শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রূপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২১  

রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌর এলাকায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গ্যাসের বৈধ গ্রাহকের চেয়ে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌর এলাকার বৈধ/অবৈধসহ ৬ হাজার ব্যবহারকারী। গত ১৫ মে থেকে কাঞ্চন পৌর এলাকায় গ্যাস সরবরাহ একেবারেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্যাস সরবরাহ চালু না করলে সড়ক অবরোধসহ বৃহৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন গ্রাহকরা। 


তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, কাঞ্চন পৌরসভা এলাকায় ঝুট মিলসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৬ ইঞ্চি ও ৮ ইঞ্চি ব্যাসের ১৫০ পিএসআইজি তিতাস গ্যাসের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। পরে এসব পাইপ লাইনে ১৫০ পিএসআইজি প্রেসার থেকে ৫০ পিএসআইজি প্রেসারে নিয়ে আসা হয়। আর ৫০ পিএসআইজি প্রেসারে আবাসিক সংযোগ নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদন দেয়া যায়। পরে কাঞ্চন পৌর এলাকায় তিতাস গ্যাস কোম্পানি বিতরণ লাইন ও আবাসিক সংযোগের অনুমতি দেন। এরপর গত প্রায় দশ বছর আগে কাঞ্চন চিনতলা, খাঁপাড়া, কৃষ্ণনগর, দক্ষিণবাজার, পুর্বপাড়া, কাঞ্চন দাসপাড়া, নাথপাড়া, কাজীপাড়া, কালাদি, ত্রিশকাহানিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্রাহকদের ব্যক্তিগত খরচে তিতাস গ্যাস কোম্পানি ১ ইঞ্চি ও ২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইন স্থাপন করে দেন।

 

এসব পাইপ লাইন থেকে গ্রাহকদের প্রায় ৫০০ বৈধ আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। এদিকে, বৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার পর হঠাৎ করে সরকার তিতাস গ্যাস সংযোগ অনুমোদন বন্ধ করে দেন। আর বন্ধ করে দেয়ার সুযোগে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ দালালরা সাধারন মানুষের কাছ থেকে গ্যাস সংযোগ দেয়ার নামে জন প্রতি ৫ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে  নেয়। অল্প আয়ের অনেক গ্রাহক গরু-ছাগল বিক্রি করে,  কেউ স্বর্ণালংকার বিক্রি করে, কেউ জমি বিক্রি করে, আবার  কেউ সুদে বা দার- দেনা করে দালাল ও দলীয় নেতাদের হাতে টাকা তুলে দেন। সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে নিজের মতো করে নিম্মমানের পাইপ লাইন স্থাপন করে প্রায় ৫ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। আর এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বৈধ করার প্রতিশ্রতিও দেয়। শুধু তাই নয়, প্রায় ১০টি রেষ্টুরেন্টে অবৈধ ভাবে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। এসব রেস্টুরেন্টে একাধীকবার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে জেল-জরিমানা করলেও পুনরায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ চালু করে ফেলে।

 

গত ১৫ মে থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে বৈধ গ্রাহক ও অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের ক্ষোভের শেষ নেই। গ্যাসের চুলায় রান্না করতে না পেরে খাবার  দোকান গুলোতে ভিড় করছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ মাটির চুলায় রান্না করছেন। আর অপেক্ষা করছেন কখন গ্যাস সরবরাহ চালু হয়। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্যাস সরবরাহ চালু না করলে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে মানববন্ধন কর্মসুচীসহ বৃহৎ আন্দোলন করবেন বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন কাঞ্চন পৌর আওয়ামীলীগ নেতা এমায়েত হোসেন।  

 

খা পাড়া এলাকার বৈধ গ্রাহক রিয়াজ হোসেন জানান, তিনি নিয়মিত গ্যাস বিল দিয়ে যাচ্ছেন। কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে গ্যাস নেই কিন্তু বিল গুনতে হচ্ছে ঠিকই। ত্রিশকাহানিয়া এলাকার আমিনুল ইসলাম জানান, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও দালালরা অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন। প্রতিটি সংযোগে তারা ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন।

 

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিতাস গ্যাসের জোবি সোনারগাঁও যাত্রামুড়া অফিসের ব্যবস্থাপক মেজবাউর রহমান জানান, কাঞ্চনে বৈধ গ্রাহকের তুলনায় অবৈধগ্রাহক বেশি হওয়ায় সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে ৫ শতাধিক আর অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। ঈদের পর থেকে প্রথমে গ্যাসের প্রেসার কমিয়ে দেওয়া হলেও গত তিনদিন ধরে গ্যাসের সরবারহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের ২-৩ বছরের গ্যাস বিল বাকী রয়েছে। তবে বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী যদি নিশ্চয়তা প্রদান করেন কাঞ্চনে কোন অবৈধ সংযোগ থাকতে দিবে না তাহলে তাদের গ্যাস সংযোগ পূনরায় দেওয়া ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ চিন্তা করবে।   


এব্যপারে কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, যদি অবৈধ সংযোগের কারনে গ্যাস বন্ধ করা হয়ে থাকে তাহলে তিতাস গ্যাস কোম্পানি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিক। আমিও এতে সহযোগিতা করবো। আর যারা সাধারণ মানুষের কাছ  থেকে জন প্রতি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে নিয়েছেন বৈধ করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমার কাঞ্চন পৌরসভার বৈধ  গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি।

এই বিভাগের আরো খবর