে।

 

অন্যদিকে বটি, খুন্তি ও কাস্তেসহ অন্যান্য হাতে তৈরী লোহার যন্ত্রপাতির পাইকারি  বিক্রেতা কালীর বাজারের হাফিজ মিয়া বলেন, একসময় গ্রাম কিংবা শহর অঞ্চলে মেলা হলে সেখানে কামার শিল্পীদের লোহার গৃহস্থালির যন্ত্রপাতির অনেক চাহিদা ছিলো। কিন্তু এখন মেলাগুলোতে স্টিলের যন্ত্রপাতির চাহিদা বেশি তাই কামারদের মালের অর্ডার কমে যাচ্ছে। এবং শহরের বিভিন্ন গোটেল রেস্তরাগুলোতেও এখন লোহার তৈরী যিনিসের চাহিদা নেই সকলেই ব্যবহার করছে স্টিলের যন্ত্রপাতি।


 

এই বিভাগের আরো খবর