মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মারামারিতে বক্তাবলীর সম্মেলন স্থগিত ব্যর্থতার দায়ভার কার

রাকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২২  


# ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না শীর্ষ নেতারা
# শফিকের লোকজন বিশৃঙ্খলা ঘটায়: শওকত
# পুনরায় ভোটের মাধ্যমে সম্মেলন চাই: শফিক



রাকিবুল ইসলাম: সকল জল্পনা-কল্পনা শেষে প্রায় দীর্ঘ ২০ বছর পর গতকাল নতুন নেতা নির্বাচন করার আশা নিয়ে বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কাউন্সিলররা সম্মেলনে আসেন। কাউন্সিলরদের প্রত্যাশা এবং প্রার্থীদের দাবী অনুযায়ী আলোচনা শেষে  ভোট গ্রহণ শুরু হয়।

 

 

যদিও ভোট গ্রহণের আগে প্রার্থীদের সমঝোতার জন্য বলা হলেও কেউ কাউকে ছাড় না দেয়ায় পরে ভোট গ্রহণ হয়। বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্মেলনে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট আগে শুরু হয়। কিন্তুু ভোট চলার মাঝা মাঝি পর্যায় ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করাকে নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরী হয়।

 

 

এমনকি জেলা এবং থানার শীর্ষ নেতাদের সামনেই চেয়ার নিয়ে মারামারি পর্যন্ত হয়। আর এতে করে নেতা কর্মীদের মাঝে আতঙ্ক তৈরী হয়। পরিস্থিতি নেতাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এক পর্যায়ে বক্তাবলী আওয়ামীলীগের সম্মেলন স্থগিত করা হয়। আর তখনি কাউন্সিলরদের মাঝে হতাশা তৈরী হয়।

 

 

একই সাথে বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্মেলন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকলো। এদিকে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলী অভিযোগ করে সাংবাদিকদের জানান, সভাপতি প্রার্থী শফিক মাহমুদ, ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মহিউদ্দিনের লোকজন এই হামলার ঘটনা ঘটায়।

 

 

দলীয় ভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার বিপরীতে পাল্টা অভিযোগ করে বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রার্থী শফিক মাহমুদের দাবী তার প্রতিপক্ষ প্রার্থী হেরে যাবে বুঝতে পেরে তারা এই হামলা চালায়। তবে তাদের হাতাহাতির ঘটনায় জেলা এবং থানার শীর্ষ নেতারা বিরক্ত হয়ে সম্মেলন স্থগিত করে দেন।

 


খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্মেলন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাইফ উল্লাহ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ মান্নান।

 

 

রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পরেও যে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না তার প্রমান বক্তাবলী আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে মূলত দলীয় কোন্দলের কারণেই এখানে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নিয়ে এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের।

 

 

তিনি অনুষ্ঠানে বলেছেন, কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরী করলে কারো পিঠের চামড়া থাকবে না। অথচ তার সামনেই হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে হামলাকারীরা সাবেক মেম্বার আতাউরের লোকজন। আর আবুল হোসেন হলেন তারই ভাই। তবে দলীয় এই কোন্দল থেকে সহজে বের হতে পারবে না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

 

সেই সাথে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্মেলনে জেলা এবং থানার শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকার পরেও এই বিশৃঙ্খলা কেন ঘটলো। আর এ ঘটনায় উপস্থিত শীর্ষ নেতারাও তাদের ব্যর্থতার দায়ভার এড়িয়ে যেতে পারেন না।

 

 

আবার কেউ কেউ বলেন ফতুল্লার দুই কান্ডারি ওই ইউনিয়নের দুই সভাপতির পক্ষ নেয়ায় তারা এই বিশৃঙ্খলা তৈরী করতে সাহস পায়। তবে কে কার পক্ষে অবস্থান নিয়ে কাকে সমর্থন করেছে তা পরিস্কার করেন নাই। তাই সর্ব মহলে প্রশ্ন উঠেছে এই সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি না হওয়ার পিছনে এ ব্যর্থতা কার।

 

 

কেননা এখানে এমপি শামীম ওসমানের অনুসারী শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারাই চাইলে সকল কিছু নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারতেন। কিন্তু তাতে তাদের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে অভিমত ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের।  অপর দিকে গত আগষ্ট মাস থেকে এমপি শামীম ওসমানের একাধিক সভা সমাবেশে নেতা কর্মীদের প্রতি আহবান করে আসছেন আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দলে যেন কোন কোন্দল না থাকে।

 

 

এমনকি তিনি কোন ভেদাভেদ দেখতে চান না তিনি। কিন্তু তার নির্বাচনী এলাকাই সবার আগে দলীয় কোন্দলের প্রকাশ পায়। আর এতে করে আগামী নির্বাচনে তার জন্য ভরাডুবি হতে পারে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ। সামনে আরও অন্যান্য কমিটি গঠনেও একই ঘটনা ঘটতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

 

আর এতে করে দায়িত্বশীল নেতারাও বিপাকে পরতে পারেন। এছাড়া দলীয় কোন্দল মিঠ করতে না পারলে বক্তাবলী আওয়ামীলীগের মত সম্মেলনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে। এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, এই ঘটনায় আমি মর্মাহত।

 

 

একটি পক্ষ পরিকল্পনা করে আমার সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে। এই হামলার ঘটনায় মূলে রয়েছেন বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সভাপতি প্রার্থী শফিক মাহমুদ। একই সাথে তার পক্ষে হামলাকারীরা হলেন বক্তাবলী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মহিউদ্দিন।

 

 

আমাদের এমপি শামীম ওসমানের সাথে এবং জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে সাংগঠনিকভাবে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সাথে এই ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরী কারীরা যেন দলীয় দায়িত্বে না আসতে পারে সেই আহবান জানান তিনি।

 

 

তার সুনামক্ষুন্ন করার জন্য এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তিনি কাউকে কোন ধরনের সমর্থন দেন নাই বলে জানান। দলীয় সূত্রে জানা যায়, গকাল বক্তাবলী আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী  হন ২ জন। তারা হলেন আবুল হোসেন প্রধান এবং বক্তাবলী আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক মাহমুদ সভাপতি প্রার্থী হন।

 

 

অপর দিকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন, বাবুল হোসেন এবং বক্তাবলী আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি কামরুল হাসান। বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সভাপতি প্রার্থী শফিক মাহমুদ জানান, আমার নামে যে অভিযোগ তুলা হয়েছে তা সম্পুর্ণ কাল্পনিক কাহিনী।

 

 

আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী বুঝতে পেরেছেন তিনি নির্বাচনে হেরে যাবেন তাই তারা পরিকল্পিত ভাবে এই বিশৃঙ্খলা তৈরী করে বক্তাবলী আওয়ামীলীগের সম্মেলন পন্ড করেন। আমি নির্বাচনের মাধ্যমে নিরাপদ স্থানে পুনরায় সম্মেলনের দাবী জানাই। তাহলেই নেতৃত্বের প্রতিফলন ঘটবে।

 


উল্লেখ্য, ২০০৩ সনে বক্তাবলী আওয়ামীলীগের সম্মেলন হয়। তখন বক্তাবলী আওয়ামীলীগের সভাপতি হন আফাজ উদ্দিন ভূইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম। গত বছর আফাজ উদ্দিন ভুইয়া মারা যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আবুল হোসেন মাস্টার।   এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর