মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’, বিকল পাঁচ পাম্প !

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২১  

# প্রথমে বিদ্যুতবিলে চিন্তার ভাঁজ, পরে ডিজেলের বিল


# পাম্প বিকল হওয়ায় সরছেনা পানি


# দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে এলাকাবাসীর


# স্থায়ী সমাধানের পথ বের করতে পারছেনা কেউই 

 

এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। একে তো জলাবদ্ধতায় নাকাল এলাকাবাসী। এরউপর ফতুল্লার লালপুরে পাম্প হাউজে একেএকে ৫টি সেচ পাম্পই বিকল হয়ে পড়েছে। ফলে গতকাল থেকেই বন্ধ রয়েছে পাম্পগুলো। ফলে বৃষ্টির পানি জমে আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে লালপুরের জলাবদ্ধতা। সড়কের কোথাও কোথাও কোমর পর্যন্ত ছাড়িয়েছে পানির উচ্চতা। বসতবাড়ি তলিয়েছে বৃষ্টির জলে। এই অবস্থায় লালপুরের মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে হাহাকার। পানিতে নিমজ্জিত থাকা লালপুরবাসী জলাবদ্ধতা নিরসনের আর্তনাদ জানালেও এগিয়ে আসছেন না জনপ্রতিনিধিরা।

 

জানা গেছে, লালপুর পাম্প হাউজে বিদ্যুৎ চালিত ৩টি সেচ পাম্প আগে থেকেই ছিলো। এর মধ্যে একটি ৫০ ঘোরা ও ২টি ২৫ ঘোরা ক্ষমতা সম্পন্ন। এই তিনটি পাম্প জলাবদ্ধতা নিস্কাশনে কুলিয়ে উঠতে না পাড়ায় সেখানে সেনাবাহিনীর ডিএনডি প্রজেক্ট থেকে ডিজেলে চালিত ২টি পাম্প দেয়া হয়। এরপর গত ২০ তারিখ থেকে একযোগে ৫টি পাম্প চালানো হচ্ছিল। তবে, গতকাল সকাল থেকেই একে একে ৫টি পাম্পই বিকল হয়ে যায়। পাম্প হাউজের একাধিক সূত্র দৈনিক যুগের চিন্তাকে জানায়, বিদ্যুৎ চালিত ৩টি পাম্পই জ্বলে গেছে। একই সাথে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া ডিজেলে চালিত ২টি পাম্পও বিকল হয়ে যায়। সবগুলো পাম্পই বন্ধ হয়ে আছে।

 

গতকালের ভারি বর্ষনের কারণে জলাবদ্ধতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। হতাশা প্রকাশ করে লালপুর এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমাদের ভাগ্যটাই খারাপ। লালপুরের জলাবদ্ধতার চিত্র পত্রপত্রিকার মাধ্যমে উঠে আসার পর এখানে জেলা প্রশাসনের নজর পড়লেও আমাদের জনপ্রতিনিধিরা বা শামীম ওসমান ফিরেও তাকাচ্ছেন না। এই দুর্ভোগে তাকে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। অবশেষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ কর্মকর্তারা এখানে পরিদর্শনে আসার পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ২টি পাম্প দেয়া হলো। আমরা আশায় বুক বেঁধে ছিলাম যে, এবার হয়তো সমাধান মিলবে। কিন্তু ভাগ্যটা এতোই খারাপ যে একই দিনে এক সাথে পাঁচটি মটরই বিকল হয়ে গেলো।’

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাম্প হাউজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বলেন, ‘পাম্পগুলো বিকল হওয়ার পর চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি বিদ্যুৎ চালিত মোটরগুলো ঠিক করার জন্য বলেছেন। আমরা ১৪-১৫ হাজার টাকা দিয়ে ডিজেল ও কিছু সরঞ্জাম এনেছিলাম। কিন্তু ঢাকা থেকে মালামাল আনতে আনতেই সেনাবাহিনীর পাম্প ইঞ্জিনিয়ার চলে গেছেন। মটরগুলো বন্ধ রয়েছে। আশপাশে ক্রমশই পানি বাড়ছে। ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়েছে সাধারণ মানুষ।’ ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান বলেন, গতকাল সারারাত এবং সকালে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় আরো ২ ফুট উচ্চতায় পানি বেড়েছে। একারণে মটরগুলোতে বৃষ্টির পানি লেগে বিকল হয়ে পড়েছে। এগুলো মেরামতের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সারাদিন মটর চলেনি। বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা আরো বেড়েছে। মটরগুলো ঠিক করার পর তা চালানো যাবে। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ ও এলাকাবাসির সমন্বয়ে এগুলো ঠিক করা হচ্ছে।

 

এদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছিলো জলাবদ্ধতা নিস্কাশনের জন্য। গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসন গঠিত ওই কমিটি সরেজমিনে এসে পরিদর্শনও করেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সমাধানের পথ বের করা যায়নি। জানা গেছে, ওই কমিটির সদস্য সচিব সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ জহুরা। এই বিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ জহুরার সাথে যোগাযোগ করা হলে দৈনিক যুগের চিন্তাকে তিনি বলেন, ‘আজ (গতকাল) এই বিষয়ে আমাদের মিটিংয়ে বসার কথা ছিলো। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউন চলে আসায় অন্যান্য  বিষয়ে কাজ করতে হয়েছে। এটা নিয়ে দু’একদিনের মধ্যে বসা হবে। বসার পর আমরা স্থায়ী সমাধানের পথ বের করবো।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লালপুরের মটরগুলো বিকল হয়ে থাকলে তা যেন পূনরায় ঠিক করা হয়, সেই বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে। আর বিদ্যুৎ বা ডিজেল খরচসহ সার্বিক বিষয় নিয়েই মিটিংয়ে কথা বলে সমাধানের পথ বের করা হবে।
   

এই বিভাগের আরো খবর