বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ভিক্টোরিয়ায় দালাল-ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য

ইফতি মাহমুদ

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২২  

নারায়াণগঞ্জ শহরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ও জরুরী সেবা প্রাপ্তির জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি হাসপাতাল ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতাল। যেখানে প্রায় কয়েক হাজার লোক সাধারণ চিকিৎসা সেবা সহ জরুরী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। নারায়াণগঞ্জ শহরসহ বিভিন্ন থানা পাশ্ববর্তী জেলা মুন্সিগঞ্জসহ আরো দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। কিন্তু এখানে এসে বিভিন্ন ধরণের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সেবা নিতে আসা রোগীদের দালাল ও ঔষধ প্রতিনিধি লোকেদের দৌরাত্ন্য। 

 

সরজমিনে হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করেই দেখা যায়, জরুরী বিভাগ সামনে ঝটলা হয়ে দাড়িয়ে আছে দালালরা কখনো রোগী স্বজন পরিচয়ে কখনো হাসপাতাল কর্মচারী পরিচয়ে তারা দালালী করছে। প্রতিটি কক্ষের সামনেই লক্ষ্য করলে দেখা যায় সিরিয়ালে দাড়িয়ে থাকা রোগীদের মধ্যে একটু পর পর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। 

 

যার অন্যতম কারণ হচ্ছে ডাক্তারের সহকারীরা রোগীদের সাথে আতাত করে পিছনে থাকা রোগীদের সিরিয়ালে আগে দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে দালালী করছে এটা এই হাসপাতালের নতুন কোন দৃশ্য নয়। ভিক্টোরিয়ার দালালদের অন্যতম টার্গেট হল গ্রামের থেকে আসা রোগীদের। গ্রামের লোকেরা হাসপাতালে এসে কিছু বুঝতে না পেরে তারা দালালদের শরণাপন্ন হয়ে যায়। 

 

পরবর্তীতে দালালরা রোগীদের ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন অনুমোদনহীন প্যাথলোজী ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে তারা রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে সেবা নিতে আসা রোগীরা সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে ব্যহত হচ্ছে। তারা রোগীদের কৌশলে জানিয়ে দেয় হাসপাতালের চিকিৎসা সামগ্রী নষ্ট বা উন্নতমানের না। প্যাথলোজী ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা নিরাক্ষা করিয়ে দালালেরা মোটা অংকের কমিশন পাচ্ছে।

 

আরও দেখা যায়, বিভিন্ন চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ও মূল ফটকের সামনে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। চিকিৎসকদের কক্ষে রোগী দেখার সময় তারা ভিজিট করতে গিয়ে রোগীদের ভোগান্তীতে ফেলছে এবং চিকিৎসা সেবায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন। এটাও লক্ষ্য করা যায়, চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ও মূল ফটকের সামনে দাড়িয়ে রোগীদের প্রেসক্রিপশন ছবি তুলে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। 

 

এর বাইরে প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে এসব প্রতিনিধিদের নানান দৃশ্য। প্রায়ই দেখা গেছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষের সামনে দাড়িয়ে থাকতে। এভাবেই প্রতিদিন সরকারি এই হাসপাতালটিতে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম বেড়েই চলছে। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা।

 

এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ভূক্তভোগী এক রোগী জানান,আমি মুন্সিগঞ্জ থেইকা এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসি ডাক্তার দেখানোর পর কই কি করমু কিছু না বুঝতে পাইড়া এক জনের পরামর্শ নিছিলাম। তিনি আমারে পরামর্শ দেন আপনের প্রেশক্রিপশনে যে টেষ্টগুলো লেখা আছে এগুলো এই হাসপাতালে করায়েন না রিপোর্ট ভাল আসবে না মেশিন পুরান এই জায়গার। 

 

আমার পরিচিত এক হাসপাতালে করান কম টেকায় টেষ্টগুলা করায়া দিতে পারব। আমি তার ক্ষপ্পরে পইরা এক প্রায়ভেট হাসপাতালে গেলাম টেষ্ট করার পড়ে দেখি অনেক টাকা ভিল হইয়া গেছে। ওই লোকেরে কই এত টাকা কে বলে এই আপনারে ডিসকাউন্ট নিয়া দিছি এত টাকা কম নিছে তারপর উপায় না পাইয়া বাধ্য হইয়া টাকা দিয়া দেই তারে।

 

চিকিৎসা নিতে আসা আরেক ভূক্তভোগী জানান, এত কষ্ট কইরা সিরিয়ালে দাড়ায় থাকি ডাক্তার দেহানের লেইগা ঔষধ ওলারা মাঝখান দিয়া ডুইকা ডাক্তারের রুমে ডুকে ১০-১৫ মিনিট হইয়া যায় হেরা ভাইর হেয় না। আরো একজন ব্যাক্তি জানান, ডাক্তার দেখায়া বাইর না হেইতেই রুমের এক সাইডে দাড়ায় থাকা ঔষধ প্রতিনিধি কয় প্রেশক্রিপশনটা দিখি বইলা একটা ছবি তুলল হাসপাতালের মূল গেটে গেছি আরেকজন বলে ছবি তুলি।
 

 

এসব ব্যাপারে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ড. এস কে ফরহাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন কলটি রিসিভ করেনি।এসএম/জেসি 


 

এই বিভাগের আরো খবর