শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

লঞ্চ ডুবির ঘটনায় পৃথক ৪ তদন্ত কমিটি,  ৮ এপ্রিল গণশুনানী

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০২১  

শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ ডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত  ৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নৌ মন্ত্রণালয়, সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তর,  নারায়ণগঞ্জ জেল প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএসহ ৪টি  তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

 

গতকাল মঙ্গলবার  দুপুরে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবির ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আব্দুর সাত্তার শেখ। এর আগে সোমবার বিকেলে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আব্দুর সাত্তার শেখকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য সচিব বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মো. রফিকুল ইসলাম এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। 

 


কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন সরকার, বাংলাদেশ অভন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি)  প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি)   তোফাজ্জল হোসেন, ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি এবং নৌ পুলিশের একজন প্রতিনিধি। জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রট খাদিজা তাহেরা ববি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, সকল দিক বিবেচনা করেই তদন্তের কাজ শুরু করেছি। সাত সদস্যের এ তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

 


 নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান নৌ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুল ছাত্তার শেখ জানান, আগামী ৮ এপ্রিল সকাল ১১টায় দুর্ঘটনাস্থলে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। গনশুনানিতে দুর্ঘটনায় নিহত পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের অংশগ্রহণে তাদের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। দুর্ঘটনার কারণ ও ঘটনার জন্য দায়ীদের শনাক্ত করার পাশাপাশি এমন দুর্ঘটনা এড়াতে সুপারিশ করবে তদন্ত কমিটি। এদিকে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। যদিও নারায়ণগঞ্জ নৌ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল আলম বলেন, বিআইডব্লিউটিএ একটি এজাহার প্রস্তুত করছেন বলে জেনেছি। মামলা হলে গণমাধ্যমকে অবগত করা হবে। 

 


তবে এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক মাসুদ কামালের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ মালিক সমিতির সুপারভাইজার শেখ জহির রায়হান বলেন, গতকাল দুপুর বারোটার দিকে তিনি লঞ্চ মালিক সমিতির পক্ষে একটি মামলা করতে নারায়ণগঞ্জ নৌ থানায় গিয়েছিলেন। প্রথমে তাদের সদর মডেল থানায় যাবার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে চলে যেতে বলা হয়। ওই ঘটনায় তাদের মামলা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ জহির রায়হানের। ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চ সাবিত আল হাসানের মালিক আলাল হোসেনের মুঠোফোনের নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জহির রায়হান বলেন, ‘উনি ভীতু মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চটি তার একমাত্র লঞ্চ। এতগুলো মানুষ হতাহতের ঘটনায় তিনি অনেক মর্মাহত। তার পক্ষেই আমরা মামলা করতে গিয়েছিলাম।’ প্রসঙ্গত, গত রোববার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৫ টা ৫৬ মিনিটে ‘সাবিত আল হাসান’ বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়ার মাত্র ১৫ মিনিটের মাথায় নির্মাণাধীন শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতু (চায়না ব্রীজ) ৬টা ১০মিনিটে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে লঞ্চটি। এসকেএল-থ্রি (এম ০১২৬১৩) নামের একটি কোষ্টার জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে যাত্রীবাহী জাহাজটিকে ২০০ মিটার টেনে নিয়ে যায়। দুর্ঘটনার মাত্র ১০মিনিট পরে কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়। তবে বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড,  নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উদ্ধার তৎপরতা বেগবান করা হয়। টানা ১৯ ঘন্টার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সোমবার দুপুরে জাহাজটি উপরে তুলতে সক্ষম হন এবং মরদেহগুলো উদ্ধার করেন তারা। সোমবার দুপুরে লঞ্চটি পানির উপরে তুলে আনার পর নিহতের মরদেহ শীতলক্ষ্যার পশ্চিমপাড়ে সৈয়দপুর কয়লাঘাট থেকে মরদেহ গুলো সনাক্ত হওয়ার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর শুরু করে।

এই বিভাগের আরো খবর