বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রূপগঞ্জে ছায়ামন্ত্রী : নীলার দংশনে নীল পূর্বাচল

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২২  


রাজধানীর অদূরেই পূর্বাচল নতুন শহর। ওই শহরে পা ফেললে একটা নাম মানুষের মুখে ফেরে। তিনি নীলা! পুরো নাম সৈয়দা ফেরদৌসী আলম। রূপগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান, পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। জমি দখলসহ নানা অবৈধ কাজে তাঁর দাপট আর প্রভাব খাটানোর ব্যাপক অভিযোগ থাকলেও পূর্বাচল-রূপগঞ্জের কেউ প্রতিবাদ তো দূরের কথা- কিছু বলতেও সাহস পান না। 


পূর্বাচলের 'নীলা মার্কেট' গণমাধ্যমে এতবার শিরোনাম হয়েছে যে এখন মার্কেটটি একনামে চেনে সবাই। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট দখল করে নীলা দাঁড় করিয়েছেন ওই মার্কেট। এর পাশেই প্লট দখল করে বানিয়েছেন ক্লাব। ক্লাবের পিলে চমকানো নাম 'আওয়ামী লীগ ক্লাব'! নীলার স্বামী শাহ আলম ফটিক আর দেবর আনোয়ার হোসেন ক্লাবটির দেখভাল করেন। 


পূর্বাচলে প্রতিবন্ধীদের খেলার জায়গা দখল করে বানিয়েছেন লেডিস ক্লাব, পূর্বাচল কনভেনশনের ৭৬ কাঠার প্লট এখন তাঁর কবজায়, পূর্বাচল ক্লাবের সদস্যপদ কেনাবেচা হয়, শীতলক্ষ্যার তীরে প্লট দখল করে চলছে কয়লা-পাথর-বালুর কারবার, মন্দির-শ্মশানের প্লটে উঠিয়েছিলেন দোকান আর ইউসুফগঞ্জ খালের ওপর উঠেছে নীলার বাড়ি। ক্ষমতার দাপটে স্থানীয় ইউসুফগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির পদ নীলা আঁকড়ে রেখেছেন এক যুগ।


প্রতিবন্ধীদের খেলার জায়গায় লেডিস ক্লাবঃ পূর্বাচল ১৩ নম্বর সেক্টরের ৩০৫ নম্বর রোডে প্রায় তিন বিঘা জমি প্রতিবন্ধীদের খেলার মাঠ হিসেবে সংরক্ষণ করেছিল রাজউক। ওই প্লটের দুই বিঘা নীলা দখল করে তৈরি করেছেন পূর্বাচল লেডিস ক্লাব। চারপাশে সীমানা দিয়ে ভেতরে বানানো হয়েছে সুইমিংপুল, অফিসকক্ষ, ব্যায়ামাগারসহ কয়েকটি অবকাঠামো। নীলা নিজেই ক্লাবের সভাপতি। ক্লাবটির সদস্যপদ বিক্রি চলছে তিন লাখ টাকায়। আজীবন সদস্যপদ চার লাখ; আর দাতা সদস্যপদ বেচাকেনা হচ্ছে ছয় লাখ টাকায়। 


এরই মধ্যে ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০০। ক্লাব তদারকির দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদকের কাছে সদস্যপদ কেনার ব্যাপারে কথা বলতে নীলার স্বামী শাহ আলম ফটিকের মোবাইল ফোন নম্বর দেন। ফোন করা হলে শাহ আলম বলেন, 'এটা এখন আর আমি দেখছি না। এ দায়িত্ব রিয়াকে দেওয়া হয়েছে।' পরে ফোনে যোগাযোগ করলে পূর্বাচল লেডিস ক্লাবের সেক্রেটারি তাহরিয়া আলম রিয়া কিছু বলতে রাজি হননি।

 

এ ব্যাপারে ফেরদৌসী আহমেদ নীলা বলেন, 'প্রতিবন্ধীদের জায়গা দখল করিনি। পাশের একটি আবাসিক প্লট আমার বাবার। সেটাতে ক্লাবের কার্যক্রম চলছে।' আবাসিক প্লটে ক্লাব কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আপাতত এখানে চলছে। ওই সড়কেই ক্লাবের জন্য জায়গা নেওয়া হয়েছে। পরে সেখানে স্থানান্তর হতে পারে।'


তবে পূর্বাচলের সাবেক প্রকল্প পরিচালক উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, 'পূর্বাচল লেডিস ক্লাব নামে কোনো জায়গা রাজউক বরাদ্দ দেয়নি। যদি এটা কেউ করে, তাহলে উন্মুক্ত স্থান বা অন্যের প্লট দখল করে করা হয়েছে।'


রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, 'এই নীলার নাম আমি আরও অনেক শুনেছি। তাঁর কিছু স্থাপনা বিভিন্ন সময় উচ্ছেদও করেছে রাজউক। প্রতিবন্ধীদের খেলার জায়গা দখল করে ক্লাব করলে সেটাও উচ্ছেদ করা হবে।'


সরেজমিনে দেখা যায়, লেডিস ক্লাবের পাশেই ১০ কাঠার মতো আয়তনে প্রতিবন্ধীদের খেলার জায়গা হিসেবে একটি সাইনবোর্ড আছে। স্থানীয়রা জানান, ক্লাবের জায়গার প্রায় পুরোটাই প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ ছিল।


কনভেনশন সেন্টারের প্লটঃ ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে একটি কনভেনশন সেন্টারের জন্য জমি বরাদ্দের আবেদন করেন কফিল উদ্দিন ভূঁইয়া, মোজাহারুল হক ও হুমায়ুন কবির। ওই বছরের ২৩ নভেম্বর প্লটের জামানতের ১৫ লাখ টাকাও জমা দেন তাঁরা। বোর্ড সভায় অনুমোদনের পর ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর ১ নম্বর সেক্টরের ২০৪ নম্বর রোডের ৩ নম্বর প্লটটি কনভেনশন সেন্টারের জন্য বরাদ্দ দেয় রাজউক। প্লটের আয়তন ৭৬ দশমিক ৮৩ কাঠা। 


প্লটটির বর্তমান বাজারদর প্রায় ১০০ কোটি টাকা। বরাদ্দ পেয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির ১০ কোটি টাকা জমা দেন সংশ্নিষ্টরা। বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা হঠাৎ জানতে পারেন, ফেরদৌসী আলম নীলা 'পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেড' নাম দিয়ে ওই প্লটটি দখল করে নিয়েছেন। আর রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাত করে নতুন নামে সেটা রেজিস্ট্রির অনুমতিপত্রও রাজউক থেকে বের করেছেন। পুরো প্লটটি দেয়াল দিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন নীলা। এর মধ্যেই মূল বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা বিষয়টি নিয়ে রাজউকে যান।

 

পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, 'নীলা যে কীভাবে এ কাজগুলো করল, আমরা বুঝতেই পারিনি। ঘটনা জানার পর আদালতে মামলা করেছিলাম। আদালত রাজউককে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। রাজউক তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায়। তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করলে আদালত এ বিষয়ে নীলার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।'


রাজউকের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য, পূর্বাচল প্রকল্পের সাবেক পরিচালক এবং রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক সংবাদমাধ্যমকে জানান, 'নীলা দুই-নম্বরি করে এসব কাজ করেছিলেন। আমরা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছি। পাশাপাশি ওই প্লটে তৈরি করা অবকাঠামো ভেঙে দিয়েছি। এখন আর মূল বরাদ্দ পাওয়াদের ওই প্লট পেতে কোনো সমস্যা হবে না।'


উজ্জ্বল মল্লিক আরও বলেন, 'একবার পূর্বাচলে প্লট দখল করে তিনি নীলা মার্কেট বানিয়েছিলেন। সেটাও একাধিকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ রকম অসংখ্য অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে আছে।'


রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, 'ঘটনাটি আমিও জানি। রাজউকের পক্ষ থেকে মূল মালিকদের প্লটটি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা চলছে। নীলা আর দখলে রাখতে পারবে না।'


সরেজমিন দেখা যায়, পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের প্লট দখল করে নীলার তৈরি করা অবকাঠামোগুলোর ইট-বালু-সুরকি প্লটের মধ্যে পড়ে আছে। আরেক পাশের দেয়াল এখনও রয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, প্লটটি এখনও নীলার নিয়ন্ত্রণেই আছে।


এ ব্যাপারে দুদকের পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডল এর তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজউকের এস্টেট শাখার কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে উৎকোচ নিয়ে পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেডের নামে বরাদ্দ করা প্লট নিয়মবহির্ভূত ও অবৈধভাবে নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেওয়া হয় 'পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেড'। এ ঘটনায় নীলা ও রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুর রহমানসহ আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে দুদক সম্প্রতি মামলা করেছে।


এ ব্যাপারে নীলা বলেন, 'ওই কোম্পানির আগেই আমি পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেড নামে একটি প্লটের আবেদন করেছিলাম। এ জন্য আগে আমাকেই প্লট দেওয়ার কথা। যখন রেজিস্ট্রি করতে গেলাম তখন দেখি কে বা কারা এ নামে আরেকটি প্লট পেয়েছে। এখন আমিও পাব। প্রয়োজনে তারাও পাবে।'

 

দম্পতির ক্লাব বাণিজ্য ঃ পূর্বাচলের ১২ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডের ৪ নম্বর প্লটটি রাজউক বরাদ্দ দিয়েছিল পূর্বাচল ক্লাবের নামে। প্লটটির আয়তন ১৪৭ দশমিক ১৩ কাঠা। ওই জমির বর্তমান বাজারদর প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ক্লাবের জমির বিপরীতে ১৪ কোটি ৭১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জমা দেয় ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌসী আহমেদ নীলা। তাঁর স্বামী শাহ আলম ফটিক হলেন কোষাধ্যক্ষ। 


নামসর্বস্ব একটি কমিটি থাকলেও পুরো নিয়ন্ত্রণই নীলা দম্পতির। বর্তমানে ক্লাবের সদস্যপদ বিক্রি হচ্ছে ২৫ লাখ টাকায়। এরই মধ্যে প্রায় এক হাজার ব্যক্তিকে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। তবে ক্লাবের সদস্যদের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই।


সদস্যদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠার পর গত আট বছরে ক্লাবের কোনো সাধারণ সভা হয়নি। ক্লাবের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব কখনোই সদস্যদের দেওয়া হয় না। ক্লাবের ভেতরের জায়গায় প্রতিদিনই সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। এ খাত থেকেই প্রতি মাসে অন্তত ৪০ লাখ টাকা আয় হয় ক্লাবের। এই টাকার পুরোটাই আত্মসাৎ করে নীলা দম্পতি। কখনোই কোনো হিসাব দেওয়া হয় না। ক্লাবের এক কর্মচারী জানান, তাঁদের ক্লাবের এক বেলার ভেন্যু ভাড়া ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্যান্ডেল তৈরিসহ অন্য খরচ যিনি ভাড়া নেন, তাঁকে বহন করতে হয়।


ক্লাবের এক সদস্য বলেন, ক্লাবের ভেতরে দেয়াল ঘেঁষে থাই পেয়ারার বাগান করেছেন নীলা। এই পেয়ারা বিক্রি করেও বাণিজ্য করেন তিনি। আরেক সদস্য বলেন, প্রথম দিকে সদস্যপদের ফি ছিল পাঁচ লাখ টাকা। কিছু দিনের মধ্যেই সেটা ১০ লাখ টাকা করা হয়। এখন ২৫ লাখ টাকা। 


এক হাজার সদস্যের কাছ থেকে গড়ে ১৫ লাখ টাকা নিলে মোট টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ১৫০ কোটি টাকা। জমির দাম পরিশোধ ও শুধু একতলা একটি অফিসকক্ষ ছাড়া কার্যত ক্লাবের জন্য কোনো কাজই করা হয়নি। যে অবকাঠামো করা হয়েছে, তাতে এক থেকে দুই কোটি টাকা খরচ হতে পারে। বাকি প্রায় ১৩৪ কোটি টাকার হদিস নেই। কখনও সাধারণ সভা না হওয়ায় সদস্যদের ধারণা, এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।


এ ব্যাপারে ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ও নীলার স্বামী শাহ আলম বলেন, কোনো সদস্য যদি অভিযোগ তোলেন, তবে তিনি তাঁর জমা টাকা ফেরত নিতে পারেন। কারও কাছে কোনো অভিযোগ করে লাভ নেই। ২০২৬ সালে ক্লাবের এজিএম (বার্ষিক সাধারণ সভা) হবে। তার আগ পর্যন্ত এই কমিটিই ক্লাব চালাবে।
এ প্রসঙ্গে নীলা বলেন, 'কোনো সদস্যের যদি অভিযোগ থাকে, তাহলে তিনি আমাকে বলতে পারেন। আমি একটা গাছ লাগালাম। আর এটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেল। এসব ঠিক না।'


কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটিঃ ১৯৬৭ সালে স্থাপিত ইউসুফগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজটি পূর্বাচল প্রকল্পের ১ নম্বর সেক্টরে। পূর্বাচল প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সেখানে ১৪৭ কাঠা জায়গা বরাদ্দ দেয় রাজউক। পাশাপাশি একটি তিনতলা ভবনও তৈরি করে দেয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্তত ১ হাজার ২০০। ২০১০ সাল থেকে ফেরদৌসী আহমেদ নীলা ওই ইউসুফগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির পদ দখল করে আছেন। 


প্রতিবছর স্কুলের নামে আশপাশে থাকা খালি প্লটগুলোতে কোরবানির বিশাল পশুর হাট বসান নীলা। এ থেকে কয়েক কোটি টাকা আয় করেন তিনি। স্কুলের নামে হাটটি বসালেও কানাকড়িও স্কুলের তহবিলে দেন না। কলেজের দাতা সদস্য দীন মোহাম্মদ দিলু সমকালকে বলেন, 'পাঁচ বছর আগে উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন- নীলা আর কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি থাকতে পারবেন না। আদালতের সেই আদেশও আমার কাছে আছে।'


এ ব্যাপারে নীলা বলেন, 'এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নের জন্য আমি সব সময় ওপরমহলে দৌড়ঝাঁপ করি। এখন চেষ্টা করছি কলেজটাকে এমপিওভুক্ত করার। সবকিছু আমি করছি। তার পরও যদি দুর্নাম হয়, তাহলে প্রয়োজনে আমি থাকব না।' পশুর হাট বসানোর বিষয়ে তিনি বলেন, 'এটা শিক্ষকরা মিলে বসিয়েছেন। তাঁরা জানেন, হাট বসিয়ে কয় টাকা আয় হয়েছে।'


এ ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ আবদুল হালিম মিয়া বলেন, 'উনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আসছেন।' পশুর হাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কিছু টাকা-পয়সা এবার দেবে বলে আশ্বাস পেয়েছি। তবে এখনও পাইনি।'


উচ্ছেদের পরও নীলা মার্কেটঃ পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়কের পাশে প্রায় ৪০ একর জমি রাখা হয়েছে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের জন্য। সেই জায়গা দখল করে নীলা গড়ে তোলেন 'নীলা মার্কেট'। সেখানে দোকান তৈরি করে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকায় বরাদ্দও দেন তিনি। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে একাধিকবার এসব মার্কেটের অংশবিশেষ উচ্ছেদ করে রাজউক।

 
একদিকে উচ্ছেদ, অন্যদিকে ফের দোকান নির্মাণ করে চালান ব্যবসা। সর্বশেষ রাজউক ক্রীড়া কমপ্লেক্সের জায়গাটি টিন দিয়ে ঘিরে দেয়। এরপর আশপাশে থাকা খালি প্লটগুলো দখল করে আবারও শুরু হয়েছে নীলা মার্কেটের কার্যক্রম। সরেজমিনে দেখা যায়, আবারও সেখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন নামের খাবার হোটেল, কাঁচাবাজারসহ দোকানপাট। দোকানভেদে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া আদায় হচ্ছে নীলার নামে।

 

খাল ও শ্মশানঃ ইউসুফগঞ্জে খালের জমি দখল করে একটি বাড়ি বানিয়েছিলেন নীলা। মাসছয়েক আগে সেটির একাংশ ভেঙে দেয় রাজউক। সম্প্রতি আবার সেটা গড়ে তুলেছেন। ১ নম্বর সেক্টরের ইছাপুর মৌজার মন্দির ও শ্মশানের জন্য জায়গা দিয়েছিল রাজউক। সেই জায়গার একাংশ ও পাশের খালের জায়গা দখল করে স্থাপনা গড়ে তুলেছিলেন নীলা। 


স্থানীয় বাসিন্দারা রাজউককে জানালে সেটা গুঁড়িয়ে দেয় রাজউক। মন্দির ও শ্মশান কমিটির সভাপতি দীপক সাহা বলেন, 'ওরা বলেছিল, ওই জায়গা নাকি রাজউক থেকে তারা বরাদ্দ এনেছিল। আসলে ঠিক না। পরে আমাদের মন্দিরের বাইরে যেখানে অবকাঠামো বানিয়েছিল, সেটা ভেঙে দিয়েছে। এখন আর মন্দিরের কোনো সমস্যা নেই।' এ ব্যাপারে নীলা বলেন, 'আমি কখনও শ্মশান-খালের জায়গা দখল করিনি। কারা করেছে, তাও আমি জানি না।'

 

পরিবেশ বিধ্বংসী কয়লা-ইট-বালু-পাথরঃ ৪ নম্বর সেক্টরে গোটা পঞ্চাশেক প্লট দখল করে নীলা বছরের পর বছর কয়লার ব্যবসা করে আসছিলেন। কয়লার কারণে আশপাশে মানুষের বাস করা কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। গত ৩১ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রে 'কয়লায় অচল পূর্বাচল' প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাজউক অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করে। 


কিছুদিন কয়লার ব্যবসা বন্ধ থাকে। পরে ওই জায়গায় এখন চলছে ইট-বালু-পাথরের ব্যবসা। বড় বড় ব্যবসায়ীকে এসব ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছেন নীলা। বিনিময়ে ওই সব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা।


এ ব্যাপারে নীলা বলেন, 'আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সাতবারের জনপ্রতিনিধি আমি। এসব বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করা মানায় না। আমি অনেক ভালো কাজ করেছি। সেগুলো আপনারা দেখেন না। ভালো কাজগুলোও দেখতে হবে। এক দিন অনেক সময় নিয়ে আমার সঙ্গে বসেন, আমি কী কী ভালো কাজ এলাকার জন্য করেছি, সেগুলো বিস্তারিত আপনাকে দেখাব।’ (তথ্যসূত্রঃ দৈনিক সমকাল) জেসি / এন এইচ
 

এই বিভাগের আরো খবর