শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

যে কারণে মেয়র আইভীকে আবারও চায় নগরবাসী

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর ২০২১  

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আসন্ন প্রায়। সবকিছু ঠিক থাকলে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নাসিকের তৃতীয় নির্বাচন। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জবাসীর সামনে একটি রূপকল্প হাজির করেছিলেন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। নারায়ণগঞ্জ সিটির সামগ্রিক উন্নয়নসহ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তিনি আওয়াজ তুলেছিলেন  ‘নয় শঙ্কা নয় ভয়, শহর হবে শান্তিময়’।

 

এই স্লোগান আইভীকে সেদিন পৌঁছে দিয়েছিল নগরীর গুম-খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও বিরক্ত নারায়ণগঞ্জবাসীর হৃদয়ের কাছে। নির্বাচিত হয়ে তিনি ভুলে যাননি নগরবাসীকে দেয়া তার ওয়াদা। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভুমিদস্যুতার বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার সবসময়। নগরবাসীর মতে আইভীর এই আপসহীন মনোভাবই তাকে তুমুল জনপ্রিয় করেছে। স্বীকৃতি পেয়েছেন গণমানুষের নেতা হিসেবে। পিতা আলী আহাম্মদ চুনকার মতো অল্প সময়েই মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন ডা. আইভী।

 

রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা ব্যক্তিটি অল্প সময়তেই বুঝেছিলেন, মানুষ উন্নয়নের পাশাপাশি শান্তি চায়। এই কাজটি মেয়র আইভী সুনিপুণ হাতে সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলেই মত নগরবাসীর। ২০০৩ সালে পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফায় সিটি মেয়রের দায়িত্ব পালনকালীন বদলে দিয়েছেন নগরীর চেনা রূপ। রাস্তা-ঘাট নির্মাণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো নাগরিক সেবা দিয়েছেন তিনি। সুপরিকল্পিত নগরায়নের এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে শহরের বুকে নির্মাণ করেছেন শেখ রাসেল নগর পার্ক, খনন ও সৌন্দর্যবর্ধন করেছেন বাবুরাইল খাল এবং সিদ্ধিরগঞ্জ খাল। উন্নয়নের পাশাপাশি লড়েছেন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ভূমিসন্ত্রাসীর মতো দৃশ্যমান গণশত্রুদের বিরুদ্ধে। কেবল নির্বাচনী আশ্বাসই নয়, দীর্ঘ এই রাজনৈতিক জীবনে লড়েছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। মেধাবী ছাত্র ত্বকীসহ নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সকল হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেছেন এবং করে যাচ্ছেন ভরা মজলিশে।

 

অনেকের মতে, রক্তচক্ষুকে ভয় না করার সাহস নগরবাসী পেয়েছেন মেয়র আইভীর কাছে। প্রতিকূলতার মুখে প্রতিবাদের অন্যতম প্রতীক হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। বিগত বছরগুলোতে সবুজ ও পরিকল্পিত নগর গড়তে ব্যাপক সড়ক উন্নয়ন, সমন্বিত ড্রেনেজ সিস্টেম, পয়োনিষ্কাশন, জলধার সংরক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক, নগর হাসপাতাল এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু; পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ, শহর থেকে ট্রাক টার্মিনাল সরানো, এনসিসির আয় বৃদ্ধির জন্য নিজস্ব ভূমিতে মার্কেট ও ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং কাঁচাবাজারসমূহের উন্নয়ন, কবরস্থান ও শ্মশানের উন্নয়ন, বিনোদনের জন্য পার্ক নির্মাণ, শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ, নারায়ণগঞ্জকে মেট্রোরেলের সঙ্গে সংযুক্ত করার সুপারিশ, নাগরিকের সুবিধার্থে হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় মাত্রায় রাখা সহ নানান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে মেয়র আইভীকে বলা হয়ে থাকে আধুনিক নারায়ণগঞ্জের রূপকার।

 

তার নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় প্রতিটি ওয়ার্ডে বৃক্ষরোপণ, রাস্তায় রাতে বাতি জ্বালানো, জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খেলার মাঠগুলো রক্ষা, প্রতিটি এলাকায় সমপরিমাণ উন্নয়ন তাকে নিয়ে গেছে সফলতার অন্য উচ্চতায়। আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছেন মেয়র আইভী। স্থানীয় নির্বাচনে দৃশ্যমান উন্নয়ন জনগণের ভোটে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। পাশাপাশি নাগরিক সেবা বিরাট ফ্যাক্টর। সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সুবিধার মধ্যে অন্যতম রাস্তা-ঘাট-ড্রেন নির্মাণ, মশক নিধন, স্বাস্থ্যসেবা, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। মেয়র হিসেবে আইভী নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে পেরেছেন সে হিসাবটিও ভোটারদের বিবেচনায় উঠে আসবে বলে মনে করছেন নগরীর বোদ্ধামহল।

 

তারা বলছেন, দলীয় ভোটারের পাশাপাশি নির্বাচনী পরিভাষায় ফ্লোটিং ভোটার বা ‘ভাসমান’ ভোটাররাই সিটি নির্বাচনে আইভীর ট্রাম্প কার্ড। দলীয় ভোটের বাহিরে বরাবরই তারা মেয়র আইভীর পক্ষে থাকেন। উদাহরণ হিসেবে, বিগত দুই সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রথমবার লক্ষাধিক ও পরেরবার প্রায় ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভের বিষয়টি সামনে আসে। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর পৌরসভা আমল থেকেই মেয়র আইভীকে ঘায়েল করতে তৎপর একটি পক্ষ। সেই তৎপরতা এখনো চলছে। কিন্তু কোন নেতিবাচক প্রচারণা মেয়রকে কাবু করতে পারেনি। উল্টো দিনদিন আরও জনপ্রিয় হচ্ছেন মেয়র আইভী। ক্ষমতাসীন নিজ দলের সরকারে থাকা অবস্থায় জিতেছেন দুইবার আবার বিএনপির আমলেও জিতেছেন তিনি।

 

এই পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে তাকে এবং প্রতিটি নির্বাচন বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় মডেল নির্বাচন বলা হয়ে থাকে। প্রতিবারেই তিনি সেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জিতে আসেন। মেয়র আইভী ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীদের দাবি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নেই। নেই সন্ত্রাসী লালন পালনের অভিযোগ। বরং একাধিকবার তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেও সুবিধা করতে পারেনি প্রতিপক্ষরা। নারায়ণগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে মেয়র আইভীর। আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়তে ইতোমধ্যে তিনি একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন, আরও কিছু চলমান। আইভী ঘনিষ্ঠদের দাবি চলমান প্রকল্প সমাপ্ত হলে নারায়ণগঞ্জ হবে সারা বাংলাদেশের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। তাই সিটি কর্পোরেশনের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প সমাপ্ত ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ মেয়র আইভীকেই আবারও মেয়র পদে দেখতে চায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ নগরবাসী।
 

এই বিভাগের আরো খবর