বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘যুদ্ধের আগে ও পরের স্টাইলে নৌকাকে দমন করা হচ্ছে’

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২১  

# দলে থেকে আমরা বঙ্গবন্ধুর সুনাম রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছি
# সারাদেশে আওয়ামী লীগের সরকার থাকলেও নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির সরকার

 
যুদ্ধের আগে ও পরে যেভাবে নৌকাকে দমন করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জে এখন সেই একইভাবে নৌকাকে দমন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। আর এ জন্য তারা ওসমান পরিবারে সৃষ্ট ওসমান লীগের বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মতো সাহসী ভূমিকা পালন করতে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধানের প্রতি আহবান জানান। একই সাথে তারা কলাগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বন্দরের প্রতিটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আহবান জানান।


 
গতকাল শুক্রবার বিকেলে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের উপর যে নির্যাতন ও অত্যাচার চালানো হয় তার বর্ননা দিতে বন্দর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন প্রধান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে এধরণের আহবান করেন তৃণমূল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গত ১১ নভেম্বরে ইউপি নির্বাচন চলাকালীনও নৌকাকে পরাজিত করার পর জাতীয় পার্টি সমর্থিত চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধানের লোকজন নৌকার সমর্থকদের যে অত্যাচার ও নির্যাতন করেন তার বর্ণনা দেন তারা।


 
বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ থেকে জানা যায়, সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত হয়েছেন কলাগাছিয়ার ৫নং ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ। তবে ৪নং ওয়ার্ডবাসীর উপরও নির্যাতন কম হয়নি। নির্যাতিতসহ তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, ওসমান পরিবার কাজিমকে ভুল বুঝিয়েছে, অন্যদিকে তাদের নির্দেশেই নির্বাচনের সময় কেন্দ্রের সামনে দেলোয়ারের গুন্ডাবাহিনী কাজ করেছে।


 
জাতীয় পার্টির নেতা হান্নান বলেন, আমি জানতাম ফেল পাস যাই করি আমাদের মার খেতে হবে, তবে পাস করে যদি আরও বেশী মার খেতাম তাহলেও সমস্যা হতো না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনের রাতে আমার বাড়ির দেয়াল ভাঙ্গা হয়েছে।


 
৪ নং ওয়ার্ডের কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, ’৫৪ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত নৌকাকে হত্যা করতে যেভাবে চেষ্টা করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা জেল হত্যার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে ১১ তারিখের নির্বাচনে ঠিক একই কায়দায় এখানকার নৌকাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সেই নৌকার কান্ডারী হয়েও যদি নৌকাকে রক্ষা করতে না পারি তাহলে এই দল করার আমাদের কোন অধিকার নাই। আমরা এই আওয়ামীলীগ করতে চাই না। এই সময় এখানকার অনেক নেতাকর্মীই আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নৌকার সমর্থকরা বলেন, সারা বাংলাদেশ এখন আওয়ামী লীগের সরকারের শাসনে থাকলেও নারায়ণগঞ্জ চলছে জাতীয় পার্টির সরকারের শাসন। দলে থেকে বঙ্গবন্ধুর সুনাম রক্ষায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি, তাই বঙ্গবন্ধুর নামকে বুকে নিয়েই আমরা দল থেকে পদত্যাগ করতে চাই।


 
যারা সকল বাধা পেরিয়ে মাঠে নৌকার জন্য কাজ করেছেন তারাই প্রকৃত আওয়ামী লীগের কর্মী। যারা বড় বড় পদ নিয়ে বসে আছেন, দুই নৌকায় পা রেখেছেন এবং অন্যের কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন তারা কখনও আওয়ামী লীগের সমর্থক হতে পারেন না, তারা রাজাকারদের দোসর। আমাদের হয়তো ওসমান লীগ কিংবা আওয়ামী লীগ যে কোন একটা বেছে নিতে হবে। নেতাকর্মীদের অনেকেই এ সময় বলেন, নারায়ণগঞ্জে এখনও প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সংখ্যা অনেক বেশি। এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমর্থক বেশি নাকি ওসমান লীগের সমর্থক বেশি জনগণ তা বুঝিয়ে দিয়েছে। তাই নৌকাকে ভালবেসে কাজ করতে হলে আমাদের মেয়র আইভীর মতো সাহসী হতে হবে।


