শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

মহানগর আ.লীগে উভয় সংকট

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩  

 

# অভিযোগের অন্ত নেই, হ-য-ব-র-ল সম্মেলন
# সমন্বয় নেই খোদ মহানগর কমিটিতেই

 

 

ব্যর্থতার অভিযোগ যেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের পিছু ছাড়ছে না। সভাপতি হিসেবে আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এডভোকেট খোকন সাহা বর্তমান কমিটির দায়িত্ব নিয়েছেন প্রায় ১০ বছর। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ হিসেব করলে সেটা প্রায় ৮ বছর। তবে ৮ বছরই হোক কিংবা ১০ বছরই হোক না কেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একটি কমিটির সর্বোচ্চ মেয়াদ থাকার কথা তিন বছর। অথচ এই দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পরও গঠন করতে ব্যর্থ হয় ইউনিট এবং সহযোগী কমিটিগুলো। এমনকি বেশ কিছু সহযোগী সংগঠনসহ এসব ইউনিট কমিটিগুলো এখনও মহানগর কমিটির মুখই দেখেনি। পুরাতন শহর আওয়ামী লীগের সেই কমিটিগুলোই এখন মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

 

অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের এই দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতা একসাথে দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর। তবে এই দীর্ঘ বিশ বছরেও তারা দু’জনে সম্মিলিতভাবে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি বলে অভিযোগ আছে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকেই। অনেকেই আবার আনোয়ার-খোকনের এই নেতৃত্বকে ‘আলাল দুলালের খেলা’ কিংবা ‘সতীনের সংসার’ হিসেবে রম্য করতেও ছাড়েন না। সম্প্রতি ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করার বিষয়েও তাদের দ্বিমত কাজ করছে বলেও মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীগণ। তাই সম্মেলনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা না করাকেও তারা দেখছেন ব্যর্থতা হিসেবে। তাই পরে নাম ঘোষণা করতে পারলে সম্মেলনে নাম ঘোষণা করতে ব্যর্থ কেন এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন তারা। অনেকেই আবার তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলে মানববন্ধনসহ প্রতিবাদও করেছেন।

 

দলীয় তথ্যসূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন আনোয়ার হোসেন এবং খোকন সাহা। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাসভবনে এই দুইজনকে পুনরায় মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে ৭ দিনের মধ্যে কেন্দ্রে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে সেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে সময় কেটে যায় দুই বছর। অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর সেই কমিটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয় ২০১১ সালে। সেই থেকে পুরানো শহর কমিটিগুলো মহানগর কমিটি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার অধীনে থাকা ৯টি ওয়ার্ডের বিপরীতে তার সম্প্রসারিত রূপে সিটির ওয়ার্ড সংখ্যা হয়ে যায় ২৭ টি। প্রায় এক যুগ যাবৎ এই ওয়ার্ডগুলোর উৎপত্তি হলেও এখানে কোন সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি।

 

এমনকি নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের কমিটিও চলছে সেই শহর আওয়ামী লীগের কমিটি দিয়েই। গত বছর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়েও সভাপতি এবং সম্পাদকের দ্বিমুখী কর্মকান্ড চাক্ষুস করেছেন কমী সমর্থকগণ। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে আলাদা সমর্থকদের নিয়ে আলাদা টেবিলে বসেছিলেন দুই নেতা। এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সভাপতি আনোয়ার হোসেন। তাকে না জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক তার সমর্থকদের নিয়ে আলাদা বসে সিদ্ধান্ত নেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তাছাড়া সভাপতি হিসেবে একটানা বিশ বছর আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একটানা ২৭ বছর খোকন সাহা এই পদ দখল করে রাখায় নতুন নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ নষ্ট বলে এবার যখন সম্মেলন হওয়ার তালিক নির্ধারণ করা হয় তখন অনেকেই নতুন আশায় বুক বেধেছিলেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি বলে তাদের সেই আশায় গুড়ে বালি।

 

এখন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের চাহিদার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চাপে পড়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠনে মাঠে নেমেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ। কিন্তু মজার বিষয় হলো সেখানেও ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের রুট লেবেলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্য থেকে। এসব ওয়ার্ড কমিটি গঠনে নির্ধারিত সম্মেলনে নেতৃত্বের কোন ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হন নেতৃবৃন্দ। শুধুমাত্র যেখানে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই সেসব পদ ছাড়া অন্যকোন পদের দায়িপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দের নাম ঘোষণা করতে ব্যর্থ হন এই দুই নেতা।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন পদে যারা অধিষ্ঠিত হতে ইচ্ছুক তারা তাদের নামের তালিকা এসব নেতাদের হাতে আগেই পৌছে দিয়েছেন। তাই এখানে কোন কিছু জানা বুঝার থাকলে সম্মেলনের আগেই দেখে নেওয়ার সুযোগ ছিল। অন্যদিকে এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মোটা অঙ্কের একটি আর্থিক ব্যয়েরও ব্যাপার আছে। অনেক প্রার্থী-ই তাদের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য লোক সমাগমসহ ব্যনাার, ফেস্টুন ও পোস্টারেও ব্যয় হয়ে যায় অনেক টাকা। তাদের এই উৎফুল্লতা, আনন্দ ও উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল শুধুমাত্র তাদের কমিটির দায়িত্বে কে থাকবেন তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। কিন্তু সেখানে তাদের নাম ঘোষণা হবে না উল্লেখ করে পরে জানানো হবে বলেও ঘোষণা করেন তারা। তাই তাদের ডাকা এই সম্মেলনকে শুভঙ্করের ফাঁকি উল্লেখ করে অনেককেই বলতে শোনা গেছে পরে নাম ঘোষণা করতে পারবে, কিন্তু এখন ঘোষণা করতে পারবে না। প্রয়োজনে নেতাকর্মীদের চাহিদা জানতে তারা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যেতে পারতেন বলেও মন্তব্য করেন তারা।

 

তবে সভাপতি ও সম্পাদকের এই মতপার্থক্যের কারণে সুযোগ নিচ্ছেন অনেকে। এরই মধ্যে নাসিক ২৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আফজাল হোসেন নামের এক সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থীকে সম্মেলনের এক মাস আগে থেকেই নিজেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করে ব্যানার ফেস্টুন ছাপিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অনেকেই বিষয়টি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা বলে জানান অনেক সমর্থক। অথচ বিষয়টি নিয়ে কোন প্রকার শব্দটি পর্যন্ত করেননি মহানগর আওয়ামী লীগ। অনেকেই আবার টাকা খেয়ে নিজেদের পছন্দের লোককে নির্বাচিত করার অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগটি সভাপতি এবং সম্পাদকের কানেও পৌঁছেছে।

 

তাইতো মঞ্চে এডভোকেট খোকন সাহা কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আমাদের উপর উঠা অভিযোগ মিথ্যে, আমরা কোন টাকা খেয়ে কাউকে পদ দেইনি। আমার রাজনৈতিক উত্তরসূরী হিসেবে আমার পরিবারের কোন সদস্য বা আত্মীয় নেই। তাই স্বজনপ্রীতিরও কোন কারণ নেই। এর আগে বন্দরের নাসিক ২৭ নং ওয়ার্ড থেকেও টাকা খেয়ে পদ দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তোলা হয়। তাই যতদিন কমিটির নেতৃত্ব কোন সিদ্ধান্তে ঐক্যমত পোষণ করতে না পারবেন, কোন সিদ্ধান্ত নিতে আলাদা টেবিলে বৈঠক না করে এক টেবিলে বসতে না পারবেন ততদিন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কোন ক্ষতি না হলেও দলীয় ভাবমূর্তি নষ্টসহ অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হবে বিশাল জনসমর্থনের এই সংগঠনটি।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর