শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শহীদ নগরের চুনকা স্টেডিয়াম এখন মাদকের হাট!

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০২১  

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ডের শহীদ নগর এলাকায় অবস্থিত নাসিকের আলী আহম্মদ চুনকা স্টেডিয়াম এখন মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দিনে ও রাতে প্রকাশ্যে এই খেলার মাঠটিতে মাদক বিক্রি হয়। হাত বাড়ালেই ইয়াবা, গাঁজা, এমনকি ফেনসিডিলের মতো ভয়ানক মাদক পাওয়া যায় এখানে।

 

তবে প্রশাসনের তেমন নজরদারী না থাকায় দিন দিন এই এলাকাটিতে মাদকের বিক্রি বেড়েই চলছে। এতে শহীদনগর ছাড়াও এর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে এসব মাদকের ভয়াবহতা। এদিকে মাদক সেবনের ফলে গত বেশ কয়েক বছরে শহীদনগরের অসংখ্য উঠতি বয়সী যুবক অতিমাত্রায় নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে বলেও জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

 


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর বাপ্পী সড়ক হয়ে দক্ষিণ দিকে তামাক পট্টি ব্রীজ পাড় হলেই শহীদনগরের ১নং গলি। আর এই ১নং গলির পশ্চিম দিকের সর্বশেষ সীমানায় অবস্থিত আলী আহম্মদ চুকনা স্টেডিয়াম। এখানে বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় মাদক ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা। মূলত রাত ৭টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দলে দলে ভাগ হয়ে এই মাঠের বিভিন্ন আনাচে-কানাচে ইয়াবা ও গাঁজাসহ নানান মাদকদ্রব্য বিক্রি করা হয়।

 

এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে শহীদ নগরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মাদক বিক্রেতাদের সহযোগীরা বেশ তৎপরও থাকে। হঠাৎ পুলিশ অথবা ডিবির উপস্থিতির টের পেলেই এসব সহযোগীরা স্পটে খবর পৌছে দেয়। এতে মূহুর্তের মধ্যেই সকল মাদক বিক্রেতারা দলবল নিয়ে সটকে যায়।
অন্যদিকে স্থানীয়রা জানায়, শহীদ নগরসহ ১৮ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার যুবকদের খেলাধুলার জন্য নাসিক, বছর সাতেক আগে এই মাঠটি নির্মাণ করেছে। অথচ খেলাধুলার আড়ালে এখানে দিবারাত্রি চলে মাদকের রমরমা ব্যবসা।

 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহীদনগর এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, গত ৫-৬ বছর আগেও আমাদের এই এলাকায় মাদকের কোন ছিটে ফোঁটাও ছিলোনা। তবে এখন প্রায় অধিকাংশ বাড়ির যুবকরাই বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। আসলে আমাদের শহীদ নগরের এই মাঠটিতেই সবচেয়ে বেশি মাদকের বিক্রি হয়। স্থানীয় কিছু কিছু অল্প বয়সী যুবকই এর সাথে জড়িত। সেইসঙ্গে বাহির থেকে অপরিচিত লোকজন এসেও এখানে ফেনসিডিলের ব্যবসা করে।

 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহীদনগর পঞ্চায়েত কমিটির এক সদস্য বলেন, মাদকের কথা বলে আর লাভ নেই! ১৫ থেকে ১৭ বছরের ছেলেরাও এখন মাদকাসক্ত। মাদক সেবনের ফলে অল্প বয়সেই ছেলেরা লেখাপড়া ছেড়ে দিচ্ছে। কাজকর্মেও যেতে চায়না। সারাদিন নেশায় বিভোর হয়ে থাকে। আর এর মূল কারণ হচ্ছে, আমাদের এলাকার আলী আহম্মদ চুনকা স্টেডিয়ামে প্রচুর মাদক বিক্রি হয়। আমরা সকলেই এটার বিরুদ্ধে অনেক সময় প্রতিবাদ করতে চাইলেও পারিনা। কারণ মাদক ব্যবসায়ীদের-তো বুকপিঠ নেই, তারা কখন কি করে বসে সেটা বলা যায়না! তবে বিষয়টি আমরা আমাদের কাউন্সিল সাহেবকে জানিয়েছি, তিনি বলেছেন একটা কিছু করবেন।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নাসিকের ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবির হোসেন বলেন, ‘ শহীদ নগরের আলী আহম্মদ চুনকা স্টেডিয়ামে মাদক ব্যবসার জন্য স্থানীয় লোকজন আমার কাছে অভিযোগ করেছে। তাই তাঁদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি, নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় গত মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিং’র মধ্যেও এই বিষয়টি তুলে ধরেছি। সেখানে কে কে মাদকের ব্যবসা করে তাদে নাম তালিকা দিয়েছি। তখন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসিও উপস্থিত ছিলেন। তাই আশা করি প্রশাসনের লোকজন দ্রুতই বিষয়টিতে নজর দেবেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহজ্জামানের সাথে এ নিয়ে কথা বলতে তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও, তিনি ফোন ধরেনি।
 

এই বিভাগের আরো খবর