শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

মানুষের জন্য নিবেদিত লড়াকু আইভী

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২১  

পৌরসভা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। পৌর চেয়ারম্যান থেকে সিটি মেয়র। নারায়ণগঞ্জ নগরী ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর এই পথচলার সময় হিসেব করলে দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি। এক মেয়াদে পৌর চেয়ারম্যান ও দুই মেয়াদে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে থাকাবস্থায় বদলে দিয়েছেন নগরীর চিত্র। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও পরিকল্পিত নগরায়ন করে নগরবাসীর মন জয় করেছেন মেয়র আইভী।

 

তবে এই কাজ করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে তাকে। নিজ দলের লোকেদের সাথেই লড়াই করতে হয়েছে। তাকে জব্দ করতে কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জনতার আদালত, ব্যঙ্গচিত্র তৈরি, দেবোত্তর সম্পত্তি দখল, মসজিদ-মন্দির ইস্যুতে উত্তেজনা তৈরিসহ নানা চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাতে দমে যাওয়া কিংবা বিচলিত হননি ডা. আইভী। অন্যায়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ এক মুহুর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি তার। তার এই সাহসী ও আপোসহীন চরিত্রের কারণে কেবল নারায়ণগঞ্জ নয় সারাদেশে তিনি লড়াকু আইভী হিসেবে পরিচিত।

 

নারায়ণগঞ্জের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা বাংলাদেশে আজ পরিচিত এক রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি মেয়র আইভী। দেশের যে কোন স্থানে আজকে নারায়ণগঞ্জের কথা উচ্চারিত হলে সঙ্গে সঙ্গে মেয়র আইভীর নাম নেয়া হয়। এই নাম একজন সৎ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজনীতিবিদের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন এক সাহসের বাতিঘরের। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর লড়াই শুরু হয়েছে ২০০৩ সাল থেকেই। ওই বছর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। তখন রাষ্ট্রক্ষতায় বিএনপি। বিরোধী দলে থেকেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে ডা. আইভী নিরঙ্কুশ বিজয় পান ওই নির্বাচনে। ওই সময় হামলা-মামলায় জর্জরিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশে ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন আইভী।

 

এতে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। এরপর ২০০৮ সালে নিজ দল আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসলেও লড়াই থামেনি। এবার নিজ দলের লোকেরাই তার বিরুদ্ধে নানান প্রপাগান্ডা শুরু করে। এর মধ্যে চলে আসে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন। ২০১১ সালে ওই নির্বাচন নিয়ে নারায়ণগঞ্জে বেশ নাটকীয় পরিবেশ তৈরি হয়। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে এই নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। এই হার মেনে নিতে পারেননি শামীম ওসমান। এরপর থেকেই নানাভাবেই তার অনুসারী লোকজন মেয়র আইভীকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। এই চেষ্টার চূড়ান্ত পরিণতিতে রূপ দেওয়া হয় শহরের ডিআইটিতে মঞ্চ করে ‘জনতার আদালত’ বসিয়ে।

 

২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ওই সমাবেশে আইভীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বক্তব্য রাখেন সাংসদ শামীম ওসমান। আইভীর বিরুদ্ধে ওই সমাবেশে দাঁড় করানো হয় সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদেরও। এমনকি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে ওই সমাবেশের সভাপতি রাখা হয়। আনোয়ার হোসেন ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। তাকেও দাঁড় করানো হয় আইভীর বিরুদ্ধে। শহর ও শহরের বাইরে আইভীর ব্যাঙ্গাত্মক পোস্টার, ব্যানার সাঁটানো হয়। তবে এসবে দমানো যায়নি আইভীকে। এমনকি তৃণমূল থেকে তাঁর নামও প্রস্তাব করেনি তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে গণভবনে ডেকে নিয়ে আইভীর হাতে নৌকা তুলে দেন। ২০১৬ সালে নাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে আবারও বিজয় পান তিনি।

 

এরপর নারায়ণগঞ্জবাসীর ফুটপাতে চলাচল নির্বিঘ্ন করতে চেষ্টা করলে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার ও সাংসদ শামীম ওসমানের সমর্থকদের সশস্ত্র হামলায় তাকে হত্যা চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। সেইদিন মেয়র আইভীকে মানবঢালে রক্ষা করেছেন তার কর্মীরা। যা ইতিহাসে বিরল। সেই হামলায় দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি। কিন্তু তারপরেও তাকে দমানো যায়নি। হাসপাতাল থেকে ফিরে জারি রেখেছেন তাঁর লড়াই। আইভীকে জব্দ করার চেষ্টা করা হয়েছে নানাভাবেই। কখনও বিশাল সমাবেশ ডেকে কখনও আবার তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক প্রচারণা চালিয়ে। সম্প্রতি মসজিদ-মন্দির নিয়ে একটি মহল আইভীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। কখনও জিউস পুকুরের জায়গা দখল, আবার কখনও ডিআইটি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা কিংবা বাগে জান্নাত মসজিদের জায়গা দখলের অভিযোগ তুলে সমাবেশের পর সমাবেশ করেছেন তারা। তাতেও কাজ না হওয়ায় সর্বশেষ পূজামন্ডপের সামনে আইভীর বিরুদ্ধে ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। এতে তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

এমনকি মেয়র আইভী এক অনুষ্ঠানে খোদ বলেছেন, এইভাবে নারায়ণগঞ্জে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। দীর্ঘ ১৮ বছরে অনেক চড়াই-উৎড়াই পার করেছেন নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। কিন্তু আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাসের সাথে আপোস করেননি তিনি। মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা থেকে শুরু করে তরুণ নাট্যকার চঞ্চল, ব্যবসায়ী ভুলু, আশিকসহ এই নগরীর সকল হত্যাকান্ডের বিচার চান ভরা মজলিশে। সন্ত্রাসী অপশক্তির বিরুদ্ধে কথা বলতে দ্বিতীয়বার ভাবেন না, বজ্র কণ্ঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন।

 

নগরবাসী বলছেন, আইভীর পিতা আলী আহাম্মদ চুনকা ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের লড়াকু সৈনিক। তিনিও তার পিতার মতো একজন লড়াকু মানুষ। গণমানুষের স্বার্থে কখনও আপোষ করেননি। মিথ্যা অপপ্রচার, প্রপাগান্ডা চালিয়ে তাকে টলানো যাবে না। এতে তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়ে। আর মানুষ চিনে নেয় অত্যাচারী অপশক্তিকে। মেয়র আইভী কোন সন্ত্রাসী বা অত্যাচারীর কাছে মাথা নত করবেন না বলে বিভিন্ন সভা সমাবেশে উচ্চারণ করেছেন নারায়ণগঞ্জের জনগণই তাঁর শক্তি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নারায়ণগঞ্জকে বাসযোগ্য করতে চান তিনি। নারায়ণগঞ্জবাসীর সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য মেয়র হিসেবে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব শতভাগ সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করার চেষ্টা করে যাবেন।

 

তিনি বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ যে কারণে তাকে বার বার নির্বাচিত করছেন নারায়ণগঞ্জবাসীর সেই সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য সকল বাধা উপেক্ষা করেই কাজ করে যাবেন। বিভিন্ন সমাবেশে তিনি আরও বলেছেন, আমি এই শহরের মানুষের জন্য নিজেকে নিবেদিত করেছি। আমি এই শহরের মানুষের জন্য হত্যার প্রতিবাদ করেছি, আওয়াজ তুলেছি। যে শহরের মানুষকে স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে, সেখানে মানুষ এখন কথা বলে। আমাদের নারায়ণগঞ্জ আমরাই গড়বো। এখানে কোন অসত্য, অসুন্দর, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ আমরা চাই না।

এই বিভাগের আরো খবর