শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মেহেদিকে হত্যার পর উল্লাস করতে করতে এলাকা ছাড়ে খুনীরা

রাকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ৫ আগস্ট ২০২২  

 

# হত্যা করে আতশবাজি ফুটায় আসামীরা: নিহতের বোন
# গ্রেপ্তার এড়াতে টাকার ছড়াছড়ি

 

স্বাভাবিক ভাবে কোন হত্যার ঘটনা ঘটলে হত্যাকারীরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পলাতক থাকেন। সেই সাথে তারা যেন আইনের জালে আটকে  না পড়ে তার জন্য সকল ধরনের চেষ্টা চালান। কিন্তু অনেক সময় প্রশাসন তৎপর থাকায় তারা আর আইনের চোখে ফাকি দিয়ে থাকতে পারেন না। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে কিশোরগ্যাং মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে এই কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে হত্যার ঘটনা বেড়েছে। এদেরকে কোন ভাবেই দমানো যাচ্ছে না। এদের খুনের ধরণও খুব মারাত্মক। এই কিশোরগ্যাং গ্রুপ নিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবক মহল। প্রশাসনও এদেরকেন রোধ করতে পারছে না।


এদিকে নারায়ণগঞ্জে জুন জুলাই মাসে কিশোরগ্যাংয়ের হাতে একাধিক হত্যার ঘটনা ঘটে। দুই একটি পুলিশ প্রশাসন আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারলেও বাকিদের ক্ষেত্রে গেপ্তারের তেমন কোন অগ্রগতি নেই। গত জুন মাসে দেওভোগে সুব্রত নামের এক কিশোরকে কাউন্সির মনিরুজ্জামামান মনিরের কিশোরগ্যাং গ্রুপ কুপিয়ে হত্যা করে। সুব্রত হত্যায় এখনো তেমন একটা আসামী গ্রেপ্তার হয় নাই। একই মাসে ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ছোট ভাই বড় ভাই ইস্যুতে ধ্রবকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে কিশোরগ্যাং গ্রুপ। সবর্শেষ কাশিপুর দেওভোগ মাদরাসা রোড শেষ মাথা মিয়া বাড়ি এলাকায় দেওভোগের শীর্ষ সন্ত্রাসী রাজু সাজুর সেকেন্ড ইন কমান্ড ওমরের নেতৃত্বে কিশোরগ্যাং গ্রুপ নিয়ে মেহেদিকে ধরে নিয়ে পাশের মাঠে এলোপাথারি কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত মেহেদির বোনের ভাষ্যমতে হত্যাকারী মেহেদিকে হত্যা করে প্রধান আসামী ওমর ফারুক গ্রুপ আতশবাজি ফুটান। তখন স্থানীয় লোকজন তাদের আটক করতে গেলে দৌরে পালান। পরে সোহাগ নামে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।


স্থানীয়রা জানান, ওমার ফারুককে শেল্টারদেন কাশিপুরের শীর্ষ মাদককারবারি রাজু সাজু। এই রাজু সাজুর বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের দায়ে ফতুল্লা থানায় মামলা রয়েছে। তারা চাদাঁবাজি সন্ত্রাসি, মাদককারবারি, নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করিয়ে কয়েক কোটি টাকা মালিক বনে গেছেন। মেহেদি হত্যার আসামীদের গ্রেপ্তার না করার জন্য পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে রাজু সাজু দৌরঝাপ করছে। টাকার বিনিময়ে তারা এর আগেও হত্যা মামলা থেকে রেহায় পেয়ে যান। পূর্বের ধারাবাহিকতায় এবারও লাখ লাখ টাকার মিশন নিয়ে নিজেদের রক্ষার জন্য মাঠে নেমেছে। তাই  নিহত মেহেদির পরিবার থেকে অভিযোগ উঠেছে পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তার করতে অনীহা প্রকাশ করছে। আসামীরা এলাকায় দিব্বি ঘুরা ফেরা করছে অথচ পুলিশ বলছে আসামীরা পলাতক রয়েছে কিন্তু পুলিশ চাইলে আসামীদের গ্রেপ্তার করা কোন বিষয় না। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা না হলে এখানে আরও হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই তাদের গ্রেপ্তার দাবী জানান এলাকাবাসি। সেই গ্রেপ্তার থেকে বাচঁতে আসামীরা টাকার ছড়াছড়ি করছে।

 
অন্যদিকে এই মেহেদি হত্যার ঘটনায় নিহতের বড় বোন মৌসুমী (২৯) বাদী হয়ে রোববার (৩১ জুলাই) আট জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জনকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছে। এই হত্যায় জরিত সোহগকে ধরে স্থানীয় মানুষ জন পুলিশে সোপর্দ করে। গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ ফতুল্লা মডেল থানার দেওভোগ শেষ মাথার দুলাল খার পুত্র ও স্থানীয় হোসিয়ারি কারখানার শ্রমিক। জানা যায়, মেহেদী হাসান ২০২১ সালের ১৭ জুলাই পশ্চিম দেওভোগস্থ নিহত ইমন হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ও চার্জশিটভুক্ত আসামী।


অন্যদিকে মামলার সূত্রে জানাযায়, মেহেদী হাসান (২১) পশ্চিম দেওভোগ মাদ্রাসার শেষ মাথা মিয়া পাড়াস্থ একটি হোসিয়ারী কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। গত ৩০ জুলাই প্রতিদিনের ন্যায় হোসিয়ারী কারখানায় কাজ শেষে বাড়ী ফেরার পথে পশ্চিম দেওভোগ মাদ্রাসার শেষ মাথা মিয়া পাড়াস্থ রাকিব এর চায়ের দোকানের সামনে পৌছালে ওমর ফারুক কিশোরগ্যাং গ্রুপ তুলে নিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।  পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় মেহেদী হাসানকে রক্তাক্ত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য দ্রুত জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া) নারায়ণগঞ্জ এর জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে ৩০ জুলাই জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার মেহেদী হাসানকে মৃত ঘোষণা করে। এই ঘটনায় মেহেদির বোন মৌসুমি বাদী ফতুল্লা মডল থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ্য করে হত্যা মামলা করেন। মেহেদী হত্যাকান্ড মামলায় আসামী হলেন, ওমর ফারুক (২৭), সবুজ (৩০), আরেক আসামী রাসেল ওরফে ভাগিনা রাসেল (২১), মাইকেল (২১), সীমান্ত (২২), শান্ত ওরফে কসাই শান্ত (২১),  জুব্বা (২৩), সঞ্চয় (২১) সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন। আসামীদের মধ্যে সবুজ ইমন হত্যা মামলার বাদী ছিল।


ফতুল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ রিজাউল হক বলেন, আসামীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছি। হত্যা মামলায় আসমীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।এমই/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর