বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

শামীম ওসমানের সামনে গিয়াসউদ্দিন চ্যালেঞ্জ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩  

 

# ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জে বর্তমান সাংসদকে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে
# ব্যক্তি ইমেজ ও দলে গ্রহণযোগ্যতার দরুণ সুবিধাজনক অবস্থানে সাবেক সাংসদ

 

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢামাঢোল বেজে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী কৌশল ঠিক করতে ব্যস্ত। সবগুলো রাজনৈতিক দলের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ জেলা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাথে তুলনা করলে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৪ (সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা) আসনে। আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত একেএম শামীম ওসমান এই আসনে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচনে বলতে গেলে তেমন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হননি। তার রাজনৈতিক জীবনে নির্বাচনের দুটি বড় পরাজয়ের একটি এই আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিনের কাছে।

 

অপরটি নিজ দলের নেত্রী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে ২০১১ সালে সিটি নির্বাচনে। এই সিটি নির্বাচনের ১০ বছর আগে ২০০১ সালে গিয়াসউদ্দিনের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ধরাশয়ী হয়েছিলেন শামীম ওসমান। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির সবচাইতে সুবিধাজনক অবস্থানে এসেছেন সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। সর্বশেষ গতবছরের শেষ সময়ে জেলা বিএনপির আহবায়কের পদ দিয়ে বিএনপি তাকে আরো শক্তিশালী করেছে। আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা এলাকা তো বটেই নারায়ণগঞ্জে জেলা বিএনপির কার্যক্রমের চিত্রই বদলে গেছে। আর এতেই নির্বাচনের অনেকটা সময় আগেই চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে আওয়ামীলীগের সাংসদ শামীম ওসমানের উপর।

 

দুটি রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান সাধার সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। ওই কমিটিতে সহসভাপতি ছিলেন ব্যবসায়ী শাহ আলম। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন শাহআলম। জেলা বিএনিপর তৎকালীন দুই নেতাও তার পক্ষেই কাজ করেছিলেন। জেলা বিএনপির তৎকালীন নেতারা অনেকটা এড়িয়েই চলতেন সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিনকে। আর এই সুযোগটাইতে উপকৃত হয়েছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা শামীম ওসমান। শেষ পর্যন্ত গিয়াসউদ্দিন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র কিনলেও বাধা বিপত্তির পরও বৈধতা অর্জন করেও শেষ মুহুর্ত্বে নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। অপরদিকে শাহ আলম নির্বাচনে মনোনয়ন পেলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে অজানা মনির হোসেন কাশেমীকে চূড়ান্ত প্রার্থী বানায়। আর যার সুবাধে এই আসনের আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী প্রার্থী শামীম ওসমানের জয়ের ব্যাপারটি সহজ হয়।

 

অপরদিকে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনের দরুণ সুযোগ পায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী শামীম ওসমান। ব্যবসায়ী বিএনপি নেতা শাহ আলমকে প্রার্থী করায় ওই নির্বাচনে জয়টা সহজ হয় শামীম ওসমানের জন্য। আর এদিকে ওই নির্বাচনের পর থেকে নারায়ণগঞ্জে চূড়ান্তভাবে এলোমেলো হতে শুরু করে বিএনপির রাজনীতি। রাজনৈতিক বোদ্ধামহলের মতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছে নির্বাচন কমিশন। যদিও ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ১০ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক মহল।

 

ইভিএমে ভোট নিয়ে নানা শঙ্কার কথা উঠলে অর্থনৈতিক ক্রাইসিসের কারণ দেখিয়ে মোটাদাগে ইভিএমে নির্বাচনের জন্য ইভিএম ক্রয়ের সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল চাইছে ১০ দফা দাবি আদায়ে রাজপথে মাঠে নামতে। আওয়ামীলীগও তার অতীত উন্নয়ন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে মাঠে নামার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই সময়ে নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য নির্বাচনী আসনের তুলনায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে বিএনপি।

 

গিয়াসউদ্দিন এবং গোলাম ফারুক খোকনকে জেলা বিএনপির দায়িত্ব দেয়ার পর থেকেই জেলা বিএনপির চিত্র বদলে গেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বোদ্ধারা। তারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসূচিগুলো একের পর এক সফল করতে সক্ষম হচ্ছে জেলা বিএনপি। তাছাড়া ঢাকার কার্যক্রমগুলোতেও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। তাছাড়া মহানগর বিএনপি ও জেলা বিএনপি যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কর্মসূচিগুলোতে কর্মীসমাবেশ ঘটাতে পারছে বিএনপি। এসব দিক বিবেচনায় গত এক যুগের বেশি সময় তুলনায় কার্যকরী উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত নারায়ণগঞ্জে বাস্তবায়ন করতে পারছে বলে মনে করছেন বোদ্ধা মহল।

 

বিএনপির কয়েকটি সূত্র মনে করছে, সর্বশেষ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দ্বদ্ব ও কোন্দল স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা গেছে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জের ১০টি ওয়ার্ড রয়েছে। এখানে একসময় শামীম ওসমানের একচ্ছত্র প্রভাব ছিল। তবে সিটি উন্নয়ন আর নেতাকর্মীদের বিভক্তিতে এখানে শামীম ওসমানের আগের সেই প্রভাব অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। অপরদিক এখানে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বিস্তরভাবে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে ছিলেন সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। একদিকে শামীম ওসমানের জনসম্পৃক্ততা কমে যাওয়া আর অপরদিক গিয়াসউদ্দিনের জনসম্পৃক্ততা অব্যহত থাকায় নির্বাচনে গিয়াসউদ্দিন অংশ নিলে শামীম ওসমানের চাইতে বেশি সুবিধা পাবেন বলে মনে করছেন তারা।

 

অপরদিকে রাজনৈতিক বোদ্ধারা ভোটের হিসেবে ফতুল্লাতেও শামীম ওসমানের তুলনায় গিয়াসউদ্দিনকে এগিয়ে রাখছেন। তারা বলছেন, মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন সাবেক সাংসদ হিসেবেই জনসম্পৃক্ততা করেছেন এমনটা নয়। ফতুল্লা এলাকায় তার বিচরণ বেশ পুরনো। গিয়াসউদ্দিন একেবারে তৃণমূলের রাজনীতির মাধ্যমেই হাতে খড়ি। কোন পরিবার কিংবা কারো দ্বারস্ত হয়ে তিনি রাজনীতি শুরু করেননি। প্রথমে তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পরবর্তীতে সদর উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। উপচেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন দেশসেরা উপজেলা চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছেন।

 

এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানদের সংগঠনের সভাপতি ও মহাসচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে গিয়াসউদ্দিনের। আর সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লায় উন্নয়নে এমন কিছু দুরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যার দরুণ আজো তাকে মনে রেখেছে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের মানুষ। তাই এই আসনে আওয়ামীলীগের টিকেটে নির্বাচিত সাংসদ শামীম ওসমানের প্রধান চ্যালেঞ্জ এখন গিয়াসউদ্দিন। ব্যক্তি ইমেজ আর দলীয় শক্তি দুটোতেই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। জাতীয় নির্বাচনে শামীম ওসমানের জন্য সম্ভাব্য কঠিন প্রতিদ্বদ্বিতা যে অপেক্ষা করছে তা বলাই বাহুল্য মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর