শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মামুনুলে মামলায় সাক্ষ্য দিলেন রয়্যাল রিসোর্টের দুই কর্মকর্তাসহ ৩

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২১  

গতকাল জেলা আদালতে নিয়ে আসা হয় ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার মামুনুল হক।

গতকাল জেলা আদালতে নিয়ে আসা হয় ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার মামুনুল হক।

রয়েল রিসোর্ট কাণ্ডে হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন রয়্যাল রিসোর্টের দুই কর্মকর্তাসহ এক আনসার সদস্য। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তারা সাক্ষ্য দেন।

 

সাক্ষ্য শেষে তাদেরকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রকিবুদ্দিন আহমেদ জানান, এ মামলায় মোট স্বাক্ষী ৪৩ জন। তাদের মধ্যে রিসোর্টের সুপারভাইজার আব্দুল আজিজ পলাশ, পাবলিক রিলেশন্স কর্মকর্তা নাজমুল হাসান অনি ও আনসার সদস্য রতন বড়াল সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালত পাঁচ সাক্ষীকে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিলেও উপস্থিত ছিলেন চার জন।

 

আদালতে হাজিরা দেওয়া ইসমাইল হোসেন নামে আরেক আনসার সদস্যের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ হয়নি। পরের তারিখে নেওয়া হতে পারে। এর আগে ২৪ নভেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী মাওলানা মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী দাবি করা ভুক্তভোগী নারী জান্নাত আরা ঝর্ণা। রকিবুুদ্দিন বলেন, ‘‘আদালতে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেন। তারা গত ৩ এপ্রিল রয়্যাল রিসোর্টের ঘটনা জানান। সাক্ষীরা বলেন, ‘ওইদিন রিসোর্টে বিশৃঙ্খলার পর ওই নারীর সঙ্গে কী সম্পর্ক জানতে চাইলে তাকে স্ত্রী দাবি করেন মামুনুল। তবে এই বিষয়ে বৈধ কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি। রিসোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের সামনেই মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী নারী জান্নাত আরা ঝর্ণা বিয়ের আশ্বাসে রিসোর্টে এনে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। পরে সবার সামনে ওই কথা স্বীকারও করেন মামুনুল হক।’’ এদিকে মামুনুল হকের আইনজীবী ওমর ফারুক নয়ন বলেন, ‘সাক্ষীরা তাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষও তাদের জেরা করেছেন। সাক্ষীরা অনেক প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি।’ এসব সাক্ষ্য আসামিপক্ষের অনুকূলে রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

 

আসামিপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, ‘মামলার বাদী মামুনুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। তৃতীয় কোনও পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করেছেন- বিষয়টি আদালতের কাছে তুলে ধরেছি।’ এদিকে, গত ২৪ নভেম্বর গণমাধ্যমে দেওয়া রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক নয়ন।

 

তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আসামিপক্ষের আইনজীবী মামলার বাদীকে ৪১ বার মামুনুল হককে স্বামী বলে দাবি করলেও ঝর্ণা বারবার অস্বীকার করেছেন’। অথচ তাকে এতবার প্রশ্নই করা হয়নি। মাত্র ৪-৫ বার তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মামুনুল হক ও তার মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ে। মামলাকে প্রভাবিত করতে পিপি গণমাধ্যমে এমন বক্তব্য দিয়েছেন।’ আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন- জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মোহসীন মিয়া। চলতি বছরের ৩ এপ্রিল বিকালে সোনারগাঁ উপজেলার রয়্যাল রিসোর্টের একটি কক্ষে এক নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ লোকজন। তখন ওই নারীকে নিজের বিবাহিত দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন মামুনুল।

 

ঘটনা জানাজানি হলে সন্ধ্যায় হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা ওই রিসোর্ট ঘেরাও করেন। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত থাকা অবস্থায় মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায় নেতাকর্মীরা। পরে রাতভর সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন উত্তেজিত হেফাজত কর্মীরা। ওই ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। এই ঘটনার প্রায় মাসখানেক পর ৩০ এপ্রিল মামুনুলের বিরুদ্ধে তারই দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা ওই নারী ধর্ষণ মামলাটি করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, বিয়ের আশ্বাসে তাকে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন মাওলানা মামুনুল হক। আইনত তাদের বিয়ে হয়নি। এই মামলায় গত ৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র গঠন করা হয়। এর আগে, ১৮ এপ্রিল ঢাকায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মামুনুল হককে গ্রেফতার করে।
 

এই বিভাগের আরো খবর