বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘সাংস্কৃতিক সংগঠন বিকাশে রনজিত কুমারের সৃজনশৈলী’ শীর্ষক সেমিনার

প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সেমিনার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘সাংস্কৃতিক সংগঠন বিকাশে রনজিত কুমারের সৃজনশৈলী’ শীর্ষক সেমিনারে আয়োজন কারা হয়েছে।


শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ টায় সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণের উদ্যোগে আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের এক্সপেরিমেন্টাল হলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।


সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অমল আকাশ।


আলোচনা করবেন-সংস্কৃতিজন রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানি শংকর রায়, কবি আরিফ বুলবুল, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির পরিচালক ধীমান সাহা জুয়েল, প্রাবন্ধিক ফিরোজ আহম্মেদ এবং গণমাধ্যমকর্মী মিলটন আনোয়ার।


সেমিনারে রনজিত কুমারের শুভাকাঙ্খীসহ সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যদের উপস্থিত থাকার জন্য আনুরোধ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ।


প্রসঙ্গত, নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুরের মাতুলালয়ে ১৯৬২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রনজিত কুমারের জন্ম। পিতা রামেন্দ্র দাস নারায়ণগঞ্জের কুমুদিনীতে কর্মরত ছিলেন, মা সবিতা রাণী দাস। নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি থেকে এসএসসি, নটরডেম কলেজ ঢাকা থেকে এইচএসসি পাশ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। রাজনীতি ও সাহিত্যের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে পড়েন।   


তিনি ময়মনসিংহের সাহিত্য সংগঠন ‘বীক্ষণ’ এর আহ্বায়ক হন। পরে বিপ্লবী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ময়মনসিংহের কাশিয়ার চরে ভুমিহীনদের খাসজমি উদ্ধারে আন্দোলনে যুক্ত হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে আহত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপালে থাকেন। সুস্থ হয়ে পুনরায় ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে ভূমিহীনদের খাস জমি উদ্ধারের আন্দোলন করে গ্রেফতার হন। আর এরই মধ্যে চুকে যায় তার চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাঠ। পরে মানবিক বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। দু’বছর কারাগারে থেকে ১৯৮৯ সালে মুক্তি পান। 


১৯৯০ সালে নারায়ণগঞ্জ ফিরে আসেন এবং শুরু করেন শিশুদের সংগঠিত করার কাজ। ১৯৯২ সালে গড়ে তোলেন শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমি এবং পরে ধাবমান সাহিত্য আন্দোলন। এসব সংগঠনের মাধ্যমে নিয়মিত সাহিত্য, আবৃত্তি, সংগীত এবং অভিনয়ে কর্মী গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত হন। 


কর্মজীবনে রনজিত কুমার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুগরের আউট রিচ প্রকল্পের সমন্বয়ক। তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে তুলে আনেন মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা ইতিহাস। সাহিত্যে তিনি কবিতা ও গদ্যে একাধারে বিচরণ করেছেন। লিখেছেন প্রবন্ধ, ছড়া ও শিশু নাটক। তাঁর প্রকাশিত কবতিা গ্রন্থ ‘এক সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে’ (২০১২), ‘প্রবন্ধ-নিবন্ধ নিয়ে চৌহদ্দির রিনিঝিনি’ (২০১৬), ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস : নারায়ণগঞ্জ জেলা ’ (২০১৭), সম্পাদনা গ্রন্থ’ ‘সমভূ মানব কথা ’। 


১৯৯৭ সালে রনজিত কুমার বিশিষ্ট প্রকৃতি বিজ্ঞানী দ্বিজেন শর্মার ভ্রাতুষ্পুত্রী সঞ্চিতা শর্মাকে বিয়ে করেন। সঞ্চিতা শর্মা বর্তমানে মৌলভীবাজারের জেলার বড়লেখার সুজানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। তাদের দুই সন্তান-প্রথম প্রান্ত (১৯) ও অনন্ত উৎসাহ (১৭)।


উল্লেখ্য, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ বছরের ২ জানুয়ারি সকালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। সেদিনই সন্ধ্যায় রনজিত কুমারের কর্মময় জীবনের পরিসম্পাপ্তি ঘটে। ৩ জানুয়ারি সকালে তার মরদেহ রাখা হয় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে। সেখানে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও নেতৃবৃন্দের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নগরের মাসদাইর শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।

এই বিভাগের আরো খবর