বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শামীম ওসমানের কপালে চিন্তার ভাঁজ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২২  

 

# তৃণমূলকে সংগঠিত করতে ব্যস্ত দু’জনই

 

বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিশাল জনসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে অনেক আগেই। এরআগে বিএনপি বিভাগীয় শহরগুলোতে তার জনসভা করে শক্তিমত্তা বাড়ানোর প্রচেষ্টা করেছে।

 

 

নারায়ণগঞ্জ ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার। আর তাই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নারায়ণগঞ্জকে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়। তবে আশ্বর্যজনকভাবে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান দিয়ে যাচ্ছেন।

 

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কিংবা মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে কোন ধরণের ভ্রুক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। তাই আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ে সক্রিয়তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা সময়ক্ষেপণ করছেন। আর এটি নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের দৈন্যতার চিত্রই ফুটে উঠছে।

 

 

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জেলা সম্মেলনের আগে সাংসদ শামীম ওসমান প্রায়শই নানা সভায় নেতাকর্মীদের সামনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কিংবা স্থানীয়দের নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে।

 

 

তখন আওয়ামী লীগেরই একাধিক অংশ মনে করতো মূলত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হতেই শামীম ওসমান এসব বক্তব্য দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।

 

 

সময় গড়িয়েছে, জেলা কিংবা মহানগর আওয়ামী লীগের অন্য কোন নেতা শামীম ওসমানের ন্যায় বিএনপিকে টার্গেট করে কোন বক্তব্য দেননি। কিংবা কোন ধরণের আহবানও জানাননি। এদিকে কিছুদিন গ্যাপ দিয়ে আবারো বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে মাঠগরম করতে মাঠে নেমেছেন শামীম ওসমান।

 

 

এবারও তিনিই বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে নারায়ণগঞ্জে মুখ খুলেছেন। জেলা পরিষদের নবনির্বাচিতদের দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানেও শামীম ওসমান বিএনপির আসন্ন কর্মসূচিগুলো নিয়ে কথা বলেছেন।

 

 

তবে অনেকে বলছেন, শামীম ওসমান শুধু যে বিএনপির উদ্দেশ্যে কথা বলেছেন, এমনটি নয়। তার মূল কারণ শামীম ওসমান মূলত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে তার অতীতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী গিয়াসউদ্দিনকে উদ্দেশ্য করেই কথা বলছেন। কেননা, সম্প্রতি জেলা বিএনপির আহবায়ক হিসেবে সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন দায়িত্ব পেয়েছেন।

 

 

আর তার দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর তাই শামীম ওসমান গিয়াসউদ্দিনকে নিয়ে একটু বিচলিত। কারণ ২০০১ সালে আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়েই বাজিমাত করেন গিয়াসউদ্দিন। তার কাছেই শামীম ওসমান রাজনীতিতে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ পান।

 

 

আর একারণে আগামী নির্বাচনে গিয়াসউদ্দিন যে মোটেও সহজ প্রতিপক্ষ নয় সেটি নিজেও মানেন। আর তাই শামীম ওসমান জেলা পরিষদের অনুষ্ঠানে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার দরুণ বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া তৈমূর আলম খন্দকারের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেণ সাব্বির আলমকে নিয়ে।  

 

 

শামীম ওসমান তার বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জে অনেক খুনীদের আস্ফালন দেখছি। বিএনপি নেতা তৈমূর ভাইয়ের ছোট ভাই সাব্বিরকেও হত্যা করা হয়েছিল মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায়। আমাদের কর্মীদের মারা হল আমার বড় ভাইয়ের ওপর হামলা নির্যাতন হল। আমরা কাউকে টাচ করিনি, কাউকে মিথ্যা মামলাও দেইনি।

 

 

শামীম ওসমান ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী গিয়াসউদ্দিনের প্রতি ইঙ্গিত করে নির্বাচনের ব্যাপারে বলেন, আমি ভোটে পাশ করেছিলাম। নেত্রী বলেছিলেন ঢাকা বিভাগে একমাত্র তুমি পাশ করেছো। সেখানে আমাদের নেতাদের গণহারে গ্রেফতার করা হল। আমরা এগুলো মোকাবিলা করেছি। ঢাকায় আমার বাড়ির পেছনে গর্ত করে ঢোকা হয়েছিল। পরে আমার ফলাফল বদলে দেয়।

 

 

শামীম ওসমানের এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, বর্তমানে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল শামীম ওসমান। গিয়াসউদ্দিনকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ভেবেই মাঠে তাকে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিয়ে নামবার আভাসই দিয়েছেন শামীম ওসমান।

 

 

তিনি বিএনপি কর্মীদেরও আগামী ১০ ডিসেম্বরের প্রোগ্রামের ব্যাপারে সতর্ক করে দেন ।শামীম ওসমান বলেন, বিএনপি নেতাদের বলতে চাই আপনারা ক্ষমতার কাছেও আসবেন না। আপনারা আপনাদের পলাতক নেতার নির্দেশে মাঠে লাফাচ্ছেন।

 

 

মিষ্টির দোকানের সামনে বড় তাওয়া থাকে। সে তাওয়া চুলায় বসিয়ে গরম করা হয়। গরম হওয়ার পরে সেটায় পরোটা দেয় এক সেকেন্ডে হয়ে যায়। আপনারা তাদের তাওয়া। আপনাদের গরম করে তারা খেলছে। বিএনপিতে এখন আম্মা গ্রুপ ও ভাইয়্যা গ্রুপ। যে মায়ের চিন্তা করে না দেশের চিন্তা কী করবে। এ শক্তির সাথে আমাদের লড়াই করতে হবে।

 

 

রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, জেলা বিএনপির দায়িত্বে গিয়াসউদ্দিন আসার পর থেকেই শামীম ওসমান তার কর্মীবাহিনী নানাভাবে আগের তুলনায় সক্রিয় হয়েছেন।আওয়ামীলীগের অন্যান্য নেতারা বসে থাকলেও সরব হতে চাইছেন শামীম ওসমান। গিয়াসউদ্দিনও হাত গুটিয়ে বসে নেই। জেলা বিএনপির দায়িত্বে আসার পর থেকে পুরো নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা চষে বেড়াচ্ছেন।

 

 

দফায় দফায় নেতাকর্মীদের সাথে বসছেন। তৃণমূলকে একত্রিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। অতীতের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাগুলো দিয়ে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। তবে গিয়াসের দায়িত্ব পাওয়া যে শামীম ওসমানের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে তা নিয়ে দ্বিমত করেননা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর