শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মসজিদে লাগানো টাইলস নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা

ফরিদ আহম্মেদ বাধন

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২২  

মসজিদের ভেতরে সেজদার জায়গায় লাগানো হয়েছে টাইলস। কিন্তু প্রতিটি টাইলসসেই রয়েছে জন্তুর ছবি।  এ নিয়ে মুসুল্লি থেকে শুরু এলাকাবাসীর মধ্যে শুরু হয়েছে উত্তেজনা। ঘটনাটি ফতুল্লার হরিহরপাড়া প্রেম রোডস্থ আজমেরী জামে মসজিদের। তবে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, মসজিদের সাবেক ঈমাম মাওলানা আমিনুল ইসলাম জিহাদী ঐ টাইলস ক্রয় করার ব্যাপারে কান্নাকাটিও করেছিলেন।

 

যার কারনে যারা টাইলস ক্রয় করতে গিয়েছিলেন তারা টাইলস ক্রয় করতে বাধ্য হয়েছেন। অপরদিকে একটি সূত্রের দাবী, টাইলসের মধ্যে যে জন্তুর ছবি রয়েছে তা বিশ^ব্যাপী পরিচিত ইলুমিনাতির লোগো । তবে এ নিয়ে চলমান বিতর্কে যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী। মসজিদের টাইলসে জন্তুর ছবির ব্যাপারে মসজিদের মোতোওয়াল্লী ইফতেখারুল ইসলাম ঝিমু নীরব ভুমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।


প্রায় পাঁচ বছর আগে হরিহরপাড়া প্রেম রোডে প্রতিষ্ঠিত হয় আজমেরী জামে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। মসজিদের জমিটি ইফতাখারুল ইসলাম ঝিমু মসজিদের জন্য দান করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি মসজিদে কমিটি করা হলেও  আজমেরী জামে মসজিদটিতে পাঁচ বছরেও করা হয়নি  কোনো কমিটি। মোতাওয়াল্লী হিসেবে ঝিমুই সব কিছুর তদরকি করেন।

 

মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করার পর  বেশ কয়েকজন ঈমাম চাকুরী ছেড়ে চলে গিয়েছেন।  ১ বছরেরও বেশি সময় আগে মসজিদে আমিনুল ইসলাম জিহাদী নামে একজনকে ঈমাম হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ৬ মাস পূর্বে মসজিদটিতে টাইলস লাগানো বাবদ আফজাল নামের একজন ব্যাক্তি ১লাখ টাকা ও এলাকাবাসীও টাইলসসের জন্য অনুদান দিয়েছিলেন। এরপর শুরু হয় টাইলস কেনার উদ্যোগ।

 

মসজিদটিতে কোনো কমিটি না থাকার কারনে এলাকার মোস্তফা,জামাই সেন্টু,সিদ্দিক,আফজাল ও মসজিদের ঈমাম আমিনুল ইসলাম জিহাদী টাইলস কেনার জন্য নারায়ণগঞ্জে যান। দোকানে গিয়ে মসজিদের তৎকালীন ঈমাম আমিনুল ইসলাম একটি ডিজাইন করা টাইলস পছন্দ করেন। তবে অনুদানকারী আফজাল ঐ ডিজাইনের টাইলস ক্রয় করতে অনিহা প্রকাশ করেন। তবে ঈমাম ও মোস্তফা ছিলেন নাছোড় বান্দা।

 

এক পর্যায়ে ঈমাম ঐ টাইলস ক্রয় করার জন্য চোখের পানি ফেলে দেন। ঈমামের এমন আচরণে  উপস্থিত ৪ জন ডিজাইন করা টাইলস ক্রয় করতে বাধ্য হন।  সম্পুর্ন মসজিদের জন্য যে ডিজাইন করা টাইলস ক্রয় করা হয় সেই টাইলসগুলোর প্রত্যেকটিতে কৌশলে জন্তুর ছবি অংকন করা ছিলো যা বাকি  ৩জন ব্যক্তির চোখেই পড়েনি।


