বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

সমাগম ঠেকাতে ছয় মামলা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২২  

 

# বিএনপির দাবী গায়েবী মামলা

# ৬শ’ মামলা হলেও সমাগম ঠেকাতে পারবে না: খোকন


যতই দিন যাচ্ছে ততোই রাজপথ গরম করে যাচ্ছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা ইস্যুতে দাবী নিয়ে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর বিএনপি। একই সাথে গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নারায়ণগঞ্জের যুদল নেতা শাওন হত্যার প্রতিবাদে শহরের চাষাড়া সভা করা হয়। এছাড়া সাংগঠনিকভাবে বিএনপি, প্রতিটি ওয়ার্ডে নতুন করে কমিটি গঠনের মাধ্যমে নেতা-কর্মীরা জেগে উঠেছে।

 

 

ইতিমধ্যে সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, খুলনা, চট্রাগ্রাম বিএনপি মহা সমাবেশ করেছে। সর্বশেষ আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে সরকার পতনের ফাইনাল আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে পারেন বিএনপি।

 

 

কয়েকটি সভায় আওয়ামী লীগকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায় সরকারের অধীনে নিরপক্ষে নির্বাচন দেয়ার দাবী তুলেছেন। কিন্তু তাদের এই দাবীতে কোন কর্ণপাত করছে না আওয়ামী লীগ।

 

 

এদিকে দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ১০ ডিসেম্বরে ঢাকা বিভাগীয়  মহা সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার সবচেয়ে নিকটতম জেলা নারায়ণগঞ্জ বিএনপি এক লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। এমনকি জেলা মহানগর বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনগুলো একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছে। 

 

 

কিন্তু বিএনপি’র ঢাকার সমাবেশকে বানচালের পাঁয়তারা করছে ক্ষমতাসীন দল। সেই সাথে প্রশাসনের লোক তাদের সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া এই সমাবেশ যেন সফল করতে না পারে; তার জন্য নারায়ণঞ্জ জেলা মহানগরের বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে চার থানায় ৫ মামলা দিয়েছে প্রশাসন। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ঢাকার সমাগম ঠেকাতে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এই মামলা দেয়া হয়েছে।

  

 

খোজঁ নিয়ে জানা যায়, জেলার পাচঁ থানায় পাঁচ মামলায় ৯৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে রূপগঞ্জ ছাত্রদল নেতা অনিক নিহতের ঘটনায় তাঁর বাবার মামলা নেয়নি পুলিশ; পরে তিনি আদালতে মামলা করেন। 

 

 

গত ২২ নভেম্বর 'শীর্ষ সন্ত্রাসী' জাকির খানের হাজিরার সময় আদালতপাড়ায় মিছিল ও সড়কে বিস্ফোরণের অভিযোগে বিএনপির ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে ২৮৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। 

 

 

তবে প্রত্যক্ষদর্শী জেলা পরিষদের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের চায়ের দোকানি মো. সবুজ জানান, “ওই দিন বড় মিছিল হয়েছিল। কিন্তু বিস্ফোরণের শব্দ পাননি তিনি; এমনকি আশ পাশের লোকজনও কোন শব্দ পান নাই।”

 

 

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রাসেল কনফেকশনারির রাশেদ মিয়া জানান, “তিনিও বিস্ফোরণের শব্দ শোনেননি। তবে ওই দিন বিএনপি নেতা জাকির খানের সমর্থকরা মিছিল করেছিল। সেই সাথে স্লোগান দিয়ে তার মুক্তির দাবী জানান।”

  

 

অপরদিকে  বন্দরে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে বন্দর থানায় ছাত্রলীগ কর্মী মো. সোহেল মামলা করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী বাগবাড়ীর ৪৫ বছরের নুরে আলম জানান, “তিনি ঘটনার সময় পাশের চায়ের দোকানে ছিলেন। রাতে আওয়ামী লীগের মিছিল হয়। কিন্তু ভাঙচুর বা বিস্ফোরণ হয়নি বলে জানান।” 

 

 

সর্বশেষ গতকাল ২৭ নভেম্বর সিদ্বিরগঞ্জ থানায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে ককটেল বিস্ফোরণ মামলা করা হয়। আর এতে করে বিএনপি নেতারা দাবী করেন তাদের বিরুদ্ধে করা সকল মামলা গুলো সব গায়েবী।

 

 

এদিকে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের এমপি সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, “বিএনপি দেশে লাশ চায়। তারা যে তিনটি জায়গা টার্গেট করেছে তার মাঝে নারায়ণগঞ্জ ১ নম্বরে। তাই সকল নেতা কর্মীদের সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি।”

 

 

অপরদিকে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলা নিয়ে তাদের দাবী এগুলো গায়েবী মামলা দেয়া হয়েছে। কেননা এই মামলায় একজন ছাত্র দল নেতা আছে, যিনি প্রবাসে অবস্থান করছেন; অথচ তার নামে মামলা দেয়া হয়েছে। মামলা প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

 

 

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন জানান, ‘সরকার ৬শ মামলা করেও ঢাকার সমাবেশে সামগম ঠেকাতে পারবে না।  মামলা হামলা দিয়ে ভয় দেখিয়ে অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশ গুলো ঠেকাতে পারে নাই। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের ১ দিনের সামবেশ ৩ দিনে রূপ নিয়েছে। তাই আমি মনে করি ঢাকার সমাবেশ ৭ দিন আগে থেকে শুরু হবে।’

 

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুনেছি রূপগঞ্জের অনেক পয়েন্টে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে পাহারা দিবে। সরকারের এই মামলা হামলার কারণে নেতা কর্মীরা ঘরে থাকতে না পেরে, তারা আরও উজ্জীবিত হচ্ছে। 

 

 

তাই আমি মনে করি, নেতা কর্মীরা এখন আগের থেকে শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামছে। ঢাকার সমাবেশে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঠেকাতে পারবে না; সমাবেশ সফল ভাবে বাস্তবায়ন হবে।’

 

 

জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রনি জানান, ‘সরকার বিএনপির আন্দোলন দেখে ভয় পাচ্ছে। তাদের গদি ধরে রাখতে পারবে; বিধায় বিএনপি নেতা কর্মীদের নামে একের পর এক গায়েবী মামলা দিচ্ছে। মামলা দিয়েও তারা ১০ ডিসেম্বরের ঢাকার সমাবেশ বা লোকের সমাগম ঠেকাতে পারবে না।’

 

 

মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহেদ আহমেদ জানান, ‘বিএনপি নেতা কর্মীদের পাশা পাশি মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে। বিভিন্ন বিভাগীয় সমাবেশ দেখে ক্ষমতাসীন দল ইতোমধ্যে ভয় পেয়েছে। আর এজন্য তারা ঢাকার সমাবেশকে বানচাল করার জন্য, ঢাকা সহ নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেকতা কর্মীদের বিরুদ্ধে পূর্বের ন্যায় তারা গায়েবী মামলা দিচ্ছে। 

 

 

আমরা মনে করি তারা গায়েবী মামলা, হামলা দিয়ে আমাদের আটকে রাখতে পারবে না। লক্ষাধিক নেতা কর্মী নিয়ে আমরা ঢাকার সামবেশকে সফল করবো।’

 

 

নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে; আর মানুষ এটা বুঝতে পারছে। বিএনপির বিভাগীয় সামবেশগুলো দেখে এই সরকার ভয় পাচ্ছে। 

 

 

তাই তারা বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দিচ্ছে। একই সাথে তাদের দলীয় ক্যাডার বাহিনী দিয়ে বিএনপি নেতা কর্মীদের উপর হামলা করছে। আমরা মনে করি, এই ভাবে হামলা-মামলা দিয়ে তারা বিএনপি’র গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে দমাতে পারবে না। 

 

 

ঢাকার সামবেশ থেকে সরকার পতনের ডাক আসবে; এটা তারা বুঝতে পেরে সামবেশে যেন লোকজন আসতে না পারে তার জন্য মামলা দিয়ে বাধা দিচ্ছে। আমি মনে করি ঢাকার সমাবেশ সফল ভাবে শেষ হবে; সেই সাথে এই সরাকরের পতন হবে।’ এন.এইচ/জেসি 

এই বিভাগের আরো খবর