মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

রূপগঞ্জের গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২১  

দেশে গত কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জের গণপরিবহনে মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। এ ব্যাাপারে দেখার কেহ নেই। তবু দাবড়িয়ে চলছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জেরমহাসড়ক দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহন। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রায়াত্ব গণপরিবহন বিআরটিসিও মানছে না নির্দেশনা। সবচেয়ে বিপজ্জনক চিত্র হলো স্বাস্থ্য বিধি ভঙ্গের। যাত্রীদের মাঝে নেই করোনা বিষয়ক সচেতনতা।  

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঢাকা সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান বাইপাস ছাড়াও পূর্বাচলের ৩শ ফুট সড়কে নিয়মিতভাবে চলছে বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহন। কিন্তু লকডাউনে সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণা থাকলেও তা মানছে না পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ রয়েছে,  গণপরিবহন বন্ধের নির্দেশনাকে  উপেক্ষা করে অবৈধভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিবহণ,শুভযাত্রা পরিবহন, বিআরটিসি, লেগুনা চলছে অসাদু পথ বেয়ে। তারা স্থানীয় ট্রাফিক ও পুলিশকে চাঁদা দিয়ে এসব যান নির্বিগ্নে চালাচ্ছে।

শুক্রবার (০৯ এপ্রিল) জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার গাউছিয়া মার্কেট - বাসস্ট্যান্ড, কাঞ্চন মায়ারবাড়ি, কাঞ্চন ব্রিজ পূর্বাচল এলাকা, তারাবোর বরপা, রূপসী, তারাবো বিশ্বরোড,বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পয়েন্ট সব রকম যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এমনকি যাত্রীদের মাস্ক বিহীনও ঘুরতে দেখা যায়। এসবের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিবহণ ও শুভযাত্রা পরিবহন এমনকি বিআরটিসি বাসের  কোন প্রকার নিয়ম নীতি না মেনেই গাদাগাদি করে যাত্রী তুলে গাউছিয়া থেকে যাত্রাবাড়ি চলাচল করছে অবাধে।  এসব পরিবহণযানে গাড়ীতে ওঠার জন্য যাত্রীরা কোন সামাজিক দূরত্ব মানছে না। ভীর ঠেলে আগের মতোই বেপরোয়া চলাচল দেখা গেছে।  কথা হয় গাউছিয়া থেকে নিয়মিত যাত্রাবাড়ি যাতায়াতকারী  নুরশাহ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকার লকডাউন দিয়েছে কিন্তু শিল্পকারখানা খোলা রেখেছে। ফলে কারখানায় যেতে পরিবহণ ছাড়া কেমনে যাই। তবে লকডাউনে কম বাস চলায় ভীর আরো বেড়েছে। ফলে স্বাস্থ্য বিধি মানার সুযোগ কম।  

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছে- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অথচ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলছে অধিকাংশ মানুষ। বিশেষ করে গণপরিবহনের চিত্র একেবারেই উল্টো। সেখানে চালক, সহকারী ও অধিকাংশ যাত্রী মাস্ক পড়েন না। আবার অনেকে মাস্ক পরলেও তা থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখে। এক সিটে একজন রাখার শর্তে ৬০% ভাড়া বাড়ানো হয় তবে বর্ধিত ভাড়া বেশি নিয়েও দেখা গেছে দাঁড় করিয়ে যাত্রী নিয়ে বাস চলছে। এ পরিস্থিতিতে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান বলেন, যদি কোন পরিবহণ স্বাস্থ্য বিধি না মানেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করে আসছি। এমনকি মাস্ক না পড়ায় জরিমানাও করা হচ্ছে। এদিকে করোনার অযুহাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রাজধানীর কুড়িল থেকে গাউছিয়া রুটে বিআরটিসি এসি বাসের নামে এ পথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় অতিরিক্ত ভাড়া। গোলাকান্দাইল মোড় থেকে এশিয়ান হাইওয়ে দিয়ে পূর্বাচলের ৩শ ফুট সড়ক দিয়ে কুড়িলে চলাচলরত একাধিক ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একাধিক শ্রেণির বিআরটিসি বাস। এর মাঝে আড়াইহাজারের বিষনন্দি ফেরী ঘাট ও কাঞ্চন ব্রিজ থেকে নতুন করে যুক্ত হয়েছে এসিবাস নামের বিআরটিসি সার্ভিস। অভিযোগ রয়েছে গোলাকান্দাইলের হারুন, মুরাদ মিয়া, সৌরভসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এ রুটের কাউন্টার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আবার শুভ যাত্রা পরিবহণের পরিচালক তারাবোর মোহাম্মদ আলীসহ একটি সিন্ডিকেট স্থানীয় ট্রাফিককে চাঁদা দিয়ে তাদের পরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চালাচ্ছেন। এতে কারোরই স্বাস্থ্য বিধি মানার দায় নেই ভাব। তবে মোহাম্মদ আলী দাবী করেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা হয় । তবে গরমের কারনে অনেক যাত্রী মাস্ক ব্যবহার করেন না।  

গোলাকান্দাইল এলাকার আর্টিকুলেট বাস পরিচালক (ঠিকাদার) হারুন রশিদ বলেন, বিআরটিসি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে চালাতে হয় বাস। তাই কিছুদিন বন্ধ রেখেছি। মানুষ আন্দোলন করে আবার বিআরটিসি চালু করে। ফলে ক্ষতি পোষাতে বাড়তি ভাড়া ছাড়া উপায় নেই।    এসব বিষয়ে এশিয়ান বাইপাস সড়কে দায়িত্বরত (টিআই) জহিরুল ইসলাম বলেন, গাউছিয়া থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত এশিয়ান বাইপাস দুইলেনের আর ৩শ ফুট সুপ্রশস্ত। ফলে এশিয়ান বাইপাসে যানজট লেগে থাকা নিত্য ঘটনা। তারউপর লকডাউনেও রুট পারমিট ছাড়া যত্রতত্র বিআরটিসি বাস নামছে এ পথে। ফলে আমরা যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খাই।  

ভুলতা এলাকায় দায়িত্বরত টিআই মনিরুজ্জামান বলেন, পুলিশকে  কোন পরিবহণ থেকে টাকা দেয় আমার তা জানা নেই। যাত্রীদের চাপেই গণপরিবহণ চলছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়।   এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর বাস ডিপোর ব্যবস্থাপক নিহার রঞ্জন বলেন, গাজীপুর বাস ডিপো থেকে কেবল আর্টিকোলেট জোড়া বাস দেয়া হয়েছে। কোন প্রকার অবৈধ লেনাদেনায় কেউ জড়িত নয়। করোনাকালীন সিটি কর্পোরেশনের বাইরে বাস চলাচল করার কথা  জানা নাই। চলে থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা  হবে। তাছাড়া ঠিকাদারের দ্বারা যাত্রী হয়রানী হয়ে থাকলে ওই ঠিকাদারের চুক্তি বাতিল করা হবে। একইভাবে রাজধানীর খিলক্ষেতের  জোয়ারসাহাড়াস্থ এসিবাসের দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক দীপক চাকমা বলেন, যাত্রী হয়রানী বিষয়টা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। 

এই বিভাগের আরো খবর