শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সার্টিফিকেট নয়, প্রয়োজন দক্ষতার (ভিডিও)

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২০  

দেশের শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সার্টিফিকেট নয়, দক্ষতার বেশী প্রয়োজন বলে মনে করেন বিদ্যানিকেতন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা এবং নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন।
 
যুগের চিন্তার আয়োজনে ও ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা উম্মে সালামা’র স্বর্ণার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘শিক্ষাঙ্গন’এ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তারা এই মতামত ব্যক্ত করেন। 

অনুষ্ঠানের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছেনা এবং পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে’।
 
বিদ্যানিকেতন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা বলেন, কভিড ১৯ এর কারণে ১৭মার্চ থেকে আমাদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ। 

এই সময় এই সিদ্ধান্তটা অবশ্যই শিশুদের স্বাস্থ রক্ষার বিষয়ের কথা মাথায় রেখেই করেছেন। কারণ তাদের নিরাপত্তার ঝুঁকিটা গ্রহন করা এই মহুর্তে খুবই কঠিন।
 
তিনি বলেন, সরকার যে পরিকল্পনার মাধ্যমে এগোচ্ছে, আমাদের অনলাইনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাস নিতে হবে এমন কোন কথা নেই। এটা নির্ভর করে সক্ষমতার উপর।
 
তিনি আরো বলেন, আমার স্কুলের অনেক ছাত্র আছে যাদের সক্ষমতা কম। আমরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি, ফেসবুকে ছাড়ছি, ইউটিউবে দিচ্ছি। যে যেখান থেকে সম্ভব সংগ্রহ করছে। 

তারমতে এখন আমরা শতভাগ কোন কিছুই পাব না। এভাবে যদি ৪০ থেকে ৫০ভাগ সংগ্রহ করতে পারি তাও একটা পাওনা।
 
তিনি বলেন, আমি মনে করি এই দুর্যোগে শিক্ষার্থীদের বই মুখী রাখা আমাদের প্রধান কাজ। এখানে যে সিলেবাসের ঘাটতি হবে, তা পরবর্তীতে যখন ক্লাস নেয়ার সুযোগ হবে তখন তা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। 

তবে এই বাস্তবটা মেনে নিতে হবে। তিনি বলেন, জীবন আগে জীবীকা পরে। তাই সরকারের শিশুদের কোন ঝুকি না নেয়ার এই উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানান।
 
তিনি বলেন, এখনকার এসাইনমেন্টেগুলো খুব সহজ হওয়া উচিৎ। যেহেতু তাকে সরাসরি সহযোগিতার কেউ নেই। 

তিনি বলেন, অনেক অসম্ভবের দেশ বাংলাদেশ, আমরাও পারি। তার মতে এসাইনমেন্ট অনলাইনের মাধ্যমেই তৈরী হবে এবং শিক্ষকরা তা পারবে।
 
তিনি বলেন, আমরা স্কুলগুলোতে কতটুকু দায়িত্ব নিতে পারি। তারমতে একজন শিক্ষক একটা ক্লাসে ৬০জনের বেশী শিক্ষার্থীকে এক ঘন্টা পাঠদান দিলে তার পক্ষে কতটুকু দায়িত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়।
 
তিনি বলেন, এখানে কিন্তু বেসরকারী স্কুলগুলো শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। 

তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক ত্রুটি আছে। আমরা প্রথমেই টার্গেট করি ভাল রেজাল্ট ভাল স্কুল।
 
আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, তার মতে শিক্ষামন্ত্রী’র এই সিদ্ধান্তের বিকল্প কোন উপায় এই মুহুর্তে নেই। 

শিক্ষার্থীদের পক্ষে অনলাইন ভিত্তিক ক্লাসের কার্যক্রম পরিচালনা করে তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য অনেক স্কুল বা অভিভাবকের নেই। 

শহরের কিছু স্কুল হয়তো কিছুটা চালিয়ে যাচ্ছে তবে তা মন্দের ভাল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে এর মাধ্যমেই যে, সারা বছরের সিলেবাস সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে ফেলা সম্ভব না।
 
যেহেতু স্কুল খুলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না সেহেতু শিক্ষার্থীদের একটি একটি দিক নির্দেশনা দেয়া এবং মোটামুটি একটি পরিকল্পনার মধ্যে আনার জন্য এই পরিকল্পনা করা।
 
তবে এখানে অভিভাবকদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এই কার্যক্রমটা শহরে হয়তো কিছুটা সম্ভব হবে কিন্তু গ্রামের জন্য খুবই দুরূহ হয়ে পড়বে। তাদের কয়জনে এসএসসি পর্যন্ত সিলেবাসটা বুঝতে পারবে?

 
তিনি বলেন, অনলাইন কার্যক্রম গ্রাম পর্যায়ে এতটা নেই। সুতরাং তা ১৫ দিনের হোক বা ৬মাসের জন্য কথা কিন্তু একই। আমি গ্রামের ছেলে আমি সেখানকার খবর যেটুকু জানি, সেখানে ইন্টারনেটের অবস্থা খুবই খারাপ। সবার পক্ষে এটা চালানো সম্ভবও হয়না। 

 

তিনি আরো বলেন, যেহেতু এই মুহুর্তে বিকল্প কোন উপায় নেই তাই সামর্থ্য অনুযায়ী সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। সরকারের টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাসের উদ্যোগে আরো জোর দিলে সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারলে শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবে।

 
তার মতে, আমাদের যেহেতু বিকল্প কোন ব্যবস্থা নাই তাই শিক্ষার্থীদের বইয়ের সাথে সম্পৃক্ত রাখতে এই উদ্যোগ অবশ্যই দরকার। এখানে শতভাগ সাফল্য হবেনা তবে আগামীতে আমাদের এই সমস্যা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করতে হবে।


 
তিনি বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বলতে পারি, আমরা এক বছরেও দুই বছরের কাজ পুষিয়ে নিতে পারি। সেটা শিক্ষকদের পক্ষে সম্ভব। তবে এখানে অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। সময়মতো বাচ্চাদের শিক্ষার জন্য টিভির সামনে বসাতে হবে।

 

বৃত্তির বিষয়ে তিনি একটি প্রস্তাব রেখে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মেধাবীদের একটা পরীক্ষার আয়োজন করতে পারে সরকার। সেখানে মেধানুযায়ী তাদের বৃত্তি দেয়া যেতে পারে। পরীক্ষা ছাড়া বৃত্তির মেধা যাচাই করা সম্ভব হয়না।


 
পিএসসি  পরীক্ষা’র বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, একটি শিশু ৫ম শ্রেণিতে উঠার পরই তাদের উপর অভিভাবকরা চাপ দিচ্ছে, নির্যাতন করছে। যে বয়সে সে বিনোদন করবে, আনন্দ করবে কিংবা শরীর খারাপ তখনও তাকে জোর করে ক্লাসে দেয়া হচ্ছে। এই রেজাল্টের একাডেমিক কতটুকু দাম আছে? তিনি প্রশ্ন করেন। তার শিশু-সুলভ আচরণ প্রকাশ করার উপায়ও থাকে না।


 
তিনি বলেন, শিক্ষা বিষয়টা আমাদের বুঝতে হবে। আমরা এখন ‘এ প্লাস’ নিয়ে ব্যস্ত আছি। ‘এ প্লাস’ কোন পদ্ধতি গ্রহন করলে পাওয়া যাবে সেই উপায় খুজতে থাকি। এই বিষয়টায় সরকারকে আরো ভাবতে হবে।


 
তিনি বলেন, একজন ‘এ প্লাস” লোকের যদি কাজে দক্ষতা না থাকে তাকে দিয়ে আমাদের কি কাজ হবে। তার মতে রেজাল্ট ভিত্তিক বা সার্টিফিকেট ভিত্তিক পড়ালেখা বন্ধ করতে হবে। এসময় তিনি হিন্দী সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টের উল্লেখ করে তিনি বলেন তুমি চাকুরীর পেছনে দৌড়াইওনা। চাকুরী তোমার পেছনে দৌড়াবে।


 
কারিগরী শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে কারিগরী শিক্ষাকে মূল্যায়ণ করি না। তাদেরকে আমরা ছোট হিসেবে দেখি। অথচ কারিগরী শিক্ষাটা আমাদের জন্য খুবই জরুরী। আমরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বৃদ্ধি করি আরো কঠিন করি, তাহলে কারিগরী শিক্ষার মূল্যায়ণ দেওয়া সম্ভব হবে।
 

এই বিভাগের আরো খবর