মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মেহেদি কিলিং মিশনে অংশ নেয় আটজন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০২২  

 

# ইমন হত্যাকান্ডের মামলায় জামিন নেয়ার পর দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিল ওমর গ্রুপ  

 

শনিবার রাতে ফতুল্লায় ছুরিকাঘাতে মেহেদি হাসান নামে এক যুবক খুন হন। শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় দেওভোগ শেষ মাথা এলাকায় এঘটনা ঘটে হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের বড় বোন মৌসুমী (২৯) বাদী হয়ে রোববার (৩১ জুলাই) দুপুরে আট জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জনকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছে। 

 

মেহেদী হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় এলাকাবাসী সোহাগ (২২) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আটকককৃত সোহাগ ফতুল্লা মডেল থানার দেওভোগ শেষ মাথার দুলাল খার পুত্র ও স্থানীয় হোসিয়ারি কারখানার শ্রমিক। জানা যায়, মেহেদী হাসান ২০২১ সালের ১৭ জুলাই পশ্চিম দেওভোগস্থ নিহত ইমন হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ও চার্জশিটভুক্ত আসামী।

 

মেহেদী হত্যাকান্ড মামলায় আসামী করা হয়েছে ২০২১ সালে ১৭ জুলাই নিহত ইমনের দুই ভাই ওমর (২৭), ও সবুজ (৩০), আরেক আসামী রাসেল ওরফে ভাগিনা রাসেল (২১), মাইকেল (২১), সীমান্ত (২২), শান্ত ওরফে কসাই শান্ত (২১),  জুব্বা (২৩), সঞ্চয় (২১) সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন। আসামীদের মধ্যে সবুজ ইমন হত্যা মামলার বাদী ছিল।

 

মামলায় সূত্রে জানা যায়, মেহেদী হাসান পশ্চিম দেওভোগ মাদ্রাসার স্বপরিবারে বর্ণিত ঠিকানায় বসবাস করে আসছে। মেহেদী হাসান (২১) পশ্চিম দেওভোগ মাদ্রাসার শেষ মাথা মিয়া পাড়াস্থ একটি হোসিয়ারী কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। গত -৩০ জুলাই প্রতিদিনের ন্যায় হোসিয়ারী কারখানায় কাজ শেষে বাড়ী ফেরার পথে অত্র থানাধীন পশ্চিম দেওভোগ মাদ্রাসার শেষ মাথা মিয়া পাড়াস্থ রাকিব এর চায়ের দোকানের সামনে পৌছায় রাত অনুমানিক সাড়ে ১০টায়। 

 

পূর্ব শত্রুতা ও বিরোধের জের হিসেবে উল্লেখিত বিবাদীগন সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে কৌশলে আমার ভাইকে ডেকে ৩০ জুলাই তারিখ রাত অনুমান  পৌনে ১১টা ঘটিকার সময় পশ্চিম দেওভোগ সাকিনস্থ মৃত রজব আলী হাজীর মাঠের গলিতে নিয়া যাইয়া বিবাদীরা আমার ছোট ভাই মেহেদী হাসানকে এলোপাথারী মারপিট করে ও ধারালো ছোরা, চাকু দ্বারা উপর্যপুরি আঘাত করে। বুকের ডান পাশে ছোট বড় ১৪(চৌদ্দ) টি গভীর ক্ষত বিশিষ্ট গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম করে। 


বিবাদীরা আমার ভাইকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে মৃত ভাবিয়া ঘটনাস্থলে ফেলে চলে যায় আমার ভাইয়ের আত্মচিৎকার শুনিয়া ও লোক মুখে সংবাদ পাইয়া আমি সহ আমার ছোট বোন ইতি (২৫) কে সহ দ্রুত ঘটনাস্থলের দিকে যাইতে থাকা কালে বিবাদীদের মধ্যে ৪/৫ জনকে ছোরা, চাকু সহ পালাইয়া যাইতে দেখি। আমি ও আমার ছোট বোন স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আমার ছোট ভাই মেহেদী হাসানকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় চিকিৎসার জন্য দ্রুত জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া) নারায়ণগঞ্জ এর জরুরী বিভাগে নিয়া গেলে ৩০ জুলাই রাত্র ১১টা ২০ মিনিটের দিকে সময় জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার মেহেদী হাসানকে মৃত ঘোষণা করে। 

 

সংবাদ পেয়ে ফতুল্লা থানার পুলিশ জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া) নারায়ণগঞ্জ এর জরুরী বিভাগে উপস্থিত হইয়া আমার ছোট ভাই মেহেদী হাসান এর লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করিয়া ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মেহেদী হাসান হত্যাকান্ডে আটজন কিলার হত্যার মিশনে অংশ নেয়।

 

প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পেরেছে ২০২১ সালের ১৭ জুলাই ডেভিড গ্রুপ ও ওমর ফারুক গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয় ওমর ফারুকের ভাই ইমন। সে সময় আহত হয় ওমর ফারুক নিজেও। সেই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামী ছিল নিহত মেহেদী হাসান। সেই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনেও নিহত মেহেদী হাসানের নাম রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ইমন হত্যার প্রতিশোধ নিতেই মেহেদীকে হত্যা করা হয়েছে।


 
নিহতের বোন মৌসুমী জানান, আমার ভাই নিহত হওয়ার পরদিন এলাকাবাসী কয়েকজন আসামীকে আটক করে কিন্তু বাকিরা পালিয়ে যায় পরবর্তীতে সোহাগকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। ২০২১ সালের ১৭ জুলাই ইমন হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ও চার্জশিটভুক্ত আসামী থাকার ব্যাপারে মেহেদীর বোন বলেন, আমার ভাইকে যারা মেরে ফেলছে শত্রুতার কারণে তারাই আমার ভাইকে ইমন হত্যা মামলায় ফাসিয়েছে। এই মামলায় আমার ভাইকে কোর্টে সেলেন্ডার করে জামিনে বের করে নিয়ে এসেছিলাম আর এই মামলায় আমার ভাইয়ের সম্পৃক্ততা প্রমাণ পায়নি।

 

এই মামলায় জামিন হওয়ার পর কয়েকদফা আমার ভাইয়ের উপর হামলা করেছিল ইমন হত্যার বাদী ওমর, সবুজরা। নিহত ইমনের দুই ভাইকে আসামীর করার ব্যাপারে মেহেদীর বোন বলেন, তারা দুই ভাই হল এলাকার ত্রাস এলাকার মানুষকে শান্তি দিচ্ছে না। এলাকার যুবকদের মাদক ধরিয়ে মাদকের ব্যবসা করে এলাকাটা নষ্ট করে ফেলেছে।

 

আমার ভাইকে কারা পিছন থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে সব সিসি ক্যামেরা ফুটেজে আছে এই সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পুলিশসহ গণমাধ্যম সবার কাছে আছে। এদিকে মামলার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নিহতের বোন বলছেন, মামলা করার পরও পুলিশ তেমন কোন তদারকি করছে না, আসামীরাও গ্রেপ্তার হচ্ছে না এদিকে এলাকাবাসীও আমাদের কাছে বলছে পুলিশ কোন রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে না আসামীদের বিরুদ্ধে তাদের তদারকিও চোখে পরছে না।

 

ফতুল্লা মডেল থানার ইনচার্জ শেখ রিজাউল হক দিপু জানায়, মেহেদী হত্যাকান্ডের ঘটনায় আসামীদের গ্রেপ্তারে ব্যাপারে বলেন আমারা আসামীদের গ্রেপ্তার করার জন্য কৌশলে তদারকি করছি। ইমন হত্যা মামলায় মেহেদী এজহারভুক্ত আসামী ছিলেন তিনি নিশ্চত করেন। তিনি জানান ঘাতকদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে দ্রুত গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে। জেসি / এন.এইচ
 

এই বিভাগের আরো খবর