বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মাওলানা আউয়ালকে তামিম বিল্লাহ’র চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ৯ এপ্রিল ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম) : ঈদ ই মিলাদুন্নবীকে জন্মাষ্টমীর সঙ্গে তুলনা করে দেয়া ডিআইটি মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আওয়ালের বক্তব্যের ব্যখ্যা প্রদানের জন্য তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন দেওভোগ সাকিম আলী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা তামিম বিল্লাহ।

মাওলানা আওয়ালের একটি বক্তব্যকে ঘিরে শহর যখন উত্তপ্ত তখনই তিনি এমন চ্যালেঞ্জের শিকার হলেন। একটি বক্তব্যকে ঘিরে দু পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে শহরবাসী যখন আতঙ্কিত তখন যুক্তির মাধ্যমে এর সুন্দর সমাধান হতে পারে বলে মনে করছে শহরবাসী। রবিবার যুগের চিন্তা২৪ ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে মাওলানা তামিম বিল্লাহ বলেন, ‘মাওলানা আওয়াল তার বক্তব্যের মাধ্যমে নবী প্রেমিক মুসলমানদের হৃদয় রক্তাত্ব করেছেন। তাকে ই ভুল বক্তব্য তুলে নিতে হবে অন্যথায় দীর্ঘ দিন যাবৎ চলে আসা এই বিরোধ সমাধানের প্রয়োজনে প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের যে কোন মাঠে উন্মুক্ত বাহাসে অংশ নিতে হবে।

আমি তার বক্তব্যকে ভুল এবং ইসলাম বিরোধী দাবি করে বাহাসের মাধ্যমে এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দেয়ার জন্য মাওলানা আব্দুল আওয়ালকে চ্যালেঞ্জ করছি।’ নারায়ণগঞ্জ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা সবাই নবীর প্রেমিক এবং মিলাদুন্নবীর পক্ষে। আমরা ঐতিহাসিক ভাবেই এদেশের মানুষ ঈদ ই মিলাদুন্নবী পালন করে আসছি। কিন্তু গত ২৩ মার্চ নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আওয়াল সাহেব শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর সঙ্গে ঈদ ই মিলাদুন্নবীর তুলনা করেছেন। তারপর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে এক ব্যক্তি এর প্রতিবাদ করলে অওয়াল সাহেব বলেন এখানে কোন কথা নয় তোমরা ডি আইটি মসজিদে এসো। তারপর ২৬ মার্চের একটি অনুষ্ঠানকে ঘিরে আমরা তার বক্তব্যকে লিফলেটের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করি এবং তার বক্তব্যের চ্যালেঞ্জ করি। তিনি প্রথমে সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেন নি। আমরা বিভিন্ন ধর্মীয় কিতাব ও কুরআন হাদিসের অলোকে রেফারেন্স দিয়ে লিফলেটে বলেছি তিনি যেন তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করে তার বক্তব্যে অটল থাকেন। এর মধ্যে আমরা একটি বিক্ষাভে মিছিল করি। যেখানে আউয়াল সাহেবের বিরুদ্ধে কোন শ্লোাগান দেয়া হয়নি। শুধু বলা হয়েছে জন্মাষ্টমীর সঙ্গে মিলাদুন্নবীর তুলনা কেন প্রশাসন জবাব চাই।

সেদিনই আমরা প্রশাসনের কাছে একটি স্মারক লিপি প্রদান করি। তারপর পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি তারা আমাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে বলেছে আমার গর্দান ফেলে দিবে, নারায়ণগঞ্জ কারবালা হয়ে যাবে। হাজারো লাশ পরবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের প্রশ্ন হলো তারা শাক দিয়ে কেন মাছ ঢাকতে চায়? আমরা যুক্তি দিয়েছি আশা করেছি তারাও যুক্তি দেবে। তা না করে তারা ধর্মীয় একটি বিষয়ে কেন সন্ত্রাসী ভঙ্গিতে পেশী শক্তির ব্যবহার করছে? ঘটনা যা তা নিয়ে কথা না বলে অন্য বিষয় নিয়ে কেন কথা বলছে?’ এসময় তিনি মাওলানা আউয়ালকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন,‘আমরা লিফলেটের মাধ্যমে তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি একসঙ্গে বসে এর সমাধান করার জন্য। তবে তিনি কেন তা গ্রহণ করছেন না? তার পক্ষে ওলামা পরিষদ যে লিফলেট প্রচার করেছে তা একেবারেই মনগড়া। এর ধর্মীয় কোন ভিত্তি নেই। আব্দুল আওয়াল সাহেবের যদি সাহস থাকে এবং আমাদের দলিল যদি মিথ্যা হয় তবে মারামারি না করে আসুন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের যে কোন মাঠে আমরা উন্মুক্ত বাহাস করবো। আপনার প্রতি চ্যালেঞ্জ রইলো।’

মাওলানা আওয়াল ও তার অনুসারীরা নিজেদের দূর্বলতার কারনে কখনোই তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেন না জানিয়ে তামিম বিল্লাহ বলেন. ‘তার আগেও মাওলানা বাকি বিল্লাহ বেঁচে থাকতে একই ইস্যুতে মাওলানা আওয়ালকে বারবার চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। মুফতী আলী আকবর তাকে বইয়ের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করেছিল কিন্তু আওয়াল সাহেব কোন চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেন নি। উল্টো ২০১২ সালে বন্দরের কুশিয়ারায় মৌলভী রুহুল আমিনের মিলাদুন্নবী বিরোধী একটি বক্তব্যের বিরুদ্ধে মামলা করে আহলে সুন্নাত বিজয়ী হয়েছে এবং সেই মৌলভীর সাজাও হয়েছে।’

বক্তব্য নিয়ে বিরোধ তবে ব্যক্তি তামিম বিল্লাহ’র বিরুদ্ধে শ্লোগান কেন? প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আহলে সুন্নাতকে সঙ্গে নিয়ে আমি সর্বপ্রথম এই মন্তব্যের বিরোধীতা করেছিলাম। আর সে কারনেই আমার বিরুদ্ধে তারা মাঠে নেমেছে।’ ঘটনা যা, তা নিয়ে কথা না বলে অন্যসব বিষয় নিয়ে কেন বলা হচ্ছে এমন প্রশ্ন রেখে তামিম বিল্লাহ বলেন, ‘আওয়াল সাহেবের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোন বিরোধ নেই। তিনি নবী কারিম সম্পর্কে একটা বাজে মন্তব্য করেছেন আমরা কষ্ট পেয়েছি। তাই প্রতিবাদ করেছি ব্যাখ্যা চেয়েছি। তিনি আলেম মানুষ তবে তিনি কেন এই একটি বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না? তাদের দূর্বলতা কোথায়? তারা কেন উত্তর দিতে পারছেন না?

জবাব দেয়ার ক্ষমতা নেই বলেই তারা গায়ের জোরে কথা বলতে চাইছেন। তিনি শান্তি চান না, তিনি যুক্তি ভুলে সন্ত্রাসী ভুমিকায় সমর্থকদের মাঠে নামাচ্ছেন।’ শুক্রবারের বিক্ষোভ মিছিলে মুসল্লীদের ভুল বুঝিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে অভিযোগ করে তামিম বিল্লাহ বলেন, ‘তারা মসজিদে মসজিদে আফগানিস্তানে ড্রোন হামলায় প্রতিবাদের কথা বলে মুসল্লিদের জড়ো করেছিল। কিন্তু বিক্ষোভে নিয়ে এসে তাদের নিয়ে শ্লোগান দেয়া হয়েছে আমার বিরুদ্ধে।’

সাধারণ মুসল্লিদের ধর্মীয় অনুভুতি নিয়ে রাজনীতি হয়েছে দাবী করে তামিম বিল্লাহ বলেন, ‘ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যদি আব্দুল আউয়ালের বক্তব্য শুনতো এবং তারা যদি জানতো সেই বিতর্কিত বক্তব্যের বিরোধীতা করায় এবং প্রিয় নবীর পক্ষে বলায় তারা আমার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামছে তবে তাদের সংগঠনের লোক ছাড়া অন্যকোন লোক সেখানে আসতো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাওলানা বাকি বিল্লাহ বেঁচে থাকতে এই কাসেমী বন্দর প্রেস ক্লাবে বলেছিল সে বাকি বিল্লাহ’র রক্ত ঝরাবে। তাদের এমন সন্ত্রাসী ভুমিকার কারনে আমার যদি কিছু হয় তবে এর দায় ভার সম্পূর্নই মাওলানা আউয়াল সাহেব এবং জাকির হোসেন কাশিমিকে নিতে হবে।’ উল্লেখ্য, ‘ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মদিন ঈদ ই মিলাদুন্নবীকে সনাতন ধর্মের অবতার শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন জন্মাষ্টমীর সঙ্গে তুলনা করেছেন ডিআইটি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আওয়াল।’

এমন অভিযোগ এনে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে একটি লিফলেট বিতরন করেন। সেখানে তারা মাওলানা আওয়ালের কাছে এর ব্যখ্যা দাবি করেন এবং ব্যাখ্যা না পেয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। এর বিপক্ষে আব্দুল আওয়ালের অনুসারীরা শহরে তওহেদী জনতার ব্যানারে আহলে সুন্নাত নেতাদের বিপক্ষে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীতে উত্তপ্ত হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জ।

এরই মধ্যে গত শুক্রবার(৬ এপ্রিল) বাদ জুম্মা জমিয়তে ইসলাম শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে আহলে সুন্নাত নেতাদের হুশিয়ারী ও তামিম বিল্লাহর বিরুদ্ধে নানান শ্লোগান উচ্চারণ করেন। সর্বশেষ শনিবার(৭ জুলাই) ডিআইটি চত্বরের এক ইসলামী মহা সম্মেলন থেকে আহলে সুন্নাতের প্রচারিত লিফলেটের বিরুদ্ধে পাল্টা একটি লিফলেটের মাধ্যমে মাওলানা আওয়ালের বক্তব্যের ব্যখ্যাসহ মিলাদুন্নবীর বিপক্ষে তাদের যুক্তি উপস্থাপন করে ওলামা পরিষদ নারায়ণগঞ্জ। এমন অবস্থায় মাওলানা আওয়ালকে উন্মুক্ত বিতর্কের আহ্বান জানিয়েছেন মাওলানা তামিম বিল্লাহ।