Logo
Logo
×

রাজনীতি

যেসব কারণে ভোটযুদ্ধে পিছিয়ে সেলিম ওসমান

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৪১ পিএম

যেসব কারণে ভোটযুদ্ধে পিছিয়ে সেলিম ওসমান
Swapno

 

# নৌকা ও লাঙ্গল আলাদা প্রার্থী দিলে বিপাকে সেলিম ওসমান
# কদম রসুল সেতুর নামে স্ট্যান্টবাজির অভিযোগে বন্দরবাসীর ক্ষোভ
# বন্দর আওয়ামী লীগকে ধূলিস্যাৎ করার কারিগর বলে মনে করা হয়
# না’গঞ্জ জাতীয় পার্টিকেও দ্বি-খণ্ডিত করার অভিযোগ

 

 

নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। যিনি নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। সেলিম ওসমান একজন সফল ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রভাবশালী নেতাও বটে। সেলিম ওসমান তার বড় ভাই একেএম নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর অনেকটাই আকস্মিকভাবে রাজনীতিতে আসেন।

 

যদিও সে সময় তিনি তার রাজনীতি করার ইচ্ছে নেই বলে জানিয়েছেন এবং তার ভাইয়ের ব্যাকআপ হিসেবে রাজনীতিতে আসছেন উল্লেখ করে কন্টিনিউ না করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেলিম ওসমান অনেকটা তার ভাই নাসিম ওসমানের তৈরি করা জনপ্রিয়তা নিয়ে বিশেষ করে বন্দর এলাকার মানুষের ভোট টেনে নিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। তবে সেলিম ওসমানের পর পর দুইবার নির্বাচিত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের জোটবদ্ধ নির্বাচন।

 

যার ফলে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধানের নির্দেশে আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মীগণও তার হয়ে নির্বাচন করেছে বলে তিনি এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানা যায়। এবার নৌকার আলাদা প্রার্থী থাকায় সেই সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। কদম রসুল সেতু নিয়ে অপরাজনীতি করার অভিযোগেও বন্দরবাসীর মনে ক্ষোভ জমেছে তার বিরুদ্ধে। নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের একজন সন্তান হয়ে চিহ্নিত রাজাকার পরিবারকে শেল্টার দিয়ে অপকর্ম করার উস্কানী দেওয়াকেও মেনে নিতে পারেনি বন্দরবাসী।

 

গত ইউপি নির্বাচনে হুমকি ধমকির মাধ্যমে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা এবং তার পালিত কিছু আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সন্ত্রাসী স্টাইলে ও অপকৌশলে জনপ্রতিনিধি হতে চাওয়া নতুন প্রার্থীদের নির্বাচনে আসতে বাধা প্রদান করা এখন বন্দরবাসীর মুখে মুখে।

 

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের তৎকালীন এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী পারভীন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ায় এবং ছেলে আজমেরী ওসমান নেতৃত্বের উপযুক্ত না হওয়ায় অনেকটা আকস্মিকভাবেই রাজনীতিতে আসেন সেলিম ওসমান। সে সময় জাতীয় পার্টি এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের যৌথ প্রচেষ্টায় তিনি সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন।

 

এরপর ২০১৮ সালে নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে সেলিম ওসমান ও তার পরিবারের রোষাণলে পরিণত হন পারভীন ওসমান। এর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি গ্রুপ নাসিম ওসমানের ভক্ত হিসেবে এখনও পারভীন ওসমানের পক্ষে প্রকাশ্যে আছেন। আরেকটি পক্ষ সুযোগ সন্ধানী হিসেবে ব্যবসায়ী সেলিম ওসমানের পক্ষে ভিড়ে এবং অন্য আরেকটি পক্ষ নাসিম ওসমানের সহচর হিসেবে মধ্যস্থতার পথ অবলম্বন করেন।

 

যদিও পরে তাদের অনেকেই নিজেদের ক্ষমতা কিংবা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সেলিম ওসমানের সাথে মিশতে বাধ্য হয়। সেলিম ওসমান কখনও নারায়ণগঞ্জকে জাতীয় পাটি বানিয়ে ফেলেন আবার জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ বানিয়ে ফেলেন তাই নিজ দলের মধ্যেই এমন নেতা আছেন যারা সেলিম ওসমানের পরাজয় দেখার অপেক্ষায় আছেন।

 

আওয়ামী লীগের সৃষ্টি লগ্ন থেকেই নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নাম জড়িয়ে আছে। খান সাহেব ওসমান আলী, একেএম শামসুজ্জোহা, নাগিণা জোহা ও নাসিম ওসমানসহ সেলিমের ওসমানের নামও জড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের তালিকায়। অথচ এই সেলিম ওসমান নিজেই বন্দরের কুখ্যাত রফিক রাজাকারের ছেলে মাকসুদ রাজাকার ও তার পরিবারকে মুক্তিযুদ্ধের অর্ধশত বছর পরেও শেল্টার দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।

 

তার উস্কানীতেই মাকসুদ ও তার পরিবার হত্যা, ধর্ষন, খুন, অপহরণ, প্রকাশ্যে উঠিয়ে নিয়ে টর্চার সেলে গুলি করে মেরে ফেলার চেষ্টা, সেই পরিবারের সহযোগীরা ধর্ষণ মামলার আসামী হওয়ার পরও ধর্ষিতার পরিবারই বাড়ি ছাড়া হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে বলে জানায় স্থানীয় বাসিন্দাগণ।

 

সারাদেশ যেই পরিবারকে রাজাকার পরিবার বলে জানে তাদের প্রকাশ্যে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনসহ মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মঞ্চে পাশে বসিয়ে রেখে বিভিন্ন অপকর্ম করতে সাহস যোগাচ্ছেন বলে জানা যায়। ওয়ারেন্টের আসামী হওয়ার পরও তারা প্রকাশ্যে ঘুরে ফিরে বেড়ায়।

 

২০০৮ সালের নির্বাচন থেকেই জোটগত কারণে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। তাই আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে এই আসনটি এতদিন জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। সেলিম ওসমান ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের সুযোগ সন্ধানী নেতাদের খুঁজে বের করে তাদের ক্ষমতায় বসানোর অভিযোগ আছ তৃণমূল আওয়ামী লীগ থেকে। এসব সুযোগ সন্ধানীরা তাই দলীয় কোন কর্মসূচীতে উপস্থিত না হলেও সেলিম ওসমানের চেল্যা হিসেবে তার যে কোন কর্মসূচী, সভা বা আয়োজনে উপস্থিত থেকে হাজিরা দিয়ে বিশ্বস্ততার প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করেন।

 

অন্যদিকে যারা আওয়ামী লীগের পরিক্ষিত ত্যাগী নেতা তাদেরকে দমিয়ে রাখার ফর্মূলা বের করেন এসব সুযোগ সন্ধানী নেতারা। বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনেও নিজ দলের লোকদের কৌশলে দমন করে প্রভূর বিশ্বস্ততার প্রমাণ দেয় সেসব জাতীয় পার্টি মার্কা আওয়ামী লীগ নেতারা। তাই এবার বাধ্য হয়েই এই আসন থেকে আলাদা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানান বন্দর আওয়ামী লীগ। কিছুদিন আগেও সেই জাতীয় পার্টির প্রভূভক্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় বলে দাবি করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

 

তাই এবার আওয়ামী লীগের সমর্থন না পাওয়ায় এবং বন্দরে জাতীয় পার্টির নিজস্ব কোন শক্তিশালী অস্থান তৈরি করতে না পারায় এবার ভোটযুদ্ধে সেলিম ওসমান বড় একটি ধাক্কা খাবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। এসব কাউয়া মার্কা নেতাদের ক্ষমতা, পেশি শক্তি এবং প্রশাসনিক প্রভাবের কারণে ভীত হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ এসব বিষয় কথা বলার সাহস দেখাতে না পেরে এবার নৌকার আলাদা প্রার্থী থাকায় তা তাদের ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ ছাড়বে না বলে মনে করেন সচেতন মহল।

 

আরও একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণে সেলিম ওসমানের কাছ থেকে বন্দরবাসী মুখ ফিরিয়ে নিবেন বলে মনে করেন বন্দরের সচেতন মহল। নারায়ণগঞ্জ শহরের সাথে বন্দরবাসীর যোগাযোগ দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্য বন্দরবাসীর দীর্ঘদিনের দীর্ঘশ্বাস হিসেবে পরিচিত শীতলক্ষ্যা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ আছে এই আসনের এমপিদের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সময় এই আসন থেকে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন একাধিক এমপি।

 

কিন্তু বন্দরবাসীর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। এর আগে সেলিম ওসমানও নির্বাচিত হতে পারলে এখান দিয়ে সেতু তৈরি করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হন তিনি। বন্দরবাসীর দাবি শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে হাজীগঞ্জ কিংবা ৫ নং ঘাট এলাকায় একটি সেতুর নির্মাণের। যে দাবি বন্দরবাসীর প্রাণের দাবি বলেও জানা যায়।

 

কিন্তু নির্বাচনের পূর্বে অন্যান্য জনপ্রতিনিধির মতো তিনিও এই সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার করেন। কিন্তু নির্বাচনের পর আর সেতু নিয়ে কোন কথা বলেন না। আবার নির্বাচন আসলেই পুনরায় সেই ওয়াদা করতে থাকেন। কিছুদিন আগে সেলিম ওসমান বিষয়টি বুঝতে পেরে এবার শুধু সেতু নির্মাণের অঙ্গীকারই করেননি। তিনি বলেছেন তিনি নির্বাচিত হলে খুব শীঘ্রই এই সেতু দিয়ে পারাপার হবেন বন্দরবাসী। যা তাদের কাছে খুবই হাস্যকর মনে হয়েছে।

 

সাংসদ সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে শিক্ষাখাতে ব্যাপক উন্নতির প্রচার করে থাকেন। যার চিত্র বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমেও আসে। কিন্তু তিনি চেল্যাদের মধ্যে যারা খুবই বাধ্য শীষ্য হিসেবে পরিচিত শুধু তাদের টার্গেট করা কিছু স্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেন। এর বাইরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি জীর্ণ ভবন ভাঙ্গার নির্দেশ দিলেও সেখানে ভবন করতে আর তার সাথে যোগাযোগ করেও লাভ হয় না।

 

একই সাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি বহুতল ভবন নির্মাণের ঘোষণা দিয়েও সেখানে আর কোন উদ্যোগ নেননি। এমনকি সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও আর কোন লাভ হয়নি। বন্দরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি গত নির্বাচনের আগেও এ ধরণের ওয়াদা করেন কিন্তু দীর্ঘ এই সময়েও তার কোন বাস্তবায়ন হয়নি বলে সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তার আশেপাশের মানুষের অভিযোগ।

 

তাই এবার আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেহেতু বিএনপি অংশগ্রহণ করতেছেন বলে জানা গেছে। তাই এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের যিনি প্রার্থী হবেন তিনি যদি তার প্রজ্ঞা দিয়ে বন্দরবাসীর মন জয় করে নিতে পারেন তাহলে ভোটযুদ্ধে এই আসনে এবার সেলিম ওসমানের কোন অস্তিত্বই থাকবে না বলে মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ রাজনীতি নিয়ে কাজ করেন এধরণের বিশ্লেষকগণ। এস.এ/জেসি
 

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন