শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সবাই ত্যাগী, পদ চাই !

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২১  

দ্বন্দ্ব, কোন্দল, ব্যক্তিপূজা, স্বেচ্ছাচারিতা আর পদবাণিজ্যে দলের কি পরিণতি হতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা বিএনপি।এর প্রভাব পড়েছে ছাত্রদল, যুবদল, মহিলাদলসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনগুলোতেও। এসব থেকে বেরিয়ে আসতে সম্প্রতি যুবদলকে ঢেলে সাজানোর প্রয়াস নিতে যাচ্ছে বিএনপি সর্বোচ্চ কমান্ড। কিন্তু এখানেও  পদলোভীদের মতো ফটোসেশন করা  নেতাদের হিড়িক নেহাৎ কম নয়।

 

দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকেও তৃণমূল বিএনপির এসব কর্মী স্বপ্ন দেখছে মহানগর যুবদলের আসন্ন আহবায়ক কমিটি নিয়ে। সম্প্রতি এনিয়ে  জল ঘোলা করতে নেমে পড়েছে কয়েকটি পক্ষ। সূত্র বলছে, মহানগর যুবদলের সাবেক আহবায়ক মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল করোনা বীর হিসেবে, পরক্ষণেই নারী কেলেঙ্কারীতে যুবদলের সবচাইতে সমালোচিত হিসেবে দেখা হচ্ছে খোরশেদকে। অতীতের ফটোসেশন রাজনীতি আর ভোঁতা নেতৃত্বের দরুণ খোরশেদ যে মহানগর যুবদলের আহবায়ক কমিটিতে থাকছেননা এটা মোটামুটি নিশ্চিত মনে করছেন খোদ তার কর্মী-সমর্থকরাই। যুবদলের আহবায়ক কমিটি করার আগে সবচাইতে বড় চমক দিয়েছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক মনিরুল আলম সজল। মহানগর বিএনপি’র আকর্ষণীয় পদ ছেড়ে শুধুমাত্র যুবদলের নেতৃত্ব দিতে ইতিমধ্যে মহানগর বিএনপি’র পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি।

 

তবে সেটি এবার সহজে হচ্ছেনা তাও অনুমেয় আহবায়ক হওয়ার জন্য আগে থেকে মুখিয়ে আছেন মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাগর প্রধান। একসময় খোরশেদের সাথে টেক্কা দিয়েই রাজনীতি করতেন বলে প্রচারণা চালাতেন নিজেই। করোনাকালীন সময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন তিনিও। তবে তা শুধুমাত্র নাসিক ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচন করার ব্রত নিয়ে। তবে একদিকে করোনায় সহযোগিতার ফটোসেশন, অন্যদিকে বন্ধ-বান্ধব নিয়ে মাস্তি করতে ছুটে বেড়ানোর ফটোসেশন সমালোচিত করেছে সাগর প্রধানকে।

 

তাই আহবায়ক কমিটির শীর্ষ পদে তাকে মন্দের ভালো বলেই মনে করে যুবদলের শীর্ষ পদগুলোর প্রত্যাশীরা। অনেকে তার ব্যাপারে বলেন, তিনি আহবায়ক হলে ঢাল নাই তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দারের মতো ব্যাপার হবে। সজল যখন মহানগর বিএনপির পদ ছেড়ে যুবদলে আটঘাট বেধে নেমেছেন সেখানে বলতেই হবে ফটোসেশন করা সাগর প্রধানের নামটি থাকবে তলানীতে। তবে সজলের জন্য ব্যাপারটি যে এলাম, খেললাম আর জয় করলাম এমনও হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানিয়েছে, মহানগর যুবদলের আহবায়ক পদে টেক্কা দিতে নাম আছে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন মাজহারুল ইসলাম জোসেফর। এক সময়ে  বেশ ডাকসাইটের নেতা ছিলেন তিনি।

 

তৎকালীন সাংসদ কমান্ডার সিরাজুল ইসলামের ভাতিজা জোসেফ দাবড়িয়ে বেড়াতেন। ছিল নাম ডাক-প্রতাপ, সংঘটিত করতে পারতেন সবাইকে।  কিন্তু ২০০৬ সালে দল ক্ষমতা ছাড়ার সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। নয়া বিএনপি কর্মীদের কাছে অপরিচিত হলেও যে জোসেফ যুবদলের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারেন সেটি জানেন তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বি নামা অন্যারাও। যুবদলের কমিটি ভেঙে দেওয়ার পরপরই জোসেফ সক্রিয় হন। আহবায়ক কমিটির আলোচনায় আসছেন প্রতিনিয়ত। মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি খোরশেদ দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছেন জেনেই হয়তোবা তার ঘনিষ্ঠ রানা মুজিবকে যুবদলে নিয়ে চলছে আলোচনা।

 

তবে ভাঙা ঘরের লাঠিও ভাঙা এমন প্রবাদ আছে হয়তো জেনেই সবাই রানা মুজিবকে রাখছেন পেছনের কাতারে। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় রানা মুজিবও হালে ঠিকঠাকভাবে পানি পাচ্ছেননা। আহবায়ক কমিটির শীর্ষ পদ নিতে মরিয়া ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশু। দৌড়ঝাপ তিনিও কম করছেননা। তবে এখন যেহুতু ঢেলে সাজাবার প্রশ্ন সেখানে ছাত্রদলের ভোতা নেতৃত্ব তাকে আবারও যুবদলের দায়িত্ব পেতে প্রধান বাধা হিসেবেই কাজ করবে। যুবদলের আহবায়ক কিংবা সদস্য সচিব হতে মরিয়া যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন এবং সাধারণ সম্পাদক মমতাজউদ্দিন মন্তু। মন্তুর বেলায় খোদ বিএনপি’র কর্মীদের মূল্যায়ন সকাল দেখেই দিনটি কেমন যাবে বোঝা যায় এমন।

 

আগের কমিটির ব্যর্থতার দায় কোন ক্রমেই মন্তু এড়াতে পারেননা। আর তাই একই ভুল বার বার করা বোকামির শামিল, আর এবার তেমনটি হওয়ার আশঙ্কা নেই বলছেন যুবদলের কর্মীরা।  মনোয়ার হোসেন শোখন নিজে আশাবাদী তবে তার কর্মীসমর্থকরা তাকে নিয়ে তেমন আশাবাদী নন। যেহুতু দীর্র্ঘদিন পর যুবদলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার আভাস মিলেছে সেখানে শোখন নিজেকে মেলে ধরবার সুযোগ চাইছেন।তবে এরাই আহবায়ক কমিটির শীর্ষপদ পত্যাশী নন। ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদও যুবদলের আহবায়ক কিংবা সদস্য সচিব পদপ্রার্থী। নেতৃত্বে ছাত্রদলে জোরালো ভূমিকা রাখায় তিনিও যে যুবদলের ঝান্ডা তোলার দায়িত্ব পাবেননা এনিয়েও বিতর্ক করার সুযোগ কম। তবে সবাই এখন দাবি করছেন, তারা সকলেই ত্যাগী, দল তাদের মূল্যায়ন করুক। 

 

সদ্য অব্যাহতি নেয়া মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সজল যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘যেহুতু যুবদলের নেতৃত্ব দিতে চাচ্ছি, দলের নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য পদগুলো থেকে অব্যাহতি নিতে হবে। আমি তাই করেছি। নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য মনে করে দায়িত্ব দেয়া হলে আশা করি যুবদল প্রাণ ফিরে পাবে।’ মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মমতাজউদ্দিন মন্তু যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘অনেকেই এখন আহবায়ক হতে চায়। অথচ তারা দীর্ঘ ১৮/১৯ বছর ছিলই না। আমি সবসময়ই যুবদলের রাজনীতি করি। যুবদলকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসি। দল সবসময়ই আমাকে মূল্যায়ন করেছে। এবারও আমাকে আহবায়ক হিসেবে মূল্যায়ন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। যাদের দলের সাথে সম্পর্ক নেই, রাজপথে অনুপুস্থিত তারা কি করে যুবদলের মতো সংগঠনের নেতৃত্বে আসতে চায় এটা আমার মাথায় ধরেনা।’ 

 

মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সাগর প্রধান বলেন, খোরশেদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যুবদলকে সংঘটিত করেছেন এমন ব্যক্তিটি শুধু আমিই। এখন দায়িত্ব পেলে যুবদলকে শক্তিশালী করবো। অনেকে উড়ে এসে যুবদলের নেতৃত্বে বসার চেষ্টা করছেন।মাঝের কঠিন সময়গুলোতে তারা কেউ ছিলনা। দল আমাকে আহবায়ক হিসেবে মূল্যায়ন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। 

 

মহানগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন যুগের চিন্তাকে বলেন, দলের প্রতি নিবেদিত থেকেছি বিধায়ই যুবদলের সবগুলো কমিটিতে আমাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে, আর তাই এবারও আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সদস্য সচিব হিসেবে আমি নিজেকে অন্যদের চেয়ে বেশি যোগ্য মনে করি। আমি চাই সবাইকে নিয়ে একটি শক্তিশালী যুবদলের কমিটির গঠন করা হোক। 

 

ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশু বলেন, ছাত্রদলকে ২০ বছর নেতৃত্ব দিয়েছি। নারায়নঞ্জে বেশিরভাগ মামলার আসামি আমি হয়েছি। জেল খেটেছি। যুবদলে আমাকে সদস্য সচিব করা হলে আমি অবশ্যই দলকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখতে পারবো। 

 

মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম জোসেফ বলেন, যুবদলের আসন্ন আহবায়ক কমিটিতে আমি আহবায়ক পদপ্রার্থী। দীর্ঘদিন বিরতি থাকলেও ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীদের সাথে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। খোরশেদের কমিটির সাথেও আমার যোগাযোগ ছিল। আশা করি অতীতের নেতৃত্ব দেয়ার গুনাবলি বিবেচনা করে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। 

 

মহানগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি রানা মুজিব যুগের চিন্তাকে বলেন, কিছু সময়ের জন্য বিদেশে থাকলেও দলকে আমি কেমন নেতৃত্ব দেই তা সবার জানা। এবার আমি আহবায়ক কমিটিতে ১নং যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিতে চাই। দল আমাকে আশা করি বিবেচনা করবে। মহানগর ছাত্রদলের বতর্মান সভাপতি সাহেদ আহমেদ যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ। কেমন দায়িত্ব পালন করেছি তা দল এবং আমার নেতাকর্মীরাই ভালো জানেন। এখন যুবদলের রাজনীতি করার পালা। ছাত্রদলকে যেভাবে সংঘটিত করেছি যুবদলকেও শক্তিশালী করে তুলবো। আহবায়ক কিংবা সদস্য সচিব দুটোর একটিতেও আমাকে মনোনিত করলে আমি আমার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারবো বলে মনে করি।’ 

 

প্রসঙ্গত, গত ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে সভাপতি করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।  আংশিক কমিটি ঘোষণার ৫ মাস পর খোরশেদকেই সভাপতি রেখে ২০১ সদস্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই বছরের ১৭ ফেব্রæয়ারি বাতিল করে দেয়া হয় মহানগর যুবদলের কমিটি।

এই বিভাগের আরো খবর