 টাইলস ক্রয় করতে যাওয়া সিদ্দিকুর রহমান দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, আসলে টাইলসগুলো যখন কিনতে গিয়েছিলাম তখন বিষয়টি নজরে আসেনি। পুরো মসজিদে টাইলসগুলা লাগানোর সম্পন্ন হওয়ার পর এখন দেখা যাচ্ছে প্রতিটি টাইলসের ভিতরে ছোট ছোট করে অসংখ্য জন্তুর ছবি।  এ বিষয়টি নিয়ে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছেন বলেও তিনি জানান।  


মসজিদের পাশে ফ্ল্যাক্সি লোডের ব্যবসায়ী জানান,মসজিদের টাইলস লাগানোর পর থেকে কয়েকদিন পরপর ঈমাম সাহেব তার গ্রামের বাড়ির একটি বিকাশ নাম্বারে ৩০/৪০ হাজার টাকা করে বিকাশ করতেন। একদিন তাকে ঐ টাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন,তিনি বিকাশে গ্রামে যে টাকা পাঠান তা মূলত তাকে  হাদিয়া দেয়া টাকা।  এমন প্রশ্নের পর থেকে তিনি আর ঐ দোকানে বিকাশ করতে যাননি।


সূত্রের দাবী, বিশে^ ইলুমিনাতি নামে যে সংগঠন রয়েছে তাদের সংগঠনের নির্দেশিত কোনো কাজ কেউ সম্পাদন করলে তাকে তারা কমিশন দিয়ে থাকেন। ঈমাম সাহেব টাইলস লাগানোর ব্যাপারে হয়তো তেমনই কোনো নির্দেশনা পালন করেছিলেন। আর সেই সুবাদে তিনি সেখান থেকে কমিশনও পেয়েছেন।    


আজমেরী মসজিদের মুসল্লিরা বলেন,মসজিদে টাইলস লাগানোর পর নামাজীরা বিষয়টি প্রথমে খেয়াল করতে পারেনি। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নামাজীদের সেজদার জায়গার পাশে টাইলসের উপর অষ্পষ্ট জন্তুর ছবি তা সবার গোচরে আসে।

 

এ নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ বিষয়টি নিয়ে মসজিদের মোতোয়াল্লী ঝিমুকে জানানো হয়েছিলো কিন্তু ব্যাপারে তিনি নীরব ভুমিকা পালন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আশপাশের বেশ কয়েকজন ইসলামী স্কলার মসজিদটিতে জন্তুর ছবি সম্বলিত টাইলসে জন্তুর ছবি থাকাবস্থায় নামাজ আদায় না হওয়ার ব্যাপারেও অভিমত দিয়েছেন। তবে বিষয়টি আসলে ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত এ নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। মুসুল্লীদের দাবী, নামাজে দাড়ানো অবস্থায় জন্তুর ছবি তেমন স্পষ্ট দেখা না গেলেও  রুকুতে গেলে জন্তুর ছবি স্পষ্ট  চোখে ভেসে উঠে।  


এব্যাপারে মসজিদের সাবেক ঈমাম  আমিনুল ইসলাম জীহাদী ব্যবহৃত মোবাইলে  একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি তার মুঠোফোনটি রিসিভ করেননি।এব্যাপারে মসজিদের মোতোয়াল্লী ইফতেখারুল ইসলাম ঝিমুর মোবাইলে  যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি তার মুঠোফোনটি রিসিভ করেননি।  

 

এব্যাপারে মসজিদের বর্তমান ঈমাম  হাফেজ মাওলানা মুফতি ইলিয়াছুর রহমান বলেন, মসজিদের টাইলস লাগানোর পর ঈমামতিতে যোগদান করেছি। টাইলস নিয়ে মুসুল্লিদের মধ্যে দুটি ভাগ হয়েছে। বিষয়টি সমাধানে একজন মুফতি সাহেবের মতামত  নেয়া জরুরী বলে মনে করেন তিনি।

এই বিভাগের আরো খবর