শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সমাবেশকে ঘিরে মামলার জালে বিএনপি

অর্ণব হাসান

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০২২  

 

# সমাবেশকে টার্গেট করেই ষড়যন্ত্র : গিয়াসউদ্দিন
# পতন আতঙ্কে সরকার: সাখাওয়াত
# গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘর ছাড়া বিএনপি নেতারা

আগামী দ্বাদশ  নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজপথ দিনের পর দিন গরম হচ্ছে। ইতোমধ্যে সপ্তাহ খানিক আগে যশোর সমাবেশে নৌকার জন্য ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে ভোট দেয়ার জন্য ওয়াদা করিয়েছেন। কিন্তু তা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে নির্বাচন আসলেই পরিস্কার হয়ে যাবে।

 

 

এদিকে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপি মহা সামবেশের ঘোষনা দিয়েছেন। এই সমাবেশকে সাফল্য মন্ডিত করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর বিএনপি ব্যপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ এই সমাবেশকে বাঞ্চাল করার জন্য সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিএনপি নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রাখছে। কিন্তু তারা যে কোন বিনিময়ে হোক সমাবেশকে সফল করবেন।

 

 

অপর দিকে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়ছে উত্তেজনা। ওইদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি পুলিশ, তবে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে অনড় বিএনপি। সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটি।

 

 

আর সরকারি দলও ১০ ডিসেম্বর ঘিরে সভা, সমাবেশ, মহড়া, অবস্থানের প্রস্তুতি নিয়েছে। এদিকে সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার। বিএনপি নেতাদের দাবি, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়েছিল সরকার।

 

 

এবারো সেই পুরোনো কৌশল গ্রহণ করেছে। বিদেশে অবস্থান করছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন, ককটেল ফোটানোর শব্দই শোনেনি কেউ অথচ দেয়া হচ্ছে মামলা। যাদেরকে স্বাক্ষী বানানো হয়েছে তারাও জানেন না ঘটনা কখন ঘটেছে। মূলত: বিএনপির চলমান আন্দোলন দমন করতে আওয়ামী লীগ গায়েবি মামলার রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছে বলে মনে করেন তারা।

 

 

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে, বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত ২২ আগস্ট থেকে সারাদেশের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর, থানা, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণসমাবেশ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।

 

 

সে সময় থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে মামলা, গ্রেফতার। এই মামলা গুলোতে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের নেতা কর্মীদের চাপে রাখার জন্য এখানেও একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে। মামলার জাল থেকে যেন জামিন নিয়েও তারা কোন ভাবে পার পাচ্ছে না। আবারও মামলার জটলা তৈরী হচ্ছে।

 

 

এরই মধ্যে ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচি নিয়ে উত্তাপ ছড়ানোর পর গত ১৩ দিনেই নারায়ণগঞ্জের ৭ টি থানায় এক হাজার নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে ১০ মামলা হয়েছে। আন্দোলন দমাতে মামলা দায়ের আওয়ামী লীগের ‘রাজনৈতিক কৌশল’ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।

 

 


একাধিক সূত্রে জানাযায়, গত মঙ্গলবার পুলিশ হেড কোয়ার্টারস থেকে মহান বিজয় দিবস, বড়দিন ও থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে সারাদেশে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

 

 

তবে পুলিশ সদরদপ্তর বলছে, আসন্ন কয়েকটি জাতীয় দিবসকে কেন্দ্র করে এই অভিযান। এটি পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। মঙ্গলবার পুলিশ সদরদপ্তরের অপারেশন শাখার পাঠানো এক আদেশ অনুসারে, দেশের সব পুলিশ ইউনিটের প্রধান ও সব জেলার পুলিশ সুপারদের ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অভিযান চালাতে বলা হয়েছে।

 

 

আদেশে বলা হয়, অন্যান্য স্থানের পাশাপাশি আবাসিক হোটেল, মেস, হোস্টেল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টারসহ অপরাধীদের লুকিয়ে থাকার সম্ভাব্য স্থানগুলোতে কার্যকর অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

 

 

পরিচালিত অভিযানে জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও কারবারি, অবৈধ অস্ত্রধারী, পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেফতার, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। এই নির্দেশনার পর থেকে বিএনপির অনেক নেতা কর্মী এখন বাড়ি ঘর ছাড়া আছেন। তাদের মাঝে গ্রেপ্তার আতঙ্ক তৈরী হয়ে আছে।

 

 

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ১৪জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে আরো ৭০/৮০জন নেতাকর্মীকে আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করেছে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ। গতকাল ৬৯ জনের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় মামলা হয়েছে।

 

 

একই দিনে ফতুল্লা থানায়ও মামলা দায়ের করা হয়। মামলার ধারা এবং ইস্যূ এক। কিন্তু ঘটনাস্থল এবং নাম ভিন্ন। তাই তারা এই মামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

