
# আ.লীগকে ঘৃণা করে মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন চায় : ড. মঈন খান
# ৩৬ ঘন্টা সময়ের মধ্যে র্যাব-পুলিশ ছাড়া কোথায় খেলতে চান খেলবো : আবদুস সালাম
গত এক মাসে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের টার্গেট করে সবচাইতে গরম ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য রেখেছেন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান। কখনো বলেছেন, সকালে কাশি দিলে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বিএনপি অর্ধেক খালি হয়ে যাবে, আবার কখনোবা বলেছেন বিএনপিকে চিবিয়ে খাওয়ার কথা। তাছাড়া বিএনপির শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করেও বক্তব্য রেখেছেন তিনি। তবে শামীম ওসমানের অবর্তমানে শামীম ওসমানের নাকের ডগায় গর্জন দিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছে বিএনপি।
বর্তমানে শামীম ওসমান ওমরাহের জন্য দেশের বাইরে আছেন। এরমধ্যেই বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী বিশাল মহাসমাবেশ সফল করে দেখিয়েছে জেলা বিএনপি। হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিশাল স্লোগানে পরিপূর্ণ ছিল গোটা সমাবেশস্থল। বিশাল এই মহাসমাবেশ সফল করার দিনে শামীম ওসমানের চলতি মাসে দেয়া বিভিন্ন বক্তব্য প্রসঙ্গ টেনেই ঝাঁঝালো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। গতকাল শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকার সাইনবোর্ড পাসপোর্ট অফিসের সামনে এই মহাসমাবেশ করে বিএনপি।
সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘স্পষ্ট করে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ যদি মানুষের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা করে তাহলে আমরা এরই মধ্যে দেখিয়ে দিয়েছি মানুষ আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করে। আওয়ামী লীগ চলে যাক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনে বিজয়ী হলে আমিও তাদের অভিনন্দন জানাব। কিন্তু ওরা জানে ওরা কত অপকর্ম করেছে। তাই ওরা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ভয় পায়।’
ড. মঈন আরো বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি। আওয়ামী লীগ ভালো কাজ করে থাকলে মানুষ তো তাদের ভোট দেবেই। এ সরকার উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে। এ সরকার গণতন্ত্রকে হরণ করেছে। এ গণতন্ত্রকে আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই আজ নারায়ণগঞ্জের মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে। ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, স্বৈরাচারী সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দেশ চালাচ্ছে। তারা দাবি করে তারা নাকি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।
যে সরকার গণতন্ত্র হরণ করে আজ অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে সে সরকার কোনোদিন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হতে পারে না। এ সত্য আজ শুধু বাংলাদেশের ভেতরে নয়, বাংলাদেশের বাইরের মুক্তিকামী বিশ্বের প্রতিটি মানুষ এটি টের পেয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্যে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে দাবি করে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আজ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। রিজার্ভ এত দ্রুত কেন কমল তার জবাব এ সরকারকে দিতে হবে। যারা সুশাসনে বিশ্বাস করে তারা এদের বিরুদ্ধে।
রিজার্ভ খালি করে ওরা আইএমএফের কাছে যেতে বাধ্য হয়েছে। অর্থনীতিকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। এর জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা বলতাম পাকিস্তান ২২টি ধনী পরিবার সৃষ্টি করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। এ সালামরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষা করার জন্য। আওয়ামী লীগ একই কায়দায় কতগুলো পরিবার সৃষ্টি করেছে যারা মানুষের সম্পদ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। ডাক্তাররা বলেছে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে হবে। সরকার মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করে তাকে আটকে রেখেছে। এর জবাব আওয়ামী লীগকে দিতে হবে।
জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গালাম ফারুক খোকনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটু, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু, আজহারুল ইসলাম মান্নান, নূর জাহান মাহবুব।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রমুখ। সমাবেশ ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেছেন, ‘ওবায়দুল কাদের সিঙ্গাপুর গিয়েছিল চিকিৎসা করাতে। এসে বিএনপিকে ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। কাদের সাহেব ৩৬ ঘন্টা সময় দিলাম। পুলিশ আর র্যাব ছাড়া আসেন, যেখানে খেলতে চান, খেলবো। আমরা খেলতে চাই।’
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘সরকারের মধ্যে থাকা নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরা বলেছেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিএনপিকে শেষ করে দিবে। নারায়ণগঞ্জে থাকতে দিবে না। আমি তাদের মতো বক্তব্য দিতে চাই না। আমি প্রমাণ দিয়ে গেলাম, তার বক্তব্যের প্রমান হলো আজকের এই জনসভা। বিএনপির নেতাকর্মীরা নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের হৃদয় জয় করে আন্দোলন সংগ্রাম করছে। তারই ফলশ্রুতি হচ্ছে আজকের এই জনসভা।’
এছাড়া বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ‘নারায়ণগঞ্জের অনেক কুখ্যাত রাজনীতিবিদেরা ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করে। ২০০১ সালে যেমন বোরকা পরে পালায় গেছিলো, এবার বোরকা পরে পালানোর সুযোগ পাবে না। সেই সুযোগ জনগণ দিবে না। বিচারের কাঠগড়ায় অবশ্যই দাঁড়াতে হবে।’ এস.এ/জেসি