বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সাধারণ সম্পাদক পদে আহবায়ক কমিটির আগ্রহী চারজন

লিমন দেওয়ান

প্রকাশিত: ৩ জুন ২০২৩  

 

# ৮০ ভাগ ভোটার আমার ভোট দিবে : রাজিব
# নির্বাচনের নানা প্রস্তুতি নিচ্ছি : খোকন
# এ বিষয়ে কোন নিজস্ব ইচ্ছা পোষন করিনি : মামুন মাহমুদ

 

 

দীর্ঘ এক যুগের ও বেশি সময় পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির জাঁকজমক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যা নিয়ে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ বিএনিপর নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দ উল্লাস কাজ করছে। ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছে এক ঝাঁক নেতা। নেতাকর্মীরা আশাবাদী যে, সকল পদের জন্যই শত শত নেতাকর্মী অংশ গ্রহন করবে যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটাই জাঁকজমকভাবেই সম্মেলন হবে। কিন্তু এখনও ভেন্যু কোথায় হবে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন স্থান নির্দিষ্ট করা হয়নি। এমনকি কোন নির্দিষ্ট তারিখ ও দেওয়া হয়নি।

 

কিন্তু জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি, অতি শীঘ্রই একটি উল্লাসিত সম্মেলন হবে। আর এই সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভপতি পদে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিপরীত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমানে জানা গেছে, ৪জন অধিক প্রার্থী হচ্ছেন। বর্তমান সত্র দ্বারা এর বেশিও হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সেই সাথে সভাপতি পদ ছাড়া অন্য সকল পদেই একের অধিক প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেন বলে নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলছে।

 

যার পরিপ্রেক্ষিতে যোগ্য ও পরীক্ষিত কর্মী বান্ধব নেতাই তার যোগ্যতা অনুযায়ী পদ পাবেন। ইতি মধ্যেই জানা গেছে, বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন সাধারন সম্পাদকের পদের জন্য দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছে। এছাড়া কমিটির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল রাজীব, যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান খোকা তারা সকলেই যে যার যার মতো লবিংয়ের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে নানা