বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যানজটমুক্ত রমজানের দাবি না.গঞ্জবাসীর

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২৩  


 # সুস্পষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ ও দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ
 

সামনে পবিত্র রমজান মাস। মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত পবিত্র এই মাস শেষেই জাতির অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। তাই একদিকে রমজানকে কেন্দ্র করে শহরেবাসীর ব্যস্ততা অন্যদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে কেনাকাটার চেষ্টা। সবকিছু মিলিয়ে শহরবাসীর ব্যস্ততা যেন কয়েকগুন বেড়ে যায়।

 

 

তাই এই ব্যস্ততার মধ্যে শহরবাসীর চলাচলের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা যানজট। যা রমজানের এই ব্যস্ততাকে করে তুলে যন্ত্রণা ও বিরক্তিকর। নারায়ণগঞ্জবাসী সবসময়ই যানজটের এই অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে চাইলেও বিভিন্ন কারণেই তা আর হয়ে উঠে না। তবে পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে সেই দাবিটা বা প্রত্যাশাটা আরও বহুগুনে বেড়ে যায়।

 

 

কিন্তু প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই এই যানজট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠে আসে। বাস্তবেও তার কিছুটা প্রমাণ যায়। যখনই প্রশাসন যানজটের বিষয়ে শক্ত অবস্থান নেন তখনই শহরের রাস্তাগুলোর চিত্র পাল্টে যায়। এমনকি গত বছর যখন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমানের উদ্যোগে যানজট নিরসনে পুলিশ প্রশাসনকে ১০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। 

 

 

তখন প্রথম রোজা থেকে রাস্তাঘাটের দৃশ্য পরিবর্তন হতে শুরু করে। শহরবাসীর চলালচল অনেকটাই যানজটমুক্ত হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনসহ এমপির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা। কিন্তু সেই অবস্থাটা ছিল প্রায় দশ রোজা পর্যন্ত। এরপর যেইকে সেই। অর্থাৎ শহরের যানজট তার আগের চেহারায় ফিরে যায়।

 

 

তাই এবার অন্তত পক্ষে রমজান মাসের পুরোটাই যেন যানজটমুক্ত হয় সেই দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন শহরবাসী। শহরবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, যানজট নারায়ণগঞ্জবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রতিদিনই এখানকার লোকজনকে এই অপ্রত্যাশিত যন্ত্রণাকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

 

 

তাদের মতে বাসা থেকে রাস্তায় বের হলে সামনে যখন একাধিক গাড়ির জটলা থাকে তখন মনের মধ্যে যে কি ধরণের এক অনুভূতির সৃষ্টি হয় তা আর বলে বোঝানো যাবে না। তখন অনেকেই হয়তো ভাবতে থাকেন যদি আমি কোন বড় পদে থাকতাম, আমার হাতে যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে আমি যেকোন উপায়েই হোক না কেন, তুড়ি মেরে এই যানজট শেষ করতাম।

 

 

অনেকই আবার অমুককে পেলে....... মনের মধ্যে ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক খেয়াল চড়ে বসে। কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন থাকলেও অনেক অধৈর্য্য হওয়ার পরও সকল প্রকার বিরক্তি মনের মধ্যে নিয়েই সুবোধ বালক-বালিকার মতো বসে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। তবে প্রতি রোজার মধ্যে এই যানজটের অত্যাচার এবং বিরক্তি যেন কয়েকগুণ বেড়ে মানুষের সামনে হাজির হয়।

 

 

বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আছে বলে অভিমত প্রকাশ করেন নারায়ণগঞ্জবাসী। তবে রমজানে এই যানজট থেকে শহরবাসীকে একটু শান্তি প্রদান করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। গত বছরও তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
 

 

তথ্য মতে রমজান কেন্দ্রীক এই যানজট নিরসনে পুলিশ প্রশাসনকে উৎসাহিত করার জন্য গত রমজানের আগে সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের উদ্যোগে দশ লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়। গত বছরের পহেলা রমজান থেকে এর ফলও পেতে শুরু করেছিলেন নারায়ণগঞ্জবাসী।

 

 

পহেলা রমজান থেকেই শহর যানজট মুক্ত রাখার ব্যাপারে পুলিশের শক্ত অবস্থান বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। সে সময় শহরে যানজট কমে যাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছিল নগরের সাধারণ বাসিন্দারা। তবে সেই অবস্থা বিরাজ করছিল দশ বারো রমজান পর্যন্ত। তার পর আবারও সেই পুরানো চেহারায় ফিরে গেছে শহরের যানজট পরিস্থিতি।

 

 

রমজানের শুরু থেকে যানজট নিয়ন্ত্রণে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে যে চেকপোস্ট বসানো হয়েছিল ধীরে ধীরে সেই চেকপোস্টগুলোর কার্যকারিতা কমতে শুরু করে। এছাড়াও রমজানের শুরু দিকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শহরের মূল সড়কে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার অবৈধ প্রবেশ ঠেকানোর কথা বলা হয়েছিল।

 

 

রোজার শুরুর দিকে শহরের মূল সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত অটো রিক্সা তেমন একটা দেখা না গেলেও রোজার মাঝামাঝি সময় সেগুলো আর নিয়ন্ত্রণে আর কোন চেষ্টা করতে দেখা যায়নি। এবারও যানজটের দূর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছেন সেলিম ওসমান। জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের সহযোগীতায় এই অর্থের জোগান হবে জানা গেছে।

 

 

এই অর্থ ব্যয় করা হবে সদর, বন্দর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় কমিউনিটি পুলিশ নিয়োগ ও তাদের বেতনে। এতে করে যানজট আর দূর্ভোগ কমবে বলে ধারণা করা হয়। গতবারের মতো এবার রোজার মাঝামাঝি সময় যখন ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষজন কেনাকাটার জন্য শহরের মার্কেট, বাজারগুলোতে ধীরে ধীরে ভীড় করতে শুরু করবে। 

 

 

সে সময় নারায়ণগঞ্জবাসীকে আবারও যানজটের কবলে পড়তে হবে কি না সেটাই দেখার বিষয়। গত বছর অনেককেই বলতে শোনা যায় দশ লাখ টাকায় দশ দিন দায়িত্ব পালন করেছে ট্রাফিক পুলিশ। সেই দশদিন তারা সফলতাও দেখাতে পেরেছে। কিন্তু এবারও যেন শুধু দশ-বারো কিংবা বিশ দিন নয়, অন্ততপক্ষে ঈদ পর্যন্ত যেন রাস্তাঘাট যানজটমুক্ত রাখার চেষ্টা করে ট্রাফিক পুলিশ।
 

 

পাঠানটুলি এলাকার আরিফ হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমনিতেই যানজট আমাদের নিত্য যন্ত্রণার সঙ্গী। তার সাথে মরার উপর খারার ঘা হিসেবে এই যন্ত্রণার সাথে যোগ হয়েছে হকার সমস্যা। হকাররা ফুটপাত দখল করে রাখার কারণে একদিকে যেমন সাধারণ পথচারীদের পথ চলায় সমস্যা হচ্ছে।

 

 

অন্যদিকে হকাররা শুধু ফুটপাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, দখল করে নিয়েছে যানবাহন চলাচলের প্রধান সড়কের বিভিন্ন জায়গাও। ফলে সড়কের যেসব জায়গা দিয়ে যানবাহন চলাচলের কথা সেখান দিয়ে বাধ্যই হয়ে এখন হাটছে মানুষ। যা যানজটের সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলেছে।
 

 

 

পাইকপাড়ার ইমতিয়াজ বলেন, মূল শহরের মধ্যে সিএনজি, অটো ইজিবাইকসহ একাধিক অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে এই যানজট কমানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, মূল শহরে অটো ইজিবাইক প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও ট্রাফিক পুলিশের কিছু অসাধু লোক এগুলো প্রবেশের সুযোগ করে দেয়।

 

 

হকার, অবৈধ স্ট্যান্ড বন্ধসহ শহরে অবৈধ রিকশা প্রবেশ করতে না দেয়ার বিষয়ে পুলিশের কানামাছি খেলার দৃশ্য কম দেখে আমরা হয়রান হয়ে গেছি। শুধু এই মাসকে যানজট মুক্ত রাখার জন্য এমপি সাহেব এতগুলো দিতেছেন, তারপরও যদি আমরা এই একটি মাস যানজটমুক্ত না পাই তাহলে আর কি করার আছে ! এন.হুসেইন/ জেসি

এই বিভাগের আরো খবর