 

 

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন অভিযোগ করে বলেছেন, ‘তাদের কোনো নেতাকর্মী মিছিল বা মিটিং করেনি। নারায়ণগঞ্জে একটি মহল আছে। যাদের কাজই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। বিভিন্ন সময় হুমকি ধামকি দিয়ে প্যানিক সৃস্টি করা। এদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সারা দেশের মানুষই জানে। এটি এই মহলেরই কাজ। বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেই এসব করানো হয়েছে।

 

 

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশকে সরকার নিজেদের পতনের ইঙ্গিত মনে করছেন। মূলত আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঠেকাতেই সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে গায়েবি মামলা দায়ের করেছে। নারায়ণগঞ্জে এ ধরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

 

 

একই সঙ্গে এই মিথ্যা সাজানো গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। তাছাড়া কোনো ষড়যন্ত্র করেও ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পতন আতঙ্কে আছেন বিএনপি। তারা ভয় পেয়ে সাধারন মানুষকে পর্যন্ত আসামী করে মামলা দিচ্ছে। যা খুৃবই দুঃখ জনক।

 

 

এছাড়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রশাসনকে দলীয় করণ করে ফেলছে। এসব করে তাদের শেষ রক্ষা হবে না। তারা সারাদেশে অস্থিরতা তৈরী করে রাখছে। যাতে করে মানুষ সমাবেশে যেতে না পারে। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য সফল হবে না। আমরা সফল ভাবে সমাবেশকে সাফল্য মন্ডিত করবো।

 

 

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন বলেন, শেষ রক্ষা পেতে এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রাখতে সরকার আবারো সেই পুরোনো খেলা শুরু করেছে। নিশিরাতের মাফিয়া সরকার পতনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচিকে নিয়ে ‘পোড়া মাটি নীতি’ অবলম্বন করেছে।

 

 

আওয়ামী ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য বিরোধী দলীয় কর্মসূচিকে বাঞ্চাল করতে নানা ষড়যন্ত্র করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা-নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অসংখ্য ককটেল ফাটানোর অভিযোগে পুলিশের মামলা দায়ের, কিন্তু কেউ ককটেল ফুটতে দেখেনি বা শোনেনি।

 

 

নারায়ণগঞ্জে পুলিশের মামলায় জাপানে থাকা প্রবাসী ছাত্রদল নেতা গায়েবি মামলার আসামি। সেই পুরোনো কায়দায় সারা দেশে আবারও গায়েবি মামলার হিড়িক চলছে। তবে আমরা তাদের এই মামলা হামলাকে ভয় পাই না। কয়েক হাজার মামলা দিয়েও তারা বিএনপি নেতা কর্মীদের দমাতে পারবে না। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের পরে সরকার টিকে থাকতে পারবে বলে তারা এখন মামলা দিয়ে নেতা কর্মীদের দমাতে চাচ্ছেন। কিন্তু এতে করে কোন কাজ হবে না।

 

 

মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এইচ মামুন জানান, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশকে ভয় পেয়ে সরকার বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিচ্ছে। এক দিকে নেতা কর্মীরা জামিন নিয়ে আসেন আরেক দিকে সরকারের পুলিশবাহিনী বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দেন। কিন্তু এই মামলা হামলা দিয়ে তারা আমাদেরকে দমাতে পারবে না। এমনকি ঢাকার সমাবেশকেও বাঞ্চাল করতে পারবে না।

 

 

তিনি আরও বলেন, সরকার আবারও পুরোনো খেলা শুরু করেছে। ককটেল ফাটাতে দেখেনি কেউ, অথচ মামলা দিয়েছে পুলিশ। বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা, কিন্তু সাক্ষী কিছুই জানেন না। কারণ ককটেলের কোনো শব্দই হয়নি, কেউ কিছু দেখেনি। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা সবই গায়েবি মামলা।

 

 

মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, সারাদেশের মানুষ এখন সরকার পতনের অপেক্ষা করছে। কেননা এই সরকারের গুম হত্যা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষ তাদের চায় না। তারা উন্নয়নের কথা বলে দেশের টাকা পাচার করে আজকে অর্থ  দেশকে সংকটে ফেলে দিছে। তারা প্রশাসনের মাধ্যমে মামলা দিয়ে নেতা কর্মীদের আতঙ্ক তৈরী করে রেখেছে।

 

 

কিন্তু বিএনপি নেতা কর্মীরা ১৪ বছর যাবৎ মামলা হামলায় জর্জরিত হয়ে আছেন। তার পরেও রাজপথ ছেড়ে যান নাই। তাই আমি মনে করি এই গায়েবী মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার বিএনপি নেতা কর্মীদের দমাতে পারবে না। ১০ ডিসেম্বর সফলতার সাথে বাস্তাবায়ন হবে।

এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর