সংসদীয় আসন নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) বড় চ্যালেঞ্জ ভোটার উপস্থিতি

ফরিদ আহমেদ রবি
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৫১ পিএম

দুয়ারে কড়া নাড়ছে সংসদ নির্বাচন। দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না বরং আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচন প্রতিহত করার কর্মসূচি পালন করে চলেছে। বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর নির্বাচন বর্জন জনিত কারণে আসন্ন নির্বাচন অনেকটাই একপেশে হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
এমন প্রেক্ষিতে বিশ্বমোড়ল পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা সহ ভোটার উপস্থিতির বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্যতম মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করছে। সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ত্রুটিমুক্ত নির্বাচনের অন্যতম প্রধান শর্ত ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
যাতে প্রশ্ন না ওঠে বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে সিংহভাগ ভোটার ভোট দিতে যায়নি। এমনটি হলে তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রমানিত হবে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অবস্হা কেমন হবে তা এই মুহূর্তে বলা না গেলেও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম হবে বলে রাজনীতি সচেতন মহলের ধারণা।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তালিকা ইতিমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ পাঁচ আসনে আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী দেয়নি। পক্ষান্তরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সেলিম ওসমান যে আওয়ামী লীগের সমর্থন পুষ্ট তা এই মনোনয়ন থেকেই বুঝা যায়। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মোট ৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর নির্বাচন বর্জন জনিত কারণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা কমিয়ে আনার জন্য আওয়ামী লীগ, দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দিয়েছে।দেশের অনেক নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এছাড়া আরও কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে।স্বাভাবিক ভাবেই এ সমস্ত নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করলেও বিরোধিতার সম্মুখীন হবেন নিজ দলীয় সহ অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। জাতীয় পার্টি সহ ছোট কিছু দলের হেভিওয়েট প্রার্থীতো থাকছেই। এমন সহজ সমীকরণে অনেক আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর অংশ গ্রহণ ছাড়াও উল্লেখিত কারণে অনেক নির্বাচনী অঞ্চল ভোট উৎসবে মুখর হয়ে উঠেছে। সংগত কারণেই ভোটার উপস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ পাঁচ আসনে।স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ বা অন্য কোন দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা না দেয়ায় আওয়ামী লীগের সমর্থন পুষ্ট জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমান প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন বলা যায়।
এ কারণেই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ আসনে যে পাঁচজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন একমাত্র সেলিম ওসমান ছাড়া বাকিদের একজনও নির্বাচনের মাঠে সামান্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা রাখেন না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত। এমন সহজ সমীকরণে সাংসদ হয়ে যাওয়া সরকার ,নির্বাচন কমিশন বা সেলিম ওসমান কারও জন্য স্বস্তিদায়ক হবে না।
শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও শুধুমাত্র সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতির অভাবে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।এখন থেকে এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে না পারলে তা নির্বাচনের স্বপক্ষ শক্তির জন্য আত্নঘাতী হতে পারে।প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভোটার উপস্থিতি আশংকা জনক ভাবে কম হতে পারে।বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
যারা সেলিম ওসমানকে সাংসদ হিসেবে পেতে চান তারা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছেন ফলাফল তাদের পক্ষেই যাবে। সে কারণে অনেক ভোটার ভোটকেন্দ্রে যেতে আগ্রহী হবেন বলে মনে হয় না। প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীদের সপক্ষে কতজন ভোটকেন্দ্রে আসবেন তা-ও প্রশ্ন সাপেক্ষ।সদ্য ভূমিষ্ঠ তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনে চমক দেয়ার ঘোষণা দিলেও প্রার্থী হিসেবে যাকে মনোনয়ন দিয়েছে আইন পেশা এবং বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার সুবাদে শহরাঞ্চলে কিছুটা পরিচিতি থাকলেও সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা রাখেন না বলেই সাধারণ মানুষের ধারণা।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা দূরে থাক এসব দল এবং প্রার্থী ভোট কেন্দ্রে তাদের সমর্থনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে পারবে তাও মনে হয় না। কারণ তাদের জন সম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে। এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভোটার উপস্থিতির সম্ভাবনা নারায়ণগঞ্জ পাঁচ আসনে ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।ভোটার উপস্থিতি কম হলে তা নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনকে কিছুটা হলেও স্বীকৃতি দিবে।
পক্ষান্তরে ভোটার উপস্থিতির হার সন্তোষজনক হলে তা নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা প্রমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বীকৃতি আদায় এক কথায় অসম্ভব প্রায়। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন, নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের নির্বাচনমুখী ভোটারদের তেমনটিই প্রত্যাশা।
লেখক : বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানী ও পোশাক শিল্পের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা।