বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সন্তান হারিয়ে বাঁচতে ইচ্ছে করছেনা

অর্ণব হাসান

প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২২  

# এই হত্যার মূলে পিয়াস
# পরিকল্পিতভাবে ধ্রুবকে হত্যা করা হয়: নিহতর মা

 

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জসহ আশেপাশের এলাকায় একাধিক হত্যার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি হত্যায় কিছু আসামীদের সাথে সাথেই গ্রেপ্তার করা হলেও বাকিদের ক্ষেত্রে আসামীদের গ্রেপ্তারে প্রশাসন অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত (১৭ মে) রাতে ফতুল্লার ইসদাইরে রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ধ্রুব (১৫) নামে দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে কিশোরগ্যাং গ্রুপ ছুরি দিয়ে এলোপাথারিভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।

 

এই ঘটনায় ইতিমধ্যে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মাঝে ৩ জন ধ্রুব হত্যার কথা স্বীকার করেন। সন্তার হারিয়ে ধ্রুব’র মা এর্বং বাবা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়ে একেবারেই ভেঙে পড়েছেন। তারা যেন তাদের সন্তান হত্যা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। মন যদি মানতে না চায় তার পরেও মনকে ধৈর্য্যরে সাথে মেনে নিতে হয়।

 

নিহত ধ্রুব’র মা মা সুব্রা রানী দাস কান্নারত অবস্থায় বলেন, আমার ছেলেটা তো ভালই ছিল, ওরে ডেকে নিয়ে গিয়ে কেন ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হলো। আমরা এখনো কোনো  আইন প্রশাসন থেকে কোন বিচার পাচ্ছি না। যে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় সে আর পৃথিবীতে ফিরে আসেনা। কিন্তু আমি চাই যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে আমি তাদের ফাসি চাই। হত্যাকারীদের ফাঁসি হলে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে। সে যেনো বলে পৃথিবীতে আমার মা-বাবা আমার খুনের বিচার করিয়েছি।

 

ধ্রুব’র হত্যার বর্ণনা দিয়ে জানান, যে দিন আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় সেদিন আমার ছেলে তাদের যাইতে চাইনি। তাকে রুদ্র পিয়াস এসে জন্ম দিনের উপহার কিনার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। তখন রুদ্র ও রিপন বলে যে আমরা বসে আছি তুই কাজ শেষ কর। ওরা এক ঘন্টা এখানে আমাদের বাড়ির সামনে বসে থেকে ধ্রবকে নিয়ে যায়।

 

ওই দিন আমার ছেলে তার পিতার কাজে সহযোগিতা করে ডাইংয়ে কাজ করে। যতক্ষন পর্যন্ত ধ্রুব ডাইং থেকে বের না হলো ততক্ষণ পর্যন্ত তারা বসে থেকে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। ধ্রব বাহির হলে রুদ্র ও রিপন বলে যে চল আমরা ও তোর সাথে কাজ করি তাহলে তারাতাড়ি কাজটা শেষ হয়ে যাবে, তখন ধ্রুব বলে যে না ভাই আমি যে কাজ করি তোরা ঐ কাজ পারবি না তোরা চলে যা আমি আমার কাজ করি। তখন রুদ্র ও রিপন বলে তাইলে তুই কাজটা কর আমরা বসি এখানে এই কথা বলে ওরা রেল লাইনের এখানে বসে ছিল।

 

তার পাশে নিহত ধ্রুব’র পিতা বলেন, ধ্রুব’র কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা  সেখানের বসে উপেক্ষা করে। যা সি.সি ফুটেজেও ওদের ছবি দেখা যায়। ওরা দুইজন যে বসে ছিল তা ফুটেজে আছে। রাত ৮টায় আমার ছেলে বের হলে তার ২০-২৫ মিনিটের মাথায় জানতে পারি আমার ছেলেকে কারা কুপিয়েছে। আমি ভাবছি হয়তো অটো এক্সিডেন্ট হইছে কারন এতোটুকু সময়ের মধ্যে তো আর দুরে কোথাও যাবে না ইসদাইর এর দিকে হয়তো ঘুরাঘুরি করবো,

 

কিন্তু আমাকে তো আর বলে নাই  যে ওরা আমার ছেলেকে এভাবে মেরে ফেলছে। পরে আমি শুনি যে ওরা নিয়া আমার ছেলেকে এভাবে মারছে । কি কারনে মারছে আমি কিছুই জানিনা । পুলিশ প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আইন প্রশাসনের কোনো আগ্রহ নাই। এতো দিন হয়ে গেল পুলিশ চারজন আসামীকে এখনো ধরতে পারে নাই। মামলার আইও বলছে যে আমি দেখছি ,আমি তো মাঠে কাজ করছি। আমি তো বসে নেই এ বলে আমাদের শান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু তাদের কোন তৎপরতা আমরা দেখছি না।

 

যাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছে ওরা কেন ধ্রুবকে হত্যা করলো কিন্তু ওরা কিছুই শিকার করে নাই একথা বলেছে পুলিশ আমাদের জানান। কিন্তু ১৬৪ ধারার জবানবন্দি কাগজ দেখতে চাইলে তারা আমাদের কারন দেখিয়ে শান্তনা দিয়ে কাগজ টা দিচ্ছে না । আমি ধ্রুবর পিতা আমিতো দুনিয়ায় থেকে ও নেই। আমার একটা মাত্র সন্তান সে এই দুনিয়ায় নাই।

 

এই সন্তানের আশা নিয়ে দুনিয়ায় বেচে ছিলাম, এখন আর বাঁচার কোন আশা নেই। সন্তান হারিয়ে আর বাচতে ইচ্ছে করছে না । আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ কিভাবে তারা আমার ছেলেক হত্যা করলো আর কেন খুন করলো তারা এটা একটু খুজে বের করুন। পিয়াসের সাথে দ্বন্দ্ব নিয়ে এ ঘটনা ঘটে। সকল আসামীদের ফাঁসির দাবী জানান ধ্রুব’র পরিবার।

 

উল্লেখ্য, ধ্রুব হত্যার ১০জনকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় ১৮ মে ৩০২/৩৪ ধারায় পেনাল কোডে হত্যা মামলা হয়। যার মামলা নম্বর ৫১। এই হত্যা মামলায় ৬জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মাঝে ৩ জন হত্যার সাথে জড়িত তারা জবানবন্দি প্রদান করেন।
 

এই বিভাগের আরো খবর