Logo
Logo
×

রাজনীতি

শহর-বন্দরে পাত্তাই পেলনা আ.লীগ 

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:৫৫ পিএম

শহর-বন্দরে পাত্তাই পেলনা আ.লীগ 
Swapno

 

# কেন্দ্রের ভরসা অর্জনেও ব্যর্থ
# আ’লীগের বিভেদই জাপাকে শক্তিশালী করছে বলে মনে করা হয়
# জাপা ৫টি আসনে প্রার্থী দিতে পারলেও পারেনি আ’লীগ

 

 

একদিকে নির্বাচনের প্রচারণাসহ ভোটারদের ভোটদানে উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার প্রত্যয়ে নির্বাচনের বিরোধিতা করে যাচ্ছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। সেই বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান যে অনেকটা নির্ভারভাবে নির্বাচন করবেন সেই বিষয়টি স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে অনেকটাই অনুমেয় ছিল।

 

তবে বহু শোষণ ও নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে নৌকার প্রার্থী দেওয়া হবে বলে ধারণা করছিলেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতৃবৃন্দও। এমনকি কেন্দ্র থেকে বিষয়টি মেনে নিয়ে সাড়া দিয়েছেন বলেও দাবী ছিল জেলা পর্যায়ের নেতাদের। তবে দিন শেষে যেই লাউ সেই কদু। অর্থাৎ এবারও এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী নেই।

 

তাই শুধু রাজনীতি নিয়ে যারা কাজ করেন তারাই নয়, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাও মনে করেন, জাতীয় রাজনীতিতে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির বেশ কদর থাকলেও নির্বাচনের সময় এখানকার আওয়ামী লীগের নেতাদের কোন পাত্তা-ই দেন না কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দরবাসীর এই আসনটি আওয়ামী লীগের কাছে সব সময়ই অবহেলিত থাকে বলে মনে করেন তারা।

 

সূত্র অনুযায়ী বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছরের ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জ সদরের এই আসনটিতে মাত্র দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী এবং প্রবীণ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যা এখানকার আওয়ামী লীগের জন্য খুবই হতাশার বলে মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রেমিকগণ।

 

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী পরিবার খ্যাত ওসমান পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের সদস্য একেএম শামসুজ্জোহার হাত ধরে ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে (তৎকালীন ঢাকা-৩০) এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। এরপর ওসমান পরিবারেরই আরেক সদস্য (তৃতীয় প্রজন্মের) একেএম নাসিম ওসমানের হাত ধরে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ সদর-বন্দরের এই আসনটি জাতীয় পার্টির কাছে বিসর্জন দেয় নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ।

 

সেই থেকেই শুরু, এরপর মাত্র একবার এসএম আকরামের হাত ধরে ১৯৯৬ সালে এই আসনটি জয় করতে সমর্থ হয় আওয়ামী লীগ। এরপর আর এখানকার আওয়ামী লীগের ভাগ্যে আসনটি জয় করা সম্ভব হয়নি। অথচ ১৯৮৬ সালের পর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতায় আসে ৪ বার। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন আসলেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতারা কেন্দ্রের কাছে কোন পাত্তা পান না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভক্তরা।

 

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ সদর বন্দরের এই আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেওয়ার দাবি ওঠে। এর মধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনগুলোতেও নেতৃত্ব হারাতে থাকে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে এখানকার জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে এবং আওয়ামী লীগের কিছু স্বার্থবাদী নেতাকে নিজেদের চেলা বানিয়ে পুরো আসনটিকেই জাতীয় পার্টি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।

 

বিশ্লেষকদের মতে এটা অবশ্যই জাতীয় পার্টির সাফল্য এবং আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা। এরপর এখানকার জনপ্রতিনিধি তৈরি থেকে শুরু করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা তৈরিতেও ভূমিকা রাখা শুরু করে জাতীয় পার্টি। এতে বেশ কিছু সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগ নেতা তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে যাদের বলা হয় জাতীয় পার্টি মার্কা আওয়ামী লীগ নেতা।

 

এরপর থেকে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও প্রেমিকগণ ব্যাক ফুটে চলে যেতে শুরু করেন। স্থানীয় জাতীয় পার্টি এবং রাজাকারদের হাতে মার খেতে শুরু করে আওয়ামী লীগ। এরপর গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার দাবি ওঠে খুবই জোরালোভাবে। বিষয়টি নিয়ে জেলা পর্যায়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রের কাছ থেকে সম্মতি পেয়েছেন বলেও জানান।

 

তাই এবারের নির্বাচনে এই আসন থেকে কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দিবেন বলে আশায় বুক বাঁধেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ। সেই আশায় এবার এই আসন থেকে (নারায়ণগঞ্জ-৫) আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন এবং ফরম জমা দিয়েছেন ৬ জন। এরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল (ভিপি বাদল), মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত ও মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জল।

 

কিন্তু দল থেকে সংসদের ৩০০টি আসনের বিপরীতে ২৯৮টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যে দুটি আসনে প্রার্থী দেয়নি তার মধ্যে একটি হলো নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। স্থানীয় রাজনৈতিক বোদ্ধাদের ধারণা সেলিম ওসমানকে সুবিধা দিতেই আওয়ামী লীগের এই আয়োজন। তবে এবারের নির্বাচনে নিজ দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীসহ সহ সকল আসনেই আওয়ামী লীগের শক্তিশালী নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়।

 

কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চাওয়া এই নেতারা কেউ সেই সুযোগ নিতেও সাহস করেননি বলে মনে করেন তারা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অভিযোগ যেহেতু এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষযে দলীয়ভাবে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তাই আওয়ামী লীগ নেতাদের সুযোগ ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের একবার নৌকা প্রতীকের ভোট প্রদানের সুযোগ করে দেওয়া।

 

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের আওয়ামী লীগ ভক্ত ও সমর্থকরা হতাশা প্রকাশ করে বলেন আমরা দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ যাবৎ নৌকা প্রতীকে সীল মারার কোন সুযোগ পাইনি। এখানকার নতুন প্রজন্মের কারও এখনও নৌকা প্রতীকের নির্বাচন চাক্ষুস করার সৌভাগ্য হয়নি বলে জানান তারা।

 

তাই এবারের নির্বাচনে একজনও যদি সাহস করে আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিত, তাহলে এই আসনের অবহেলিত ও নিষ্পেষিত আওয়ামী লীগের ভক্তসহ নতুন প্রজন্ম বঙ্গন্ধুর ঐতিহাসিক এই প্রতীকে সীল মারার সুযোগ পেত বলে মনে করেন তারা। এস.এ/জেসি 

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন