মনোবল চাঙা রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা বিএনপি’র

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৮ পিএম

# বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীদের দাবি নির্বাচন হবে না
দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাহিরে অবস্থান করছেন বিএনপি যাকে ঘিরে নানা হামলা-মামলার নির্যাতনের পর সরকারের বিরুদ্ধে নানা ইস্যু নিয়ে গত বছরের জুলাই মাস থেকে টানা কর্মসূচি পালন করছে দলটি। দফায় দফায় নানা মানববন্ধন, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পর নির্বাচন কাছে চলে আসায় গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহা-সমাবেশের ঘোষণা দেয়।
আর এই সমাবেশে পুলিশ-আওয়ামী লীগ-বিএনপির ত্রিমুুখী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাকার নয়া পল্টন মহা-সমাবেশ পশু হয়ে যাওয়ায় ও বিএনপির মূল পার্যায়ের নেতাকর্মীরা গ্রেফতারের পর থেকেই গত ২৯ অক্টোবর থেকে লাগাতার কঠোর কর্মসূচির অংশ হিসেবে হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়ে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে তিন দফা হরতাল ও নবম দফা পর্যন্তু অবরোধের কর্মসূচি পালন হয়। যাকে ঘিরে মামলা, হামলা, গ্রেফতার, নির্যাতনে দিনের পর দিন ঘর-বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ছেড়ে ও আত্মগোপনে অনেকেই। কিন্তু আত্মগোপনে থেকে ও সর্বাত্মক অবরোধ পালন করছে এমনি দাবি জানিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই উত্তপ্তের দিকে ঝুঁকছে।
নারায়ণগঞ্জের সাতটি থানায় প্রায় ২৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে যেখানে আসামী কয়েক হাজার তা ছাড়া গত এক মাসে প্রায় হাজারের কাছাকাছি নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এই অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে। বিশিষ্টজনদের আশঙ্কা ফের পাতানো নির্বাচনের ছক এঁকেই সরকার এগুচ্ছে।
সংবিধানের দোহাই দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের নানা চাপ, প্রলোভন দেয়া হয়েছে। কিন্তু জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে সরে যায়নি বিএনপি। এ অবস্থায় ফের ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলটির মহাসচিবসহ হাজার হাজার নেতা কারাগারে। যারা গ্রেফতার হননি তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন।
দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি নেতারা গ্রেফতার হলে অন্যান্য দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সারির নেতারা আন্দোলন এগিয়ে নেবেন। শুধু তাই নয় বিএনপি যে নির্বাচনে অংশ নেবে না সে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না এমন দাবি জানিয়েছে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের বেশি কয়েকজন নেতাকর্মীরা। সব মিলিয়ে ১ দফা দাবি সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির এক দফা এবং ঘোষিত তফসিল বাতিলের দাবিতে নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে রয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি।
নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী জানা গেছে, হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি ঘেরাও, সমাবেশের চিন্তা-ভাবনা করছে বিরোধী দলগুলো। বিশেষ করে আগামী ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসকে কেন্দ্র করে ফের বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপিসহ অন্যান্য দল। যেখান থেকে সরকার পতনের আন্দোলনকে আরো বেগবান করার কথা ভাবছে দলটির নেতারা। এদিকে নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরা বর্তমানে রাজপথ থেকে একটু সরে সরে থাকলে ও শীঘ্রই নির্বাচন প্রতিহত করতে ঘুরে দাঁড়ানোর আশঙ্কা পাওয়া যাচ্ছে।
সূত্র বলছে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের ওপর নতুন করে ক্রেকডাউন চালাচ্ছে সরকার। যদিও বিএনপি ২৯ অক্টোবর থেকেই লাগাতার ভাবে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ, গত ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল।
কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনভাবেই প্রলোভন দেখিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়াতে পারেনি এটা বিএনপির জন্য একটি স্বাভাবিক বিজয় বলা চলে। এদিকে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীদের ধারণা এই বার কোন মতেই এই সরকার নির্বাচন করতে পারবে না। জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর ৭ জানুয়ারির ভোট ঘিরে নতুন কৌশলে আন্দোলনে নামতে চায় দলটি। জানা গেছে তখন জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে একত্রে শক্তভাবে কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।
এদিকে একদফার আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সম্প্রতি জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের এক ধরনের বোঝাপড়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন বয়কট করে সরকার বিরোধী আন্দোলনে থাকা যুগপতের বাইরের একাধিক দল ও জোটের সঙ্গেও বিএনপির পক্ষ থেকে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে সরকারবিরোধী সব দল ও জোটকে ভোটের আগে এক প্ল্যাটফর্মে আনার পরিকল্পনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড।
নেতাকর্মীরা বলছে, হাতেগোনা দু’-একজন ছাড়া কেউ ভেঙে পড়েনি এই চাপে, পড়েনি সেই প্রলোভনেও। যা বিএনপির কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মনোবলকে চাঙ্গা করে তুলেছে। আন্দোলন চালিয়ে যেতে দিচ্ছে উৎসাহের টনিক। ফলে সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে চাচ্ছে বিএনপি।
তাছাড়া নেতাকর্মীদের মধ্যে যতটুকু অনৈক্য রয়েছে সেগুলো ভেঙ্গে একত্রিত হয়ে আন্দোলনে নামার আয়োজন চলছে বলে ও জানা যায়। এদিকে দীর্ঘ এক মাস কঠোর আন্দোলনে জেলা বিএনপির মুখ দেখেনি নেতাকর্মীরা কিন্তু এবার ঐক্য ডাকে ঘুরে দাঁড়িয়েই নির্বাচনকে ঘিরে চমক দেখাতে পারে বলছে সংশ্লিষ্ট মহল।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা দেশের জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে রয়েছি দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ বর্তমানে কঠোর কর্মসূচি অংশ হিসেবে দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি চলছে আমাদের আর আমাদের নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে পালন করছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে এই স্বৈরাচারী সরকার যেভাবে আরো ২০১৪-২০১৮ সালের মতো অবৈধ নির্বাচনের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে এটা দেশের যখন আর হতে দিবে না। এই বার দেশে কোন নির্বাচন হলে এটা হবে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন যা হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আর বর্তমানে যে মনোনয়ন খেলা হচ্ছে, তারা এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া ঠিক করতে পারবে নির্বাচন করতে পারবে না।
আর যেহেতু এই মাস নির্বাচনের পূর্বের মাস এই মাসে আমাদের নানা পরিকল্পনা রয়েছে, আমাদের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সামনের দিকে আগাবো। আর আমি আবারো বলছি দেশের জনগণ যেহেতু এই সরকারের অবৈধ তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে তারা এই নির্বাচন মানবে ও না হতে ও দিবে না। এস.এ/জেসি