শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ভেঙেছে আমেনার স্বপ্ন, গ্রেপ্তার হয়নি ধর্ষক!

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২১  

# চাঁদপুর থেকে আমেনাকে অপহরণ করে সিদ্ধিরগঞ্জে নিয়ে আসে রিয়াদ ও শহিদুল


# পিবিআইয়ের কাছে মামলাটি হস্তান্তরের জন্য পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার

 

যুগের চিন্তা অনলাইন: একদল অশুভ শক্তি আর তাদের যৌন লালসা’র বলি হয়ে হার মানতে হয়েছে মেধাবী তরুণী আমেনা আক্তারকে (১৫)। স্বপন ছিল ডাক্তার হবে, কিন্তু প্রতিবেশী দুই যুবকের উপর্যোপুরি ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে আমেনা, ভেঙে যায় তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। চাঁদপুরের বাসিন্দা আমানে আক্তারকে গত ১ এপ্রিল অপহরণ করে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হয়।

 

প্রতিবেশী দুই যুবক রিয়াদ আব্দুল্লাহ (২০) ও মো. শহিদুল ইসলামসহ (২৬) অজ্ঞাত যুবকরা মেয়েটিকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিদ্ধিরগঞ্জের রসুলবাগ এলাকায় ফেলে যায়। তখন ওই এলাকার বাসিন্দারা আমেনাকে গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার করে সিদ্ধিরগঞ্জের মা হসপিটালে ভর্তি করে পরিবারের সদস্যদের সংবাদ দেয়। ওই দিনই আমেনার পরিবার সদস্যরা চাঁদপুর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের মা হসপিটালে এসে আমেনা আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেই দিন রাত পৌনে ১০টায়  কর্তব্যরত চিকিৎসক আমেনাকে মৃত ঘোষণা করেন।


 
এই ঘটনায় নিহত আমেনার বড় ভাই মো. মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ এনে রিয়াদ আব্দুল্লাহ ও মো. শহিদুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গত ৭ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত রিয়াদ আব্দুল্লাহ চাঁদপুরের উত্তর মতলব জোড়খালী এলাকার মৃত মিয়ার হোসেনের ছেলে এবং মো. শহিদুল ইসলাম একই এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে।


 
জানা গেছে, নিহত আমেনা আক্তার চাঁদপুরের উত্তর মতল জোড়খালী এলাকার মৃত নাসির উদ্দিনের মেয়ে। ছয় ভাই-বোনদের মধ্যে আমেনাই সবার ছোট ও মধ্যমণি। সে ২০২১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলো। পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্ত রিয়াদ আব্দুল্লাহ ও মো. শহিদুল ইসলাম তাদের প্রতিবেশী। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৮টায় আমেনা প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলে সে আর বাড়ী ফিরে আসেনি। এরপরই পরিবারের সদস্যরা এলাকার বিভিন্ন মানুষজনের কাছে আমেনার সন্ধান করতে থাকেন।

 

একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে আমেনার বড় ভাই মাহফুজুর রহমানের বন্ধু ইমরান পাশ্ববর্তী রিয়াদ ও শহিদুলের মোবাইলে ফোন করলে তারা জানায় আমেনা তাদের সাথে নারায়ণগঞ্জের একটি রেস্টুরেন্টে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছে। এরপর থেকেই রিয়াদ ও শহিদুল তাদের মোবাইল বন্ধ করে দেয় এবং ওই দিন বিকাল সাড়ে ৫টায় জনৈক তৈয়ব আলী নামের এক ব্যক্তি আমেনার বড় ভাই মাহফুজকে তার বোনের অসুস্থতার কথা বলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আসতে বলেন।


 
আমেনার ভাই মাহফুজ জানান, সংবাদ পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা চাঁদপুর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের মা হাসপাতালে এসে দেখেন আমেনার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তখন আমেনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর শাহবাগ থানা পুলিশ নিহত আমেনার সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে পরিবারকে জানায় আমেনার গোপন অঙ্গে পুরুষের বীর্জের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন ময়না তদন্ত শেষে আমেনার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন শেষে ছয় দিন পর গত  ৭ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি জানান, যেহেতু তার বোন আমেনা তাদের গ্রামের বাড়ী থেকে অপহরণ হয়েছে সেহেতু তারা চেষ্টা করেছিলেন স্থানীয় থানায় মামলাটি করতে। কিন্তু পুলিশ তা আমলে নেয়নি।  


 
কামরুল ইসলাম নামের আমেনার আরেক আত্মীয় জানিয়েছেন, বাসা থেকে বের হয়ে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় আমেনাকে অপহরণ করে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নিয়ে আসে রিয়াদ ও শহিদুল। পরবর্তীতে তাদের আরো অজ্ঞাতনামা বন্ধুরা মিলে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে আমেনাকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে তারা। অপর দিকে দীর্ঘদিন অতিবাহীত হলেও আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমেনার ভাই (মামলার বাদী) নারায়ণগঞ্জ পিবিআইয়ের কাছে মামলাটি হস্তান্তরের জন্য পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।


 
এই দিকে ধর্ষণ শেষে হত্যা বিষয়টি চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ঘটনা উল্লেখ আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবী তুলেছেন বিশিষ্টজনরা। তারা জানিয়েছেন, এতদিন অতিবাহিত হলেও কেন আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারছেনা পুলিশ? তথ্য প্রযুক্তির এমন যুগে আইনশৃঙ্খলাবাহীনি অনেক ক্লু লেস মামলা নিষ্পত্তি করেছে, সেইখানে আলোচিত মামলাটির অভিযুক্তদের এখনো আইনে আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি পুলিশ বিষয়টি উদ্বেগের বলে তারা জানিয়েছেন।

 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম যুগের চিন্তাকে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও ডিএনএ পরীক্ষার মতামত পাওয়ার পর তরুণীর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
 

এই বিভাগের আরো খবর