শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সদর থানা আ’লীগে নাম বাণিজ্য 

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২১  

# হাইব্রীডদের কমিটিতে নেয়া হবেনা-আব্দুল হাই


# প্রথমবার আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েই থানা কমিটির পদ


# সদরের সভাপতি- সেক্রেটারির নীল নক্সাতেই এমন হ-য-ব-র-ল


# বুঝেশুনেই নাম চূড়ান্ত-ভিপি বাদল

 

অভিযোগ যেন পিছুই ছাড়ছেনা। সদর থানা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান দিতে ব্যক্তি স্বার্থে এবং কাউকে না জানিয়ে তালিকা প্রণয়ণের অভিযোগ উঠেছে সভাপতি নাজির উদ্দিন  ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ততা নেই  জামাত-বিএনপি থেকে আগত ও সর্বসাকুল্যে এই প্রথম আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হয়েছে এমন লোকজনকে সদর থানা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন তারা।

 

সূত্র জানায়, এসংক্রান্ত একটি অভিযোগপত্রও জেলা আওয়ামী লীগ বরাবর দেওয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে যুগের চিন্তাকে জানিয়েছেন, ‘প্রস্তাবিত কমিটিতে যেসকল নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে হাইব্রিড-জামাত-বিএনপির লোকজনের আধিক্য রয়েছে। আমার কাছে বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কার। আর তাই কমিটি চূড়ান্ত করার আগে অবশ্যই এসব বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দেয়া হবে।’ সূত্র জানায়, সদর থানা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সভাপতি নাজির উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার সেখানকার তৃণমূল আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে আলীরটেক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান এসব বিষয়ে স্পষ্ট আপত্তি তুলেছেন। এখানেই শেষ হয় সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সেক্রেটারির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে গোগনগর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজিজ মাস্টার ও সাধারণ সম্পাদক এবিএম আজহারুল ইসলামও। তারা বলছেন, শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থ চরিত্রার্থ করতেই তারা এখানে এই ফাঁদ পেতেছেন। 

 


সূত্র আরো জানায়, গোগনগর ইউনিয়নে সদর থানা আওয়ামী লীগের কমিটিতে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজির উদ্দিন আহমেদ, তার দুই পুত্র আবু সাঈদ শিপলু এবং আরিফ হোসেন বিপলুর। কিন্তু  এই পরিবার কখনোই আওয়ামী লীগ কিংবা সহযোগী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলনা। এই ই্উনিয়নে চেয়ারম্যান মনোনয়ন প্রত্যাশী ফজর আলীও এই প্রথম আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছে। একই অবস্থা এসএম মোসলেহ উদ্দিনের। অভিযোগ আছে, তিনি চাকুরী জীবনে সিবিএ’র বিএনপির রাজনীতি করতেন। আওয়ামী লীগ না করেও সানু মিয়া মাতবর ও তার ছেলে মিয়া সোহেল সদর থানা আওয়ামী লীগে স্থান পেতে লাইন ধরেছেন। আনিছুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান পাপ্পু আপন দুই ভাইও এই প্রথম আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছেন। তারা এখন সদর থানা আওয়ামী লীগের পদ চাচ্ছেন। মোস্তফা কামালা, গাজী কামাল, আপন দুই ভাই মো.আতাউর রহমান রতন ও মো.সাঈদ রহমান জীবনে প্রথম আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েই সদর থানা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ চাইছেন। নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচন করা বশির শিকদারও চান ভালো পদ। এরকম আরো কিছু বিতর্কিত নাম প্রস্তাব করা হয়েছে গোগনগর ইউনিয়ন থেকে। তৃণমূল কর্মীরা বলছেন, অর্থবাণিজ্যের কারণেই এমন উদ্ভট ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।  

 


সূত্র জানায়, গোগনগরের মতো একই ভেজাল তৈরি হয়েছে আলীরটেকে। এটি সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেক্রেটারির ভেল্কি। যদিও এসব ধোপে টিকবেনা বলে জানিয়েছে জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। সূত্র জানায়, আলীরটেকের সায়েম আহমেদ এই প্রথম আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছে। উদ্দেশ্য সামনের ইউপি নির্বাচনে নৌকার মার্কা পাওয়া। এই ইউনিয়নের সুলতানা কখনো আওয়ামী লীগ না করেও চান সদর থানা আওয়ামী লীগের পোষ্ট। সূত্র জানায়, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও  সেক্রেটারির সাথে জামাত-বিএনপি’র লোকদের সাথে রয়েছে গভীর সখ্যতা।আর্থিক বাণিজ্যের সুবর্ণ সুযোগের লোভে তারা সদর থানা আওয়ামী লীগে বিতর্কিত লোকদের পদ পাইয়ে দিতে দৌঁড়ঝাপ করছেন। যদিও তৃণমূল কর্মীদের তোপের মুখে তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন।  

 


জেলা আওয়ামীলীগ শির্ষ নেতা বরাবর পাঠানো লিখিত ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে, সদর থানা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনুমোদনের জন্য যে সকল ব্যক্তিদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে তাদের অনেকেই বিএনপি জামাত থেকে আসা। সেই সাথে দলের কর্মকান্ডের সাথে জরিত নয়। গোগনগর ইউনিয়নের ফজল আলী নামে এক ব্যক্তি প্রাথমিক সদস্য হয়েছে। কিন্তু তাকে থানার গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রস্তা আকারে রাখা হয়েছে, সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এবং গোগনগর ইউনিয়ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেয়ার জন্য নিয়ম বহির্ভূত ভাবে পদবী দেয়া হয়েছে। তিনি এলাকায় বাচ্চু বাহিনী নামে দূধর্ষ ক্যাডার তৈরী করেছে। সেই সাথে কখনো আওয়ামীলীগের সাথে জরিত ছিলনা। যা নিয়ে ত্যাগী নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে।

 

প্রস্তাবিত কমিটিতে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়, একই পরিবারের ৩ জনের নাম পদে রাখাহয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা নাজির উদ্দিন, আবু সাইদ শিপলু, এবং আরিফ হোসেন বিপলু, তারা ৩ জনেই সম্পর্কে পিতা-পুত্র। বিপলু কোন দিনই আওয়ামীলীগের সাথে বা সহযোগি অঙ্গ সংগঠনের সাথে জরিত ছিলনা। সানু মিয়া মাতবর ও মিয়া সোহেল  সম্পর্কে পিতা পুত্র, তারা কখনো আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত ছিলনা। এই প্রথম তারা প্রাথমিক সদস্য হয়েছে  নিয়ম বহির্ভূত ভাবে তাদের পদ পদবী প্রস্তাব আকারে রাখা হয়েছে। যা দলের স্বার্থের পরিপন্থি।    

 


গোগনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবি এম আজহারুল ইসলাম যুগের চিন্তাকে বলেন, যেসব নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলো বিতর্কিত। জেলা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানোর আগে আমাদের কিছুই জানায়নি।  আলীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার যুগের চিন্তাকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আমাদের ডেকে মতামত নিয়েছেন। এমপি শামীম ওসমান দেশের বাইরে থাকায় এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে পদক্ষেপ নিতে সময় লাগছে বলে জানিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। আশা করি তৃণমূল কর্মীরা বঞ্চিত হবেননা। এব্যাপারে সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নাজির উদ্দিন বলেন, অভিযোগ যে কেউই জানাতে পারে, আমরা বিতর্কিতদের নাম দেই নি। সদর থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, আমরা দেখে শুনে কমিটি দেখে প্রস্তাব করেছি। এসব অভিযোগ অযথা করা হচ্ছে। এদিকে বিতর্কিত ব্যক্তিদের কখনোই আওয়ামী লীগে নেয়া হবেনা জানিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো.বাদল বলেন, যেহুতু অভিযোগ এসেছে আমরা সেটি আমলে নিয়েই সিদ্ধান্ত নেবো। 
 

এই বিভাগের আরো খবর