বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

সম্প্রীতির স্বাক্ষর রাখলো নারায়ণগঞ্জ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২১  

# কুমিল্লার ঘটনায় না’গঞ্জে নানা শঙ্কা থাকলেও পরিবেশ ছিলো শান্তিপুর্ণ


# আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিলো তৎপর


# রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারাও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছেন


# সকলে মিলে সুন্দর ভাবে দিনটি অতিবাহিত করতে পেরেছি : এসপি

 

কুমিল্লার পুজা মণ্ডপে পবিত্র আল-কোরআন অবমাননা এবং পরবর্তীতে মণ্ডপ গুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার জেরে দেশের সর্বত্র উদ্বেগ দেখা দিলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বাক্ষর রেখেছে নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দারা। কোন রকম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছাড়াই অতিবাহিত হলো পবিত্র জুমাদিন। একই সাথে হিন্দু ধর্মাবলম্বিরাও বিগত বছরের ন্যায় উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করেছে।

 

তবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শহর থেকে শহরতলীতেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিলো তৎপর। শহরের উভয় ধর্মের ধর্মীয় উপসনালয় এবং প্রতীমা বিসর্জনের স্থানসহ গুরুত্বপূর্ন স্থানগুলোতে পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবি সদস্যরা সতর্ক ভূমিকায় অবস্থান নেন। এক্ষেত্রে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক নেতারাও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছেন নারায়ণগঞ্জের সম্প্রীতি রক্ষায়।

 

এদিকে, কুমিল্লার ঘটনায় কারো কারো মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলেও নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলছেন কোন ধর্মেরই ধার্মিক মানুষ ওই ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটাতে পারে না। যারা ওই ঘটনার সাথে জড়িত, তারা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধাতেই ওই ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটাতে পারে বলে সচেতন মহল ধারণা করছে। তবে, এমন একটি স্পর্শকাতর ঘটনার রেশের মধ্যেই একই দিনে পবিত্র জুমা এবং হিন্দুদের প্রতিমা বিসর্জন হওয়ায় যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে কেউ কেউ শঙ্কায় ছিলেন। বিশেষ করে, জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা উত্তেজিত হতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করেছিলেন।

 

তবে, জুমার নামাজের পর ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার জেরে বিক্ষোভ মিছিল বের করলেও কোন ধরনের উশৃংখল আচরণ করেননি। তাছাড়া, তাদের মিছিলে হিন্দু ধর্মকে আক্রমণ করে কোন শ্লোগাণ দিতে শোনা যায়নি। ওই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদেরই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মুসল্লিরা। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।

 

এদিকে, মুসল্লিদের বিক্ষোভ মিছিল শেষে সময় যত গড়িয়েছে, নারায়ণগঞ্জে ততই উৎফুল্ল অবস্থায় দেখা গেছে হিন্দু ধর্মালম্বিদের। অন্যান্য বছরের মত এবারও তারা তাদের ধর্মীয় উৎসব নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পালন করেছে। রাতে যথা সময়ের মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনও দিয়েছে তারা। এর মাধ্যমে আবারও নারায়ণগঞ্জ সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির সাক্ষর রেখেছেন বলে মনে করছেন নগরবাসী। এদিকে, কুমিল্লার ঘটনার পর গতকাল একই দিনে পবিত্র জুমা এবং হিন্দু ধর্মালম্বিদের প্রতিমা বিসর্জন হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিলো কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘বিষয়টি চ্যালেঞ্জ নয়। একই দিনে পুজা এবং জুমা থাকতেই পারে। বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। নারায়ণগঞ্জের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী।

 

নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের জনগণ, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ সকলে মিলেই আমরা সুন্দর ভাবে দিনটি অতিবাহিত করতে পেরেছি। এজন্য সাংবাদিকদেরও ভূমিকা ছিলো। আমাদের পুলিশ সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী এ্যাক্টিভ ছিলো। প্রতিটি বিষয়ে আমাদের নজরদারি ছিলো। আমরা সবাই মিলে দিনটি সুন্দর এবং সুষ্ঠ ভাবে পার করতে পেরেছি। নারায়ণগঞ্জের মানুষ আরো একবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বাক্ষর রেখেছে এবং এটি অটুট থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

এই বিভাগের আরো খবর