বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মেলার প্রবেশ সড়ক ঢাকা বাইপাসে ১৭ কিলোমিটার যানজট

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩  



বাণিজ্য মেলার অভ্যন্তরীণ স্টলগুলো ক্রেতাশুন্য। মেলার বাইরের অংশে তীব্র যানজট। সমস্যা গাজীপুরের নাওনের মোড় এলাকায় ঢাকা বাইপাস সড়কে সড়ক দূর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১২ জানুয়ারী ভোর রাত থেকে শুরু হয় যানজট। এদিকে দূর জেলা থেকে আসা মেলায় আসা দর্শনার্থীরা পড়েন চরম বিপাকে।

 

 

একদিকে রাজধানীর লোকজন বিশ্ব ইজতেমার আসরের কারনে যানজট কবলে অন্যদিকে ঢাকা বাইপাস সড়কের গাজীপুরের যানজট বিস্তৃত হয়ে গোলাকান্দাইল পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার পৌঁছে যায়। এতোক্ষণে পরিস্থিতি না বুঝে মেলায় আসা দর্শনার্থীরা সড়কে আটকে যান দীর্ঘ সময় ধরে।

 

 

১২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায় অনেকটা ক্রেতাশুন্য। সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত দর্শনার্থী প্রবেশ করে হাতেগণা কয়েকজন।   ফলে মেলার পরিবেশ হয়ে পড়ে শুনশান নিরবতায়।  মেলার নিরাপত্তা দায়িত্বরত ক্যাম্প ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম বলেন, সড়কে যানজটের প্রভাবে দর্শনার্থীরা সড়কে আটকে আছে।

 

 

তাই দুপুর হলেও দূরের দর্শনার্থীদের দেখা যায়নি। মেলার ফটকে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, ২য় সপ্তাহে আশানুরুপ ক্রেতা ও দর্শনার্থী হতে শুরু করেছিলো। কিন্তু আজ ঢাকা বাইপাসের যানজটের কারনে মেলায় আগতরা আটকে যায়। এতে ক্রেতাশুন্য হয় এক দুপুর।

 

 

তবে বিকাল হতেই দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। মেলার আয়োজক সহযোগী মনিরুজ্জামান ভুইয়া বলেন,  গতবছরের চেয়ে এবারও বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থী মেলা আসা শুরু করেছে। এবার ঢাকা বাইপাস সড়কের জন্য কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। তবে আগামী বছর এ পরিস্থিতি থাকবে না।

 

 

এদিকে মেলার অভ্যন্তরে সব পন্যের অতিরিক্ত দাম নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ ছিলো বেশি। আবার অভ্যন্তরীণ খাবার হোটেলের সব খাবারের মান ও দাম নিয়েও অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেলাসূত্র জানায়, যানজটের কারনে কিছু সংখ্যক দর্শনার্থী আসলেও বিক্রি নেই খুব একটা। মেলায় থাকা বঙ্গবন্ধু গ্যালারীও ছিলো দর্শনার্থী শুন্য।

 

 

গোয়ালপাড়া বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, আজ যানজটের কারনে মেলা প্রাঙ্গণ অনেকটা ফাঁকা। তাই পরিবার নিয়ে মেলার এসেছি। এখানে থেকে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার ও দেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে জানতে পেরে সবাই খুশি। তাছাড়া মেলায় থাকা শিশুপার্কের ব্যবস্থা ছিলো প্রশংসনীয়। তবে খাবারের দাম গরীব ক্রেতাদের নাগালের বাইরে রয়েছে।

 

 

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশীপ এক্সিভিশন সেন্টারে ২য় বারের মতো ২৭ তম আসর চলছে। আজ এ আসরের ১২ তম দিন। এখনো মেলার পূর্বপ্রান্তে সাদা কাপড়ে আলাদা করা  স্টল প্রস্তুত থাকলেও কোন প্রতিষ্ঠানকে পসরা বসাতে দেখা যায়নি।

 

 

কোথা কোথাও এখনো স্টল প্রস্তুতি আর কারিগরদের হাতুরি পেটা ঠকঠক শব্দ শুনতে পান আগত দর্শনার্থীরা।  এছাড়াও মেলার অভ্যন্তরীণ রেস্টুরেন্টগুলোতে খাবারের দাম রাখা হচ্ছে আকাশ ছোঁয়া। এতে নতুন আসা দর্শনার্থীরা হচ্ছেন হতাশ।

 

 

মেলার প্রবেশ পথে কাঞ্চন ব্রিজের টোল আদায়ে ধীর গতি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মাসুদ রানা বলেন, এরআগেও কোন আসরের প্রথম সপ্তাহে মেলা জমে না। ফলে যারা আসেন তারা দেখছেন বেশি কিনছেন কম। তবে কেউ কেউ হতাশার কথাও জানিয়েছেন।  

 

 

কুড়িল থেকে রাজধানী মুখি লোকজন এতোদিন সহজে যাতায়াত করতে পারলেও আজকের যানজটে এশিয়ান বা ঢাকা বাইপাস সড়কের কারনে যাতায়াত ভোগান্তি বেড়ে যায়। এসব বিষয়ে মেলার আয়োজক ও পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিলেও কোন প্রকার সুরাহা মিলেনি। তবে আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলো।  

 


 
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আশপাশে ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা ( সহকারী উপ পরিদর্শক) নাজমুল ইসলাম বলেন,২৭ তম আসরের এ মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন প্রায় ৭শতাধিক পুলিশ ও ৩শতাধিক সিসি ক্যামেরা। আমরা বাইরের অংশে যানজট নিরসনে কাজ করছি।

 

 

কিন্তু ভোররাতে গাজীপুর অংশে যানজট থাকায় ওখানকার দূর্ঘটনা কবলিত গাড়ী সরাতে  পারেনি। ফলে যানজট বেড়ে যায় প্রায় ১৫ কিলোমিটারের বেশি। এ সমস্যার কারনে আজ সড়ক আটকে যায়। তিনি আরও বলেন, টঙ্গীর এজতেমার আসর ঘিরেও সড়কে যানজট তৈরী হয়েছে।

 

 

আয়োজক সংশ্লিষ্টদের দাবী, গতবারের তুলনায় এবার মেলায় দর্শনার্থী হবে ৩গুনের চেয়ে বেশি। যাতায়াত ব্যবস্থায় উন্নতির কারনে আশাবাদি তারা।

 

 

মেলা সংশ্লিষ্টদের দাবী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবারের ২৭ তম আসর স্ব শরীরে উপস্থিত থাকায় এবং আয়োজনের পরিধি বাড়ানোর কারনে দেশী বিদেশী দর্শনার্থীদের আগ্রহ বেশি। তাই যাতায়াতের ব্যবস্থা আরও নিবিঘ্ন করলে দর্শনার্থীরা সুন্দর পরিবেশ পাবে।

 

 

ইবিপির দেওয়া তথ্যমতে, এবারের বানিজ্য মেলায় এবার মোট ৩৩৩ টি স্টল থেকে ৩১৮ টি বরাদ্দ দেয়া আছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরীর দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবছর দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ভারত, থাইল্যান্ড, তুরস্কসহ ১১টি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

 

 

মেলায় আসা দর্শনার্থীদের সুবিধার লক্ষ্যে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণে আসার জন্য বিআরটিসির ৬৫টি বাস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শারিরিক প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রবেশ ফ্রি করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ২৬০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য মেলা প্রাঙ্গণ ও তার আশেপাশে ৭শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর