শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শেষ ভরসা শামীম ওসমান!

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২১  

দীর্ঘ ২৯ বছর পর ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে-বিপক্ষে থাকা মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফলে, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাদের মাঝে। ইতিমধ্যেই তারা নির্বাচন করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

 

তবে, সকলেই বলছেন তাদের নেতা সাংসদ শামীম ওসমান যদি সমর্থন করে, তবেই তারা দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামবেন। তাই সকলেই এখন তাকিয়ে আছেন সাংসদ শামীম ওসমানের দিকে। নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের শেষ ভরসা এখন শামীম ওসমান। এই ভরসা কেবল মনোনয়ন প্রসঙ্গেই নয়, ইউনিয়নটিতে নির্বাচন হওয়ার ক্ষেত্রেও সাংসদ শামীম ওসমানের সম্মতি বা আগ্রহ প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করছেন কেউ কেউ।

 

বলা হচ্ছে, শামীম ওসমান চাইলেই ইউনিয়নটিতে বহু আগে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তিনি ফতুল্লা ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার নির্বাচন নিয়ে বিগত সময়ে তেমন আগ্রহ দেখাননি। যদিও শামীম ওসমান ইতিপূর্বে বলেছিলেন, সদর ও ফতুল্লায় নির্বাচন হবে এবং সেখানে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থীও দেয়া হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে শামীম ওসমানের ওই কথার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

 


বোদ্ধা মহল বলছেন, ফতুল্লা ইউনিয়ন ও সদর উপজেলায় নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেয়া নিয়ে বিপত্তিতে পড়বেন শামীম ওসমান। কেননা এখানে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী, তারা প্রত্যেকেই শামীম ওসমানের অনুসারী। তাই কাকে রেখে কাকে মনোনয়ন দেবেন, তা নিয়ে বিপত্তি পড়বেন শামীম ওসমান। সেই বিপত্তি এড়াতেই তিনি সেখানে নির্বাচন প্রসঙ্গে জোড়ালো আগ্রহ দেখাননি।

 


তাছাড়া, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস বিএনপির ব্যানারে রাজনীতির মাঠে পরিচিত হলেও চেয়ার ঠিক রাখতে তিনি শামীম ওসমানের পোষ্যতা স্বীকার করে আছেন। ফলে, আজাদ বিশ্বাস এখন শামীম ওসমানের বিশ্বস্ত লোক। তাই সদর উপজেলার চেয়ার আজাদ বিশ্বাসের মাধ্যমে শামীম ওসমানের কব্জাতেই আছে। এজন্য শামীম ওসমানও সদর উপজেলার নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামাননি।

 


অন্যদিকে, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদেও বিরাজ করছে একই ঘটনা। ইউনিয়নটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন। তিনি বর্তমান থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। একেতো তিনি দলীয় ভাবে আওয়ামী লীগার, দ্বিতীয়ত তিনিও শামীম ওসমানের অনুসারী হিসিবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই ফতুল্লা ইউনিয়নের নির্বাচন বা চেয়ারম্যান নিয়েও শামীম ওসমান বিকল্প চিন্তা করেননি।

 


তবে ফতুল্লার বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে- ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হওয়ার প্রসঙ্গে শামীম ওসমানের পক্ষ থেকে কোন সাড়া না পাওয়ায় ফতুল্লার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ছিলো। যদিও মামলার অযুহাতে নির্বাচন ছিলো স্থগিত। তবে, এবার যেহেতু মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, সেহেতু ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন যেন যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হয়, শামীম ওসমানের প্রতি সেই আকুতি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

 


জানা গেছে, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক, থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম ও থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ লিটন। ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার খবরে তারা নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেছেন।

 

ইতিমধ্যেই অনেকেই প্রার্থীতা পেতে লবিং ও দৌড়ঝাপ করছেন। তাদের কর্মী সমর্থকদের মাঝেও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে। কর্মী সমর্থকরা নিজ নিজ নেতার পক্ষে যোগ্যতার যুক্তি তুলে ধরছেন। এতে করে ফতুল্লায় নেতাকর্মীদের মাঝে অর্ন্তদ্ব›দ্ব শুরু হয়েছে। তবে, শেষ পর্যন্ত কে হবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী, তা নির্ভর করছে শামীম ওসমানের ইচ্ছের উপর। তাই আগ্রহীরা তাকিয়ে আছেন শামীম ওসমানের দিকেই।

 

এই বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন বলেন, ‘জনগণ যদি আমাকে চায়, আর আমাদের নেতা সাংসদ শামীম ওসমান ভাই যদি আমার প্রতি আস্থা রাখেন, তাহলে দলের মনোনয়ন নিয়ে আমি নির্বাচন করবো।’ মীর সোহেল আলী বলেন, ‘ফতুল্লার মানুষ যদি আমাকে চায় এবং সাংসদ শামীম ওসমান ভাই যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন, তাহলে অবশ্যই আমি নির্বাচন করবো এবং ফতুল্লাবাসীর খেদমতে কাজ করে যাবো।’

 

থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকাবাসী আমাকে নিয়ে আগ্রহী। এখন সাংসদ শামীম ওসমান ভাইসহ আমাদের থানার নেতৃবৃন্দ যারা আছেন, তারা যদি চান তাহলে আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবো।’ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমিও আগ্রহী। আমাদের নেতা সাংসদ শামীম ওসমান ভাই যদি আমাকে নির্বাচন করার জন্য বলেন, তাহলে অবশ্যই আমি নির্বাচন করবো।   

এই বিভাগের আরো খবর