শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রাজনীতিতে করোনার প্রভাব 

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৪ জুলাই ২০২১  

রাজনৈতিক ইস্যুতে সর্বদাই আলোচনায় ছিলো নারায়ণগঞ্জ। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি বা বিএনপি অঙ্গণ- সাংগঠনিক কর্মকান্ড থেকে শুরু করে অভ্যান্তরীণ কোন্দলেও ঝড় উঠেছিলো প্রতিটি দলেই। নানা ইস্যুতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির উভয় দলের সহযোগি সংগঠনও ছিলো সরব। কিন্তু করোনায় সৃষ্ট লকডাউনে নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক উত্তাপ অনেকটাই মিইয়ে গেছে।

 

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর, রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁ থানা আওয়ামী লীগের কমিটির তালিকা চূড়ান্ত হলেও করোনার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এসব কমিটির আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা দেয়া যাচ্ছে না।  দিনক্ষণ ভালো থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সদর ও বন্দর থানা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হতো বলে জানিয়েছিলো জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। একই অবস্থা বিরাজ করছে বিএনপিতেও। জানা গেছে, গত পহেলা জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

 

এর প্রায় দু’মাস পর থানা ও পৌর কমিটিগুলো গঠনের লক্ষ্যে জেলার আহবায়ক কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে ১০টি উপকমিটি করে দেয়া হয় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে। ওই উপকমিটি দু’সপ্তাহের মধ্যে থানা ও পৌর কমিটিগুলো গঠনের কার্যক্রম শেষ করবে বলে নির্দেশনা ছিলো। কিন্তু এপর থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় উপকমিটিগুলো থানা ও পৌর কমিটি গঠনের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারেনি। তাই করোনার কারণে দীর্ঘ দিন ধরেই থানা ও পৌরসভার কমিটি গঠনের কার্যক্রম ঝুলে আছে। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ওয়েবের কারণে তাদের কমিটি গঠনসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এতোদিনে তাদের কমিটি গঠন হয়ে যেত।

 

অন্যদিকে, জাতীয় পার্টিতেও একই চিত্র বিরাজ করছে। জেলা ও মহানগরের আংশিক কমিটি হলেও দীর্ঘদিনেও তা পূর্নাঙ্গ হয়নি। ইতিপূর্বে নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক মো. সানাউল্লাহ সানু দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেছিলেন, ‘আমাদের কমিটি গোছানোর কার্যক্রম চলমান ছিলো। কিন্তু করোনার কারণে আপাতত কমিটিসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ আছে।’ এর আগে মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন বলেছিলেন বলেন, ‘আমাদের জেলা ও মহানগরের সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি হয়েছে। এখন করোনার প্রেক্ষাপটের কারণে কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। সরকার যখন শারীরিক দুরত্বের বিধান শিথিল করবে, তখনই সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটিগুলো করা হবে। করোনার কারণে কমিটি বা অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমগুলো সেভাবে পালন করা যাচ্ছে না।’

 

জানা গেছে, পান থেকে চুন খসলেই ইস্যু তৈরী করে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা ব্যানার হাতে কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের রাজপথ উত্তপ্তের মাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসতো। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজনৈতিক নেতারাও এখন আড়ালে আছে। অতীতের মতো নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সেই উত্তাপ দেখা যাচ্ছে না। বিরোধী রাজনীতিতেও পড়েছে ভাটা। দলীয় কর্মসূচী পালনে রাজনৈতিক দলগুলোর কোন কোন নেতাকে দেখা গেলেও লোক সংখ্যা তুলনা মূলক কম থাকছে। তাই দলীয় কর্মসূচিগুলো আগের মত প্রাণবন্ত হয়ে উঠে না বলে মন্তব্য করছেন তৃণমূল কর্মীরা। এদিকে, করোনার কারণে দলীয় নেতারা সাংগঠনিক ভাবে আলোচনায় না থাকলেও বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণে অনেকই ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। দলীয় প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

 

অপর দিকে, বিএনপির নেতারা দলীয় সংগঠনিক উন্নতির কথা চিন্তা না করে যে যার মত করে নিজস্ব অবস্থানে থেকে অতীতের দায়েরকৃত মামলা থেকে রেহাই পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও করোনা প্রেক্ষাপটের কারণে আদালতের কার্যক্রমে পরিবর্তন আসায় বিএনপি নেতারাও জামিনও পাচ্ছেন না। জানা গেছে, ভাগ ভাটোয়ারা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দ্বন্দ্ব ও বিএনপিতে মামলা হামলার আতঙ্কে ঝিমিয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি। আর নেতৃত্বগুণের অভাবে জাতীয় পার্টিও ঝিমিয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জে। নেতারা নিষ্ক্রিয় থাকায় নীরব দলের কর্মী সমর্থকরাও।    
 

এই বিভাগের আরো খবর