বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে আ.লীগ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৩  

 

# গাজীপুর নির্বাচন কী নারায়ণগঞ্জের এমপিদের জন্য নতুন কোন বার্তা বহন করে

 

 

সদ্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক সারা ফেলেছে। অপর দিকে আগামী নির্বাচনের আগ মুহুর্তে আমেরিকার স্যাংশন নিয়ে আলোচনা। তার মাঝে নারায়ণগঞ্জের-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানকে ভিসা দিচ্ছে না আমেরিকা। এমন তথ্যে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ব্যাপক সারা ফেলেছে। কেননা স্থানীয় রাজনীতিতে তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এছাড়া এখানে এই জনপ্রতিনিধির বিশাল কর্মী সমর্থক রয়েছে।

 

তবে গাজীপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠ হওয়া নিয়ে মানুষ ধোয়াশায় থাকলেও নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহনের মাধ্যমে ফলাফলের ঘোষনার পর পানিরমত তা স্বচ্ছ ভাবে পরিস্কার হয়ে যায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন যে ভাবে স্বচ্ছ হয়েছে এভাবে আগামী জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন দলের অনেক সংসদ সদস্য পরাজিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ।  

 

এদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ। সেই সাথে আগামী নির্বাচনে বিতর্কিত এমপিরা বাদ পরতে পাড়ে। সেই সাথে আওয়ামী লীগের যে সকল সংসদ সদস্যদের মানুষের সাথে জনসম্পৃক্ততা নেই তাদের কপাল পুড়তে পারে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা ইতোমধ্যে আগামী নির্বাচন নিয়ে কঠিন বার্তা দিচ্ছে।

 

বিভিন্ন সভায় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিগত নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনটি হবে বড় চ্যালেঞ্জের। এই নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো অংশ নিক বা না নিক, সার্বিক বিবেচনায় ভোট আগের মতো সহজ হবে না। আর এজন্য দলীয় এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সর্বোচ্চ যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে নির্বাচনি প্রস্তুতি, যার লক্ষ্য দ্বাদশ নির্বাচনের বৈতরণী পেরিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া।

 

দলীয় সূত্রমতে জানা যায়, এই বছরকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের জন্য প্রচারনার বছর হিসেবে ঘোষনা করেছে। তারই অংশ হিসেবে স্থানীয় সকল এমপিকে মাঠে নেমে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে রয়েছেন। তার মাঝে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী মাঠে নেমে দলীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি গণ সংযোগ করে যাচ্ছেন।

 

তার বিপরীতে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে এমপি নজরুল ইসলাম বাবুও কোন অংশে থেমে নাই। তিনি মাঠে রয়েছেন। তবে সম্প্রতি এই সাংসদ আড়াইহাজার পৌরসভা নির্বাচনে মন্তব্য করে সমালোচনায় পরেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান মাঠে নামার ঘোষনা দিয়ে উধাও হয়ে যান। এছাড়া তার আসনে দলীয় কোন্দল বেশি রয়েছে বলে জানান ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ। আর এজন্য তিনি মাস কয়েক আগে দলীয় নেতা কর্মীদের আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

 

কিন্তু কে শুনে কার কথা। কোন্দল কোন ভাবে মিট হচ্ছে না। তাছাড়া তারা তিন জনই নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠ এবং সচ্ছ ভাবে হলে তাদের কপাল পুড়তে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় রাজনৈতিক সচেতন মহল।  

 

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৩ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের শরীক দলের হয়ে জাতীয় পার্টির দখলে রয়েছে এই দুটি আসন। তার মাঝে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম ওসমান রয়েছেন।

 

তবে জাতীয় পার্টির সাথে এখন আওয়ামী লীগের শরীক না থাকায় তারা অনেকটা বেকায়দায় রয়েছে। তাছাড়া এর দুটি আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার জন্য দাবী জানিয়ে আসছেন স্থানীয় আওয়ামী র্লীগের নেতারা। তারা এখানে নৌকায় ভোট দিতে চান। জাতীয় পার্টির উপর ভর করে থাকতে চান না। সেই সাথে এই দুটি আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নৌকার মনোনয়নের জন্য মাঠে নেমেছেন। তারাও আলোচনায় রয়েছেন।

 

সূত্র মতে, সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জরিপের ফল ও প্রতিবেদন আসার পর সেগুলো আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য ও তুলনামূলক কম যোগ্যসহ ক্যাটাগোরিক্যাল একাধিক প্রার্থী তালিকাও হতে পারে। এরমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদের বিতর্কিত ও অযোগ্য এমপিদের আলাদা তালিকা থাকছে। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বিভিন্ন মাধ্যমে বাছাই করা যোগ্য প্রার্থীদের মনোনীত করবেন।

 

সূত্রের ভাষ্য, জরিপে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে আসনভিত্তিক কার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি, স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর কিনা, অনিয়ম-অপকর্ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা, উপদল সৃষ্টির গ্রুপিংয়ে জড়িত কিনা, বিরোধী সম্ভাব্য প্রার্থীর বিপরীতে অবস্থান শক্তিশালী কিনা ইত্যাদি।

 

এসব বিষয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য এবং দলীয় নেতাদের। এ কারণে নিজ এলাকায় তৎপরতা বাড়িয়েছেন এমপি ও নেতারা মনে করেন দলীয় নেতৃবৃন্দ।

 

গত ১৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের শেখ হাসিনা সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জনগণ যাদের চায়, তাদের পাশে থাকা প্রার্থীকেই নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকা বা ক্ষমতাধর মনে করা কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। যাদের আমলনামা ভালো তারা মনোনয়ন পাবেন, যাদের আমলনামা খারাপ তারা বাদ পড়বেন।

 

গত কয়েক দিন আগে নারায়নগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা বলেন, আগামী নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জের নির্বাচন। এই নির্বাচনা এত সহজ হবে না। এখানে বাঁচা মরার নির্বাচন হবে। তাই এখন থেকে দল যাকে মনোনয়ন প্রার্থী দিবে তার জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে।

 

তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করে গাজীপুর নির্বাচন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হিসেবে এমপিদের জন্য বার্তা। তাছাড়া দলও চাচ্ছে যোগ্য প্রার্থীদের জনপ্রতিনিধির কাতারে নিয়ে আসতে। তবে নির্বাচন আসলেই তা পরিস্কার হয়ে যাবে।এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর