শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মহিলা ফোরামের কাউন্সিলে সভাপতি পূজা, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২২  

সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের ২য় জেলা কাউন্সিল উপলক্ষে গতকাল বিকেল ৪ টায় আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কমিটি পরিচিতি আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগারের এক্সপেরিমেন্টাল হলে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার পূর্বে শহরে বর্ণাঢ্য র‌্যালি হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু।

 

 সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সংগঠক মিমি পূজা দাসের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক নিগার সুলতানা পলি, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক রুখসানা আফরোজ আশা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক সুলতানা আক্তার।

 

 নেতৃবৃন্দ বলেন, অনেক আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা, অথচ সেই স্বাধীন দেশের নারীরা কি আজো স্বাধীন? ঘরে বাহিরে প্রতিনিয়ত নারী নির্যাতিত হয়। দেশের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে নারী নির্যাতন হয় না। পারিবারিক নির্যাতনে বাংলাদেশ ৪র্থ, বাল্য বিবাহে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম হয়েছে গত বছর।

 

 গণ পরিবহনে ৯৪ শতাংশ ও পোশাক কারখানায় ৮০ শতাংশ নারী কোন না কোন ধরনের নির্যাতনের শিকার। পুরুষতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোতে স্বাধীন দেশের সংবিধানে নারীকে আইনতই রেখেছে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সম্পত্তিতে সমঅধিকার এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

 

 নারীর প্রধান কাজের ক্ষেত্র হিসেবে যে গৃহস্থালী কাজকে রাখা হয় সেই গৃহস্থালী কাজের স্বীকৃতি এবং মূল্যায়ন পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজ কোথাও নেই। অথচ গৃহস্থালি কাজ ছাড়া কোন পরিবার ও সমাজ কল্পনা করা যায় না। 

 

ঘরে সবার জন্য খাবার তৈরি, জামা-কাপড়, তৈজসপত্রসহ ঘরদোরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, শিশুদের লালন-পালন করা, স্কুলে আনা-নেয়া, পড়ানো, বয়স্ক ও রোগীদের সেবা প্রদানসহ গৃহ ব্যবস্থাপনার প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ নারীরা করে থাকেন। গৃহস্থালি কাজ ছাড়া মানুষের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক জীবন বিকশিত হওয়া তো দূরের কথা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। 

 

কিন্তু এ কাজের কোন স্বীকৃতি নেই, মর্যাদা নেই এমনকি এ কাজকে তাচ্ছিল্য করা হয় সবসময়। বিশ্বের অনেক দেশেই বিবাহ বিচ্ছেদের পর অর্জিত সম্পত্তি স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সমান ভাগ করার আইন আছে। অর্থাৎ যদি ২০ বছর সংসার করার পর কোন স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাহলে এই ২০ বছরে সৃষ্ট মোট সম্পত্তির সমান সমান ভাগ হবে।

 

 কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো সংসার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নারীর শারীরিক-মানসিক শ্রম থাকা সত্ত্বেও নারীরা স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর সম্পত্তির প্রায় কোন অংশই পান না। ফলে গৃহিনীরা অসহায় হয়ে পড়েন। অনেক সময় আর্থিক নিশ্চয়তা নেই বলে অনেকে অত্যাচারিত হয়েও স্বামীর সাথে থাকতে বাধ্য হন। 

 

নেতৃবৃন্দ বলেন, লুটপাটের পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থাই পুরুষতান্ত্রিকতা, মৌলবাদ ও ভোগবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। মুনাফার চোখে নারীর শ্রম সস্তায় বিক্রি করা যায় আর দেহ পণ্য হিসেবে মোটা লাভে বিক্রি করা যায়। নারীর শ্রম যেমন সস্তা তেমনি দেহকেও সস্তা পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। আজ নারীমুক্তির সামনে সবচেয়ে বড় বাঁধা পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।

 

 অবিলম্বে নারীদের শোষণমুক্তির আন্দোলনের সাথে সমাজ পরিবর্তনের লড়াইকে সামনে অগ্রসর করতে হবে। আলোচনাসভা শেষে মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি শম্পা বসু নবনির্বাচিত ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি পরিচিতি করিয়ে দেন।

 

 সম্মেলনে সভাপতি হয়েছেন মিমি পূজা দাস, সহসভাপতি নিগার সুলতানা পলি, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুন্নাহার রুমা, দপ্তর সম্পাদক খায়রুননাহার, অর্থ সম্পাদক বিথী মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুইটি বেগম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিউটি আক্তার, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক রিমা বেগম, সদস্য করা হয়েছে, মিনু বেগম, শামীমা আক্তার টুম্পা, সুমি আক্তার, নারগিস বেগম এবং আসমা আক্তারকে ।এসএম/জেসি 

 

এই বিভাগের আরো খবর