বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগমের নামে ভবনের উদ্বোধন

প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগমের নামে নারায়ণগঞ্জের মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার নাতনী জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফারজানা ইসলাম রুপা পিএইচডি বলেছেন, মমতাজ বেগম ভাষার জন্য, দেশের মানুষের জন্য তার জীবন বিলিয়ে দিয়ে গেছেন। তাকে মুল্যায়ন করতে হলে প্রায় সত্তর বছর আগের এ দেশের সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্রের পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখতে হবে। সেসময়ে একজন নারী পারিবারিক বাধা, সামাজিক বাধা তুচ্ছ করে বের হয়ে রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেয়া ভাষার বিরুদ্ধে নিজের মাতৃভাষা রক্ষার দাবীতে আন্দোলন করছে এটি অনেক বড় ব্যাপার।

 

 তিনি শুধু নিজ স্কুলের ছাত্রীদের নিয়েই আন্দোলন করেননি। সেসময়ের ছাত্র নেতাদেরও নিয়মিত বুদ্ধি, পরামর্শ দিয়েছেন উজ্জীবিত করেছেন যেটি ভাষা সৈনিক শফি হোসেন খান বলে গেছেন। 
রোববার দুপুর দেড়টায় মর্গ্যান স্কুল মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের ও স্কুল কমিটির চেয়ারম্যান এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। আরো বক্তব্য রাখেন মমতাজ বেগমের নাতি ইঞ্জিনিয়ার রওনকুল ইসলাম, নাতনী অতিরিক্ত ট্যাক্স কমিশনার ডঃ নাশিদ রিজওয়ানা মুনির, জেলা জাসদ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোহর আলী চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ।
অনুষ্ঠানে ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগমের নাতি সিলেট গ্যাস ফিল্ডের জিএম ইঞ্জিনিয়ার রওনকুল ইসলাম, উনি একমাত্র ভাষা সৈনিক যিনি দীর্ঘ সময় কারাবরণ করেছেন। ভাষা আন্দোলন করে কারাবরনের কারনে তার স্বামী তাকে ত্যাগ করেছিলেন। ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার দাবীর আন্দোলন না এটা বঞ্চনার বিরুদ্ধেও আন্দোলন।  


তার আরেক নাতনী অতিরিক্ত ট্যাক্স কমিশনার ডঃ নাশিদ রিজওয়ানা মুনির অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের কাছে আমাদের নানু মমতাজ বেগম রুপকথার রাজকন্যা। যিনি ভাষার জন্য অসীম সাহসী হয়ে হাড়িয়ে গেছেন। যার কবরটি কোথায় সেটিও কেউ জানেনা। তিনি বলেন, আমার নানু ছোটবেলা থেকেই সংগ্রামী ছিলেন। তিনি হিন্দু ব্রাক্ষ্মন পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার নাম ছিলো কল্যানী রায় চৌধুরী। 

 

ছোটবেলায় তার বাবা কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি একটি পুত্র সন্তান পালক নিতে চাইলে তিনি এর বিরোধীতা করে তার বাবাকে বলেছিলেন একজন মেয়ে সন্তানকেই পালক নিতে। তাহলে আমরা দুইবোন মিলে পড়াশোনা করতে পারবো। শুধু নারী হওয়ার কারনে পরিবারের এ অবহেলা তিনি ছোটবেলায়ই মেনে নিতে পারেননি। তিনি কলেজে পড়তে চাইলেও তার বাবা প্রবল বিরোধীতা করেন। পরে তার বাবা পড়াশোনার অনুমতি দেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার সাথে ফরিদপুর থেকে যাওয়া ছাত্র আব্দুল মান্নাফ মিয়ার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। তিনি বিয়ে করে ফরিদপুরে চলে আসেন। মমতাজ বেগম চমৎকার কোরআন তেলাওয়াৎ করতে পারতেন। ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হলে মন্নাফ মিয়া মমতাজ বেগমকে তালাক দেন। ৫২ থেকে ৬২ সাল পর্যন্ত দশ বছর মমতাজ বেগমকে তার মেয়েকেও দেখতে দেয়া হয়নি। পরে কয়েক বছর তিনি তার মেয়ের সাথে সময় কাটাতে পারলেও ৬৭ সালে আবার তাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। মমতাজ বেগম জীবনের শেষ কয়েক বছর কোথায় কাটিয়েছেন কোথায় তার কবর আমরা তার চার নাতির কেউ তা জানিনা।   


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, মমতাজ বেগমের নামে একটি ভবন করতে পেরে আমরা সম্মানিত হয়েছি। তার তেজস্বিতা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।   
একুশে পদপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগম ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা  ও মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে ভাষার দাবীতে নারায়ণগঞ্জে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। এবং চাষাড়া পুলিশ ফাড়ির সামনে থেকে গ্রেফতার হন। 
 

এই বিভাগের আরো খবর