 
সেল সারদির এক কর্মী বলেন আমি আমরা দীর্ঘ চল্লিশ বছর অনেক নির্যাতন সহ্য করেছি এখন নির্যাতন করার মত শরীর, স্বাস্থ্য কিংবা মন কোনোটাই আর নেই। আমরা বছরের পর বছর নির্যাতিত হলেও নিজেদের সর্বত্র আওয়ামী লীগকে দিয়েছি কিন্তু আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেও আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বুক ফুলিয়ে হাঁটতে পারছি না। তারা বলেন, এখানকার জাতীয় পার্টির মধ্যে গুন্ডাপান্ডা ছাড়া কোনো ভালো নেতা নেই। তাদের অবৈধ উপার্জন, ভূমিদস্যুতা এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আমরা যদি সবাই একতাবদ্ধ হই এবং তাদের সকল ধান্দাবাজি বন্ধ করে দেই তাহলে জাতীয় পার্টির এখানে কোন পাত্তা থাকবে না। আওয়ামী লীগের সকল দুঃসময়ে পাশে ছিলাম। অনেকেই আওয়ামী লীগের পদ নিয়ে নির্বাচনের সময়ে নৌকার ব্যাচও লাগায় নাই। দালালদের চিহ্নিত করে তাদের চিনিয়ে নিতে হবে। শেখ হাসিনার দেয়া নৌকার প্রচারণা চালাতে ভয় পেলে চলবে না। তারা বলেন, আওয়ামী লীগের নামধারী যে সকল নেতা জাতীয় পার্টির দেলোয়ারের সাথে আঁতাত করেছে তারা যেন কোনো পদে না আসতে পারে।


 
৫ নং ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা জানান, বন্দরের মধ্যে কলাগাছিয়া আওয়ামী লীগের সংগঠন শক্তিশালী। কিন্তু আমাদের ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতারাও নৌকার বিরোধিতা করেছেন এবং নৌকাকে পরাজিত হওয়ায় তারার রং কিনে আনন্দ করেছেন। এর চেয়ে আর বড় কষ্ট হতে পারে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী দাবী করে বলেন, এখানকার পরপর তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। এবারের ইউপি নির্বাচনে আমাদের এই ইউনিয়নে কোন বিদ্রোহী প্রার্থীও ছিল না। তাই জাতীয় নির্বাচনে আমরা প্রমাণ দিতে চাই এখানে কার সাপোর্ট বেশি। জাতীয় পার্টি না আওয়ামী লীগের। জাতীয় নির্বাচনে একানকার আওয়ামী লীগের সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে বলেও তারা হুশিয়ার করে দেন।


 
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রহীম কাসেম বলেন, আমরা কাজিম উদ্দিন ভাইয়ের জন্য কাজ করেছি। যারা দুই নৌকায় পা রেখেছেন তাদের চিহ্নিত করে খুঁজে বের করতে হবে নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা পদত্যাগ করি আর যাই করি, সবার সাথে আলোচনার মাধ্যমে সবার সম্মতিতে করা হবে।



ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির হোসেন বলেন, আমাদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ছিল, তাই আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। লাঙ্গল মার্কার লোকেরা আওয়ামী লীগের উপর সময় বুঝে ছোবল মেরেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোক দিয়ে জাতীয় পার্টি চলে, জাতীয় পার্টির লোক দিয়ে আওয়ামী লীগ চলে না। ওসমান পরিবার থেকে বেরোতে হলে আমাদের শপথ নিতে হবে। আমরা কখনো কাজিম ভাইকে ছেড়ে যাবো না। জাতীয় পার্টির সকল নির্বাচন আমরা বয়কট করব।
 

এই বিভাগের আরো খবর