
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলের ঘোষণার পর থেকে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল গুলোই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলোই এখনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। কিন্তু বিএনপি না আসলেও ৩শ’ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়ে এখনো ‘যোগ্য প্রার্থী’ খুঁজে পাচ্ছে না নতুন নিবন্ধিত দুই রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)।
দল দুটিতে সাবেক সংসদ সদস্যসহ বিএনপি থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেকে যোগ দিতে পারেন বলে যে আলোচনা ছিল, গতকাল পর্যন্ত তা বাস্তবে রূপ পায়নি। তবে তৃণমূল বিএনপি থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে কোন কিছু বাধ রাখেন নাই। প্রথম দিক দিয়ে তৃণমূল বিএনপি নিয়ে যেভাবে আলোচনা হয়েছে কিংবা তারা যে মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে কার্যত ভাবে তা সফল হয়ে উঠে নাই বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের বিএনপিতে গুঞ্জন উঠেছে বিএনপির কার্যকরী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে তৃণমূল বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে পারেন। ইতোমধ্যে তা শহর ছাড়িয়ে সর্বত্র ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার জেলা উপজেলা পর্যায়ের বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ধর্ণা দিয়েও তেমন কোন ফল পান নাই বলে আলোচনা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের মত অন্যান্য জেলাতেও একই ঘটনা ঘটছে। অথচ তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান সমশের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার যখন দলটির দায়িত্বে আসেন তখন যে ভাবে সারা ফেলেছে সেভাবে তাদের দলে এখন প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তারা বিএনপির সাবেক সাংসদ থেকে শুরু করে বর্তমান সাবেক অনেক নেতাদের কাছে গিয়েছে তৃণমূল বিএনপিতে আসার জন্য।
আবার অনেকে লোভনীয় অফার পেয়েও তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তাছাড়া তিনশ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষনা দিয়ে তারা যে মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে গতকাল পর্যন্ত তারা তাদের সেই মিশনে ব্যর্থ হয়েছে। কেননা নারায়ণগঞ্জের বিএনপির বর্তমান কমিটিতো দূরের কথা সাবেকদেরও আনতে পারে নাই তৃণমূল বিএনপি। তবে তৈমূর আলমের কয়েকজন কাছের লোক তার সাথে ভিড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের রাজনৈতিক পথচলা বর্তমান তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের হাত ধরে। তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সোনারগাঁ বিএনপির সাবেক কর্ণধার ও মন্ত্রী রেজাউল করিমের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিরোধ করতে মান্নানকে তৈরি করেছিলেন। কারণ রেজাউল করিমকে বশে আনতে পারছিলেন না তৈমূর।
অপরদিকে আজহারুল ইসলাম মান্নানের ছিল অঢেল টাকার পাহাড়। মান্নানের সেই টাকার লোভে তাকে রাজনৈতিক পদ পদবী দিয়ে রেজাউল করিমের বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন তৈমূর। প্রকাশ্যে ঘোষণা না দিলেও ভিতরে ভিতরে তৈমূর আলমের দল থেকে প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে মান্নানের বিরুদ্ধে। কিন্তু বিএনপির অন্য কোন নেতার কাছে গিয়ে তেমন পাত্তা পান নাই। আবার অনেকের ভাষায় ফল নিয়ে তিনি ফেরত এসেছে। তার ডাকে সারা দেন নাই।
দলীয় সুত্রমতে জানা যায়, তৃণমূল বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৮ নভেম্বর থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। দলটির দাবি, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪২৪ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন চারজন। তাঁদের দুজন জাতীয় পার্টির, একজন আওয়ামী লীগের ও একজন এলডিপি থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য। দলটির চেয়ারম্যান বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী (সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান) সমশের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত (দলের চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা) তৈমুর আলম খন্দকার। এর বাইরে পরিচিত কোনো রাজনীতিককে এখন পর্যন্ত দলটি টানতে পারেনি।
কিন্তু বিএনপি এখন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত নির্বাচনী তফসিলকেও তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচন বাতিল এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি টানা কর্মসূচি দিচ্ছে কিছুটা বিরতি দিয়ে দিয়ে। সে কর্মসূচির ধারায় আজ রোববার থেকে আবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা করা হয়েছে। যা চলমান রয়েছে। এস.এ/জেসি