শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সংসদে ইউএনও’কে দুষলেন বিএনপির সাংসদ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৭ জুন ২০২১  

জাতীয় জরুরি তথ্যসেবা ৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্য সহায়তা চেয়ে হয়রানির শিকার নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুরের ফরিদ আহমদকে নিয়ে এবার জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছে। সারাদেশে আলোচিত এই ঘটনার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরাকে দুষছেন বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা। তিনি এই ঘটনাকে আমলাদের বাড়াবাড়ি ও বেপরোয়া আচরণ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমলাদের বাড়াবাড়ি ও বেপরোয়া আচরণের শিকার হয়েছেন খাবার চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করা ফরিদ আহমেদ।’

 

গতকাল রোববার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ সালের সম্পূরক বাজেটের উপর আলোচনা করতে গিয়ে রুমিন ফারহানা এ কথা বলেন। সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, ‘হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে মহাবিপদে পড়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের ফরিদ আহমদ। তিনি চারতলা বাড়ি এবং একটি হোসিয়ারি কারখানার মালিক, এমন তথ্যের ভিত্তিতে ইউএনও ৩৩৩ নম্বরে কল করে অযথা হয়রানি ও সময় নষ্ট করার দায়ে ফরিদ আহমেদকে শাস্তি হিসেবে ১০০ গরিব লোকের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণের নির্দেশ দেন। এটা না করতে পারলে জেলে যেতে হবে, এই ভয়ে তিনি স্ত্রীর অলংকার বন্ধক রেখে এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে ঋণ করে ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় করে খাদ্য সহায়তা করতে বাধ্য হন।

 

এই ঘটনায় এক ইউএনও কোনো সুনির্দিষ্ট আইন ছাড়াই তাঁকে শাস্তি দেওয়া এবং অতি ক্ষমতাশালী আমলাতন্ত্র এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যাচ্ছে তাই করার জন্য।’ তিনি বলেন, ‘ফরিদের একটি ছোট হোসিয়ারি কারখানা ছিল। পৈতৃক চারতলা বাড়িটি ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে ভাগ হওয়ার পর তাঁর ভাগে পড়েছে মাত্র তিনটি কক্ষ। এর মধ্যেই তিনি পরিবার নিয়ে চলছিলেন। কিন্তু করোনার সময় তিনি হোসিয়ারি কারখানাটি আর চালিয়ে যেতে পারেননি। পরে একটি হোসিয়ারি কারখানায় কর্মচারীর কাজ করতে শুরু করেন তিনি। স্ত্রী, কন্যা আর এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী পুত্র নিয়ে তাঁর দিন আর চলছিল না। করোনা তাঁকে খাদ্যের কষ্টেরই মুখোমুখি করেছে।’

 

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নাগবাড়ি শেষ মাথা এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি নিয়মিত এফএম রেডিও শোনেন। রেডিওতে সংবাদে তিনি জেনেছেন ৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায়। আর্থিক সংকটে পড়ে সরকারি সহায়তা পেতে তিনি কল করেছিলেন ওই নম্বরে। কিন্তু সহায়তা তো পাননি, উল্টো তিনি চারতলা ভবনের মালিক এমন তথ্যের কারণে প্রায় ৬০ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হয়েছে তাকে। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরার নির্দেশে তাকে ১০০ জনের মাঝে চাল, আলু, ডাল, লবন ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে হয়েছে। ১০০ জনকে খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার মতো সামর্থ্য তার না থাকলেও নিজের স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে, ধার-দেনা করে ১০০ জনের মাঝে চাল, আলু, ডাল, লবন ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। এমনকি স্থানীয় ইউপি সদস্য আইয়ুব আলীর থেকেও ধার নিয়েছেন ১০ হাজার টাকা।

 

এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে লেখালেখি হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে দেওভোগ পঞ্চায়েত কমিটির উপদেষ্টা শাহীনূর আলম তাঁকে খাদ্যসামগ্রী কেনা বাবদ ৬০ হাজার টাকা ফেরত দেন। ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারীকে প্রধান করা ওই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরাকে দায়মুক্তি ও কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আইয়ুব আলীকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
 

এই বিভাগের আরো খবর