শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সংরক্ষিত জলাধার হিসেবে কাজ করবে বাবুরাইল খাল

মাহফুজ সিহান

প্রকাশিত: ৩ জুন ২০২১  

খাল সংরক্ষণ যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা ফতুল্লা অঞ্চলের মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগেই প্রকাশ পায়। তবে দীর্ঘস্থায়ী জলজট থেকে ঢাকার তুলনায় রেহাই পাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার মানুষ। দ্বিতীয় মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেয়ার পর মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী পুরনো খাল উদ্ধার, পুকুর ও খেলার মাঠগুলো সংরক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। সেটি যে কতখানি যুক্তিযুক্ত ও সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা ছিল বর্তমানে সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকাগুলো দীর্ঘস্থায়ী জলজটমুক্ত থাকাই বড় প্রমাণ।

 

সিটি করপোরেশন এলাকায় কয়েক ঘন্টার ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হলেও ভালো ড্রেনেজ সিস্টেমের দরুণ তা অতিদ্রুত সরে যায়। ইতিমধ্যে শহরের ১২ নং ওয়ার্ডে ‘গঞ্জে আলী খাল’টিও দখলমুক্ত করেছে সিটি করপোরেশন। এতে শহরের জলাবদ্ধতার সমস্যা আরো কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে শহরবাসীর আরেকটি স্বপ্নপূরণ হতে যাচ্ছে অতিশীঘ্রই । বাবুরাইল খাল পুনরুদ্ধার প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়েনে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পটি ইউএন হ্যাবিটেট কর্তৃক ‘এশিয়ান টাউনসক্যাপ জ্যুরি এ্যওয়ার্ড-২০১৬’ এবং ইউএনডিপি কর্তৃক আয়োজিত ‘স্মার্ট সিটি ইনোভেশন এ্যওয়ার্ড- ২০১৭’ অর্জন করে।  

 

শীতলক্ষ্যা নদী হতে ধলেশ্বরী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত এই প্রকল্পটির বিস্তৃতি প্রায় ৩ কিলোমিটার। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রতœা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মুনিয়া ট্রেডার্স, বেনজির কনস্ট্রাকশন এন্ড দি আজাদ ইঞ্জিনিয়ার্স জেভি এবং মেসার্স ইউনুস আল মামুন এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে।প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে,  ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের দরপত্র আহবান করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ২ কিলোমিটার রাস্তা, সাড়ে ৫ কিলোমিটিার আরসিসি ড্রেন, ফুটপাত (প্রস্থ সাড়ে ৬ ফুট হতে ১০ ফুট), ১০টি আরসিসি গার্ডার ও ¯øাব ব্রীজ, ৫টি মেটাল ফুট ব্রীজ, ৩টি আরসিসি ভিউইং ডেক, ১টি আরসিসি ঘাটলা ও ১টি পাবলিক টয়লেট এবং ফুটপাতে স্ট্রীটলাইট অন্তর্ভূক্ত আছে। 


আশা করা হচ্ছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর পরিবেশ উন্নয়নসহ নগরবাসীর দীর্ঘদিনের গণপরিসরের চাহিদা পূরণ হবে। এছাড়া খালটি অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি ধারণের জন্য সংরক্ষিত জলাধার (রিটেশন পুকুর) হিসেবে কাজ করবে। অপরদিকে অগ্নিকান্ড নির্বাপনের জন্য পানি সরবরাহের একমাত্র প্রধান উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাবুরাইল খালটি সংরক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমে নগরবাসীর একঘেয়ামি জীবনযাপন পরিবর্তন ও প্রাণোচ্ছল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।


স্থানীয়রা জানিয়েছে, বাবুরাইল খালটি মূলত নারায়ণগঞ্জ নগরীর শীতলক্ষ্য নদী থেকে ধলেশ্বরী পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার বিস্তৃতি একটি সংযোগ খাল। অতীতে বাবুরাইল খালের মাধ্যমে পণ্যবাহী ও যাত্রীাবাহী নৌকা, ট্রলার মন্ডলপাড়া. বৌবাজার ও জিমখানা ঘাটে অবস্থান করতো। এখালটি স্থানীয় লোকজনের দৈনন্দিন গোসল, সাতার কাটা, মাছধরাসহ বিভিন্ন বিনোদনের স্থান ছিল।

 

এছাড়াও সে সময়ে খালের পানি দিয়ে গৃহস্থালী কাজকর্ম সম্পন্ন করা হতো। মানুষের দৈনন্দিন পানির চাহিদা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালনকরতো ঐতিহাসিক বাবুরাইল খাল। পরবর্তীতে নব্বই দশকের পর অবৈধ দখল, দূষণ ও নদীর নাব্যতা হ্রাসের ফলে বাবুরাইল খালটি বদ্ধ জলাশয় আকার ধারণ করে। প্রতিনিয়ত মানুষের বর্জ্য ফেলার কারণে খালটি ডাম্পিং স্থানে পরিণত হয়। মেয়র আইভীর হাত ধরেই বাবুরাইল খাল দখল মুক্ত করা হয় এবং নগরবাসীর স্বপ্নের এই বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নটিও আলোর মুখ দেখেছে। 
 

এই বিভাগের আরো খবর