বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শামীম ওসমানের অস্ত্র নিয়ে বক্তব্যের পাল্টাপাল্টি রাজীব-রিয়াদ

প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২০  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : পুলিশ লাইনসে রোববার পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’র অনুষ্ঠানে অস্ত্র নিয়ে এমপি শামীম ওসমানের দেয়া বক্তব্য ও পরবর্তীতে স্বাক্ষাৎকারে নানা যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টার সমালোচনা করেন বিলুপ্ত জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব। রাজীবের ৩ মার্চের ওই স্ট্যাটাসের বিরুদ্ধে পাল্টা স্ট্যাটাস দিয়ে রাজীবের সমালোচনা করেছেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও তোলারাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ। ৪ মার্চ রাজীবের সমালোচনা করে পাল্টা স্ট্যাটাস দেন রিয়াদ। 

 

স্টাটাসে রিয়াদ লিখেন, সাবেক সন্ত্রাসী ছাত্রদল নেতা রাজিব সাহেবকে বলবো :- ১৯৭৫ সালে জাতিরজনককে হত্যার পরে মাদক, অস্ত্র, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলার ত্রাস তৈরি করেছিল বিএনপি। ১৯৯১ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের কেউ বাসা থেকে বের হতে পারতোনা, এলাকায় আসতে পারতো না বিএনপির সন্ত্রাসীদের কারণে। নারায়ণগঞ্জে অস্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছিল বিএনপি, রাজিবগং। জননেতা একেএম শামীম ওসমান সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসিদের নিয়ে এসব সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করেছেন। তখন সাধারণ মানুষ স্লোগান দিত বিএনপির ৫ এমপির দুলাভাই শামীম ভাই শামীম ভাই। বিএনপির সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলায় ২০০১ সালে বিএনপির মদদে চাষাড়া আওয়ামীলীগ অফিসে আরডিএক্স গ্রেনেড হামলা, ২০০৪ সালে আওয়ামীলীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলাই প্রমাণ করে বিএনপি কত বড় সন্ত্রাসী দল। এতে প্রাণ দিয়েছে অনেক মানুষ। বিএনপির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বাবর, তারেক রহমান ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও  গ্রেনেড হামলা মামলার মুল আসামী।

রিয়াদ লেখেন, রাজিব হচ্ছেন ওই দলের  নেতা তার ইতিহাস সবাই জানে। ২০০১-০৫ সাল  তোলারাম কলেজে করেছিল মাদক, ধর্ষণ, ছাত্রছাত্রীদের নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীদের আড্ডাখানা এসব অপকর্মের মূল হোতা ছিলেন রাজিব। বছরখানেক আগে ডিবির হাতে মাদকদ্রব্য ও  ফেন্সিডিল নিয়ে গ্রেফতার হয়ে জেল খাটেন। শহরে অনেকেই জানে মাদক ও ফেন্সিডিল তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।এখন তিনি খুব সুশীল কথা বলেন ব্যাপারটা হাস্যকর। রাজিব সাহেবদের অপকর্মের ফাইল খুললে হয়তো শহরে আর থাকা হবে না।আপনাদের অপকর্ম কলেজের শিক্ষার্থীরা ভুলেনি। তাই আউট।

শামীম ওসমান এমপি মহোদয় বুঝিয়েছেন সেইসব সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করে একটি শান্তিময় নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলেছি। আর সাবেক সন্ত্রাসী ছাত্রদল নেতা তার ভুল ব্যাখ্যায় মেতে উঠেছেন। তাদের দলের এটাই মূল শিক্ষা সেটা হল মিথ্যাচার।

 

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমপি শামীম ওসমানের অস্ত্র নিয়ে দেয়া বক্তব্যকে ঘিরে একটি পোস্ট দেন রাজীব। সেখানে তিনি লিখেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই মাননীয় এক সংসদ সদস্যের অস্ত্র নিয়ে একটি বক্তব্য বেশ আলোচিত সমালোচিত হচ্ছে। উনি বলেছিলেন, উনার কাছে যতোগুলো অস্ত্র ছিল, পুলিশের কাছেও ছিলনা। তারপর উনি সেগুলো ২০০১ সালে পরে সংশোধন করে বলেছেন ৯১ সালে সে সময়ের পুলিশ সুপারের কাছে জমা দিয়েছেন আজ এক সংবাদমাধ্যমে দেখলাম। উনি অস্ত্র ভান্ডার বলতে বিশাল কর্মী বাহিনীকে বুঝিয়েছেন তাহলে ঐ সময়ে কি জমা দিয়েছিলেন অস্ত্র না কর্মীবাহিনী? আসলে সত্য অনেক সময় নিজের অজান্তেই বের হয়ে যায়। কারণ সত্য যতই নির্মম হউক না কেন সেটা সবসময়ই সুন্দর।

রাজীব লেখেন, আমার মতে উনি ঐ অনুষ্ঠানে যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং ২০০১ সাল উল্লেখ করেছেন পুরোটাই সত্যি কারণ ২০০১ সালের পর অস্ত্রের রাজনীতি করার আর সুযোগ ছিলনা। এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই যে একসময় নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশেই অস্ত্রের রাজনীতির রেওয়াজ ছিল। আমি নিজে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম ১৯৯৯ সালে। তখন মিনিমাম ৩০/৪০ জন অস্ত্রধারী আমাকে ঘিরে গুলি করেছিল। ৯১,৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আতঙ্কের নগরী ছিল নারায়ণগঞ্জ। এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে দেশনেত্রীর ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষে দলমত নির্বিশেষে অস্ত্রের রাজনীতি বন্ধের জন্য উনি ছিলেন কঠোর এবং বদ্ধপরিকর। পরবর্তীতে র‌্যাব তৈরী করে পুরোপুরি নির্মূল করেছিলেন যার ধারাবাহিকতা আজও অনেকাংশে বিদ্যমান। মানুষ এবং তার মানুষিকতা পরিবর্তনশীল। 

 

রাজীব লেখেন, ৯৬ থেকে ২০০১ এই সাংসদের শাসনামলের সাথে যদি ২০০৮ থেকে অদ্যবধি শাসনামলের বা বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের প্রতি আচরণের তুলনা করা হয় (পুলিশ ব্যতিত) তাহলে আমার দৃষ্টিতে সেটা আকাশ-পাতালের মত পার্থক্য মনে হবে। ২০০৮ এর পর আজ অবধি উনার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আচরণ ছিল সৌহার্দ্যপূর্ন হয়তো আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা বিশ্বাস বেড়ে যাওয়ার কারণে। তাই সত্য স্বীকার করা এবং বলার সাহস সব রাজনীতিবিদের মাঝে তৈরী হউক এটাই প্রত্যাশা। সবশেষে সত্য স্বীকার করা আর এখন আল্লাহর উপর অনেক আস্থা রাখেন এই কথা বলার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

প্রসঙ্গত, ১ মার্চ পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’তে পুলিশ লাইনসে শামীম ওসমান দাবি করে বলেন, ‘২০০১’র শামীম। নারায়ণগঞ্জ পুলিশের টোটাল ফোর্সের কাছে যা অস্ত্র ছিলো, তার চেয়ে বেশি আমার কাছেই ছিলো। মিথ্যা কথা বলে লাভ নেই! কিন্তু আজকে আমার গাড়িতেও অস্ত্র আছে কিনা আমি জানি না।’ 


 

এই বিভাগের আরো খবর