শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

শেষ হাসি হাসবেন আইভী

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২২  

# পুরো নির্বাচনে বাকযুদ্ধ থাকলেও উৎসবমুখর পরিবেশ
# আইভীর সাথে তৈমূরের তুলনা চলেনা
# আইভীর ব্যক্তি ইমেজই ভোটের মাঠে পার্থক্য গড়ে দিবে



আজ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনের ভোট। শুরু থেকেই নাসিকের এই নির্বাচন ঘিরে উৎসব-শঙ্কা-সন্দেহ-দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ আর নানা উস্কানি মূলক বক্তব্যে বিশেষ গুরুত্ব তৈরি করেছে। বিশেষ গুরুত্বের এই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ প্রার্থী লড়ছেন। এই পদের প্রার্থীদের দিকে বিশেষ নজর ছিল পুরো বছর ধরেই।আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মনোনয়ন পাওয়ার আগে থেকেই গোটা দেড় বছর সরব ছিল একটি মহল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা  করে কেন্দ্র। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তৈমূর আলম খন্দকার হাতি প্রতীকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়ছেন। যেহুতু বিএনপি সরাসরি প্রার্থী দেয়নি, কিন্তু এরপরেও তৈমূর আলম খন্দকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। প্রথমে তাকে বিএনপির প্রার্থী ভাবা হলেও বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৈমূর আলমকে দফায় দফায় বহিষ্কারের ব্যবস্থা নিলে তৈমূর আলম খন্দকার ভোল পাল্টে ফেলার চেষ্টা করেন। তিনি নিজেকে স্বতন্ত্র জনগণের প্রার্থী দাবি করেন। আবার অন্যদিকে তিনি বিএনপির ভোটও আশা করেন। আওয়ামী লীগের বিরোধের কথা বলে তিনি আওয়ামী লীগেরও ভোট চান। বিএনপি দফায় দফায় বহিঃষ্কারের পর তৈমুরের পাশ থেকে বিএনপি নেতারা সরে গেছেন। দেড়বছর প্রবাসে কাটিয়ে সিটি নির্বাচনে আগের দেশে ফেরা আদালতের নির্দেশের কার্যক্রম স্থগিত থাকা মহানগর বিএনপির এটিএম কামালসহ দুই চার জন মহানগর বিএনপি নেতা ছাড়া তার পাশে আর কেউ নেই। প্রচারণার সময় তৈমুর নানা জায়গায় ঘুরলে ফিরলেও একজন বিএনপি নেতা ছাড়া তার পাশে কার্যত বিএনপির আর কাউকে দেখা যায়নি। প্রচারণার শেষ দিনে তৈমূরের শোডাউনেও বিএনপি নেতাকর্মীদের দেখা না গেলেও শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান অনুগত লোকদের প্রচারণায় দেখা  গেছে। তৈমুর আলম খন্দকার প্রার্থী হওয়ার পর অনেক দিন থেকেই বলা হচ্ছে, শামীম ওসমানের প্রার্থী হিসেবে তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তৈমূরের নির্বাচনী অর্থের যোগান দাতাও ওসমান পরিবার।যদিও শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে আইভীর নৌকার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন তবে তার অনুগতরা আইভী কিংবা নৌকার জন্য হয়ে মাঠে নামেননি। আইভীও অভিযোগ করেছেন, যদি না ওসমান পরিবার তৈমুর কাকাকে প্রার্থী করতেন তবে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতেননা। তৈমুর আসলে শামীম ওসমানের প্রার্থী।

তবে শত চেষ্টা করেও নির্বাচনের শেষ মুহুর্ত্বে আইভীর চেয়ে নেহাৎ পেছনে রয়েছেন তৈমুর আলম খন্দকার। এগিয়ে থাকার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকার মনোনয়ন পান গত ৩ ডিসেম্বর। এরপর  কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় যৌথসভা ডেকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে আইভীর পক্ষে কাজ করার জন্য মাঠে নেমে পড়েন। এদিকে আইভীও নৌকা প্রতীক পেয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটে গেছেন, ভোট প্রার্থনা করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা আইভীর সমর্থনে যুবলীগ-ছাত্রলীগ-মহিলা লীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সব অঙ্গসংগঠনের নেতকর্মীদের মধ্যে দুরুত্ব কমিয়ে নিয়ে এসেছেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের সুশীল সমাজও আইভীর পাশে এগিয়ে এসেছেন। তারাও  আইভীর পক্ষে বিগত দুটি নির্বাচনের মতোই প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটসহ সুশীল সমাজের নানা পর্যায়ে স্বজ্জন ব্যক্তিবর্গও আইভীর পাশে দাঁড়িয়েছেন, প্রচারণা করেছেন এবং ভোট চেয়েছেন।

এছাড়া এসবের বাইরেও ব্যক্তি আইভীর একটি স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে। দীর্ঘদিন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেও আইভীর সততা, দৃঢ়তা এবং স্পষ্টভাষী হওয়ার কারণে তার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ-বন্দর ও শহরে আইভী ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। যার কারণে সিটি এলাকার সকল মানুষ এই সুবিধা ভোগ করছে। উন্নয়নের মাধ্যমে সিটি এলাকায় আইভীর এই আমূল পরিবতন মানুষের মনে তার জন্য আস্থা তৈরি করেছে। তারা আইভীকেই আবার বেছে নিতে চান।

যদিও ওসমান পরিবারের কঠোর বিরোধীতা আছে আইভীকে নিয়ে, কিন্তু সেসব দেখছে কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা পুরো বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন শুরু থেকে। যেখানেই ঘামলা মনে করছেন সেখানেই উপশমের ব্যবস্থা করছেন তারা। বিশৃঙ্খলা এড়াতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন।  যেহুতু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনটিকে সকলে সুষ্ঠু করতে চায় সেজন্য দাগী সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার কাজ কঠোরভাবে করছেন প্রশাসন। ওসব দাগী আসামীদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে।  প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দাগী আসামি ছাড়া কাউকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছেনা।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে তারা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছেন। কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা, সেই অপরাধী যতই শক্তিশালী হোকনা কেন। কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে পার পাবেনা।

যদিও বাকযুদ্ধে একজন আরেকজনকে আক্রমনের ঘটনা ঘটেছে তবে শুরু থেকে এখন অবধি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উৎসব মুখর রয়েছে। কোথাও কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কোন ধরণের সহিংস কাজ করার সুযোগও কেউ পায়নি। হাঙ্গামা বাধানোর দুঃসাহস কেউ নিতে পারেনি।  আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের প্রার্থী আইভী নির্বাচনে জয়ী হয়ে বেরিয়ে আসবেন। তারা মনে করেন, আইভীর সাথে তৈমূরের তুলনা হতে পারেনা।

এই বিভাগের আরো খবর