শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রূপগঞ্জে জীবিকায় ঝুঁকছে শিক্ষার্থী

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২১  

গত ২০২০ এর মার্চ থেকে অদ্যবদি চলছে করোনা মহামারি পরিস্থিতি। নতুন করে বেড়েছে ২৩ মে পর্যন্ত লকডাউন।  তাই দীর্ঘধরে   শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা রয়েছে চরম বিপাকে। অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায়। পাঠদান চাপ না থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই টিভি দেখে, কিংবা মা বাবার মোবাইল নিয়ে খেলা বা নেট আসক্তিতে যুক্ত হয়ে গেছে। এদের মাঝে ব্যতিক্রম শিক্ষার্থীর খোঁজ পাওয়া গেছে। বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলে দেয়া ভোজ্য তেলের ৫ লিটারের বোতল কেটে টব তৈরি করে তাতে মাটি ভরে নানা ফসল ও ফুল চাষে সময় পার করতে দেখা গেছে। 


উপজেলার মধুখালী এলাকার শিক্ষার্থী মাহিরা তাসফি। স্থানীয় আব্দুল হক ভুঁইয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া সে। লেখা পড়ার চাপ নেই তাই অবসর কাটে কৃষি কাজ করে। বাকি সময় মায়ের কাজে সহযোগীতা আর টিভি দেখে। মাঝে মাঝে হাতের লেখা আর খেলা করা। ব্যক্তিগতভাবে ঘরোয়া লেখা পড়া করলেও তাতে নেই প্রাতিষ্ঠানিক রুটিন বা কর্মসূচী। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন থাকায় এমন অনিয়মিত দিনযাপনে অভ্যস্থ সে। তবে বাড়িতে জমানো ৫ লিটার খালি প্লাস্টিকের বোতল কেটে টব তৈরি করে তাতে মাটি ও জৈব সার মিশিয়ে করা হয়েছে কৃত্রিম কৃষি খেত৷ এতে রোপন করা হয়েছে ঢেঁড়স,  পুঁইশাক, পুদিনা পাতা। এছাড়াও শসা, মিষ্টি কুমড়ার চারাও শোভা পাচ্ছে। বর্তমান বাজারে পুদিনা ও ধনে  পাতার ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ পাতা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেছে সে।  এছাড়াও এ্যালোভেরা চারা লাগানো হয়েছে হাজারের অধিক। সব কৃষি ফসলই সে চাষ করেছে ফেলে দেয়া বোতলে। ইতোমধ্যে এসব চারায় সব্জিও উৎপাদন হয়েছে। 


এসব বিষয়ে কথা হলে মাহিরা তাসফি জানান, ইউটিউবে ঘরোয়া চাষাবাদ বিষয়ে জেনেছি। তাছাড়া মায়ের কাছ থেকে কিছু শিখেছি। সব মিলিয়ে আমার লাগানো চারায়  সব্জি ও ফসল ভালো ফলায় বুঝতে পেরেছি আমি সফল। আমি মনে করি কোন কিছুই ফেলনা নয়। বাড়ির ফেলে দেয়া বোতলকে কাজে লাগাতে যেমন পেরেছি, তেমনি তরি তরকারির খোসা পঁচিয়ে জৈব সার তৈরিও করেছি। ফলে বাজার থেকে সার কিনতে হয়নি। একইভাবে পোকামাকর দমনে জৈব কীটনাশক নিজেই তৈরী করেছি। এসবের মাঝে ফাঁদ পদ্ধতি আর নিম পাতা দিয়ে কীটনাশক খুবই ফলপ্রসু।  এসময় তিনি বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে স্কুল বন্ধ থাকায় চরম দুশ্চিন্তায় আছি। লেখা পড়া হচ্ছে না। আমাদের ভবিষ্যত কি হবে জানি না। তাই শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বিকল্প পন্থায় হলেও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া জরুরী।


এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেহা নূর বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যযুক্ত কৃষি বই পড়লেও কৃষি কাজে সফল হবে। এতে ভালো করে চাষাবাদ পক্রিয়া রয়েছে। তবে অভিভাবকদের উচিত শিক্ষার্থীদের দিকে বিশেষ নজর রাখা। নেট আসক্ত হয় এমন কাজ থেকে দূরে রাখা জুরুরি। 


এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক  শিক্ষার্থীদের মাঝে ছেলেরা পাড়া মহল্লায় আড্ডায় জড়িয়ে বিপথে চলে যাচ্ছে। তাদের মাঝে নেট আসক্ত আর নেশায়সক্ত হয়ে পড়েছে কেউ কেউ। আবার অনেকেই তাদের বাবার কাজে সহযোগী করছে। এদের মাঝে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা জীবিকার তাগিদে আয় উপার্জনের  কাজে যুক্ত হতে দেখা গেছে। এমন এক শিক্ষার্থী দাউদপুরের বেলদী এলাকার উজ্জ্বল হোসেন। তিনি বেলদী মাদরাসায় ৯ম শ্রেণির ছাত্র। করোনাকালীন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ইট বহনের ট্রলি চালানোর কাজে যুক্ত সে। এছাড়াও পিতলগঞ্জের ৮ম শ্রেণির অমিত নামের এক শিক্ষার্থী শীতলক্ষ্যায় ট্রলার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।


এসব বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, শিক্ষার্থীদের অবশ্যই পাঠদানে ধরে রাখতে হবে। নয়তো তরুণ প্রজন্মের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। 
 

এই বিভাগের আরো খবর