বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মধ্যবিত্তের গাড়ির স্বপ্নপূরণ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২১  

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত গাড়ি একটি বিলাসী পণ্য হিসেবেই বিবেচিত। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে গাড়ির মূল্য অত্যাধিক। এর অন্যতম কারন গাড়ির উপর ধার্য করা শুল্ক। যার ফলে ৪/৫ লাখ টাকার গাড়ি এই দেশে বিক্রি হয় ১৬/১৭ লাখ টাকায়। সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ি কেনার ক্ষেত্রেও ঝক্কি ঝামেলার শেষ নেই। গাড়ির মেরামত খরচ করতে গিয়ে খাজনার চেয়ে বাজনার মূল্য বেশী হয়ে দাঁড়ায়। ফলে মধ্যবিত্তের কাছে নতুন গাড়ির স্বপ্ন অনেকটাই বামন হয়ে চাঁদ ধরার মত অধরাই থেকে যায়। তবে মধ্যবিত্তের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছে নতুন কিছু উদ্যোক্তা। যারা পুরোনো গাড়ি কিনে এনে সেগুলো মডিফাই করে নতুন ক্রেতার কাছে বিক্রি করেন। অতীতে এই ধরণের ব্যবসা ব্যক্তি পর্যায়ে ও অটোমোবাইল সার্ভিস সেন্টারে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা শোরুম আকারে নেমেছে। ফলে তৈরী হয়েছে কর্মসংস্থান এবং মধ্যবিত্তরা পাচ্ছেন হাতের নাগালেই গাড়ি। ভালো মানের মডিফাইয়ের কারণে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে একাধিক সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ভুইগড়ে এমনই বেশ কয়েকটি গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ব্যবসা চালিয়ে আসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে নারায়ণগঞ্জ ছাড়িয়ে সারাদেশেই ছড়িয়ে পরেছে তাদের সুনাম। ফেইসবুক, ইউটিউবের মাধ্যমে গাড়ির কন্ডিশন ও দাম দরের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ায় স্বল্প বাজেটের ক্রেতারা দ্বিধাবিহীন ভাবে চলে আসছেন গাড়ি বিক্রয় কেন্দ্রে। যেখানে জাপানি রিকন্ডিশন গাড়ি কিনতে বর্তমানে ১৫/২০ লাখের নিচে ভাবাই যায় না যেখানে ৪/৫ লাখ টাকায় বেশ ভালো কন্ডিশনের গাড়ি পেয়ে যাচ্ছেন মধ্যবিত্তরা। সরজমিনে নারায়ণগঞ্জের ভুঁইগড়ে গিয়ে দেখা মেলে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির শোরুমের চিত্র। হাদিছা কার হাট, ঐশী কার হাট সহ বেশ কিছু বেনামী গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। এই ব্যবসায় সর্বপ্রথম শোরুম দেওয়া হাদিছা কার হাটে ঢুকে দেখা যায় দুজন ক্রেতা ঘুরে ঘুরে গাড়ি দেখছেন। একজন এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে অন্যজন কুমিল্লা। উভয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখে গাড়ি কিনতে এসেছেন নারায়ণগঞ্জে। বাজেটের সাথে গাড়ি পছন্দ হলে আজই বুকিং দিয়ে যাবেন তারা। শোরুমের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে ৮০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি বিক্রয় করেছেন তারা। তবে অধিকাংশ ক্রেতার ৩ থেকে ১৫ লাখের গাড়ির প্রতি আগ্রহ বেশী। এছাড়া ক্রেতার চাহিদা মত সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ি এনেও দিতে পারেন তারা। সেক্ষেত্রে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ’র মত গাড়িও ক্রেতার হাতে তুলে দিতে সক্ষম। গাড়ির কেবল বিক্রির দিকেই মনযোগী নন শোরুম মালিকরা। গাড়ির এমনভাবেই প্রস্তুত করে রাখেন যাতে সহসাই বড় কোন সার্ভিসিং এ হাত দিতে না হয় ক্রেতাদের। আর এই কারণেই দিনে দিনে তাদের ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে।
কথা হয় হাদিছা কার হাট শোরুমের সহযোগী মালিক আমির হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ২০১২ সালে প্রথম গাড়ি বিক্রির যাত্রা শুরু করে হাদিছা কার হাট। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাদের। একটি শোরুম থেকে এখন ৩টি শোরুম হয়েছে ভুইগড়ে। ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারায় তাদের মাধ্যমেই নতুন ক্রেতা এসেছে গাড়ি কেনার জন্য। গাড়ি বিক্রির পাশাপাশি, গাড়ি ক্রয়, গাড়ি বদলেরও সুযোগ দিয়ে থাকেন তারা। নিজেদের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, একবার সিলেটের একজন ক্রেতা আমার কাছে গাড়ি কিনে আরও ১২ জনকে পাঠিয়েছেন। এগুলো আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় প্রাপ্তি। আমাদের অধিকাংশ ক্রেতাই অন্যান্য জেলার। নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী জেলা হলেও এখানে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির ক্রেতা খুবই কম। আমাদের মূল টার্গেট মধ্যবিত্ত মানুষদের কাছে সন্তুষ্টি অর্জন। সেই কারনেই পুরোনো গাড়ি কিনে সার্ভিসিং করিয়ে ২০ হাজার টাকা লাভ রেখে গাড়ি বিক্রি করে দেই। একই ভাবে কথা হয় ঐশী কার হাটের পরিচালক কবির হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ৫/৬ টা গাড়ি নিয়ে আমি শোরুম দেই। আমাদের এখানে ১ লাখ থেকে ২০/৩০ লাখ টাকার গাড়ি বিক্রি করা হয়। প্রতি মাসে প্রায় ২০/২৫টি গাড়ি বিক্রি করি আমরা। তবে করোনাকালে আমাদের বেচাকেনার খুব দুরবস্থা ছিলো। তখন অনলাইনে কিছু গাড়ি বিক্রি করে কোনমতে টিকে ছিলাম। এখন ধীরে ধীরে ব্যবসা স্বাভাবিক হচ্ছে। সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির বাজারের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেমন তা জানতে চাইলে বলেন, যদি কখনও শুল্ক কমে যায় কিংবা দেশেই ভালো মানের গাড়ি বানানো শুরু করে তখন আমাদের ব্যবসা টিকে থাকবে না। তবে বর্তমানে যেভাবে চলছে তাতে অটোমোবাইল শিল্প উন্নত হচ্ছে। কর্মসংস্থান বাড়ছে। অনেকেই গাড়ি কিনে রেন্ট এ কার বা উবারে দিয়ে আয়রোজগার করছে। এরা অধিকাংশই মধ্যবিত্ত। গাড়ি শুরু শখ হিসেবেই নিচ্ছেনা তারা, আয় রোজগার করার জন্যেও নিচ্ছেন অনেকে।

এই বিভাগের আরো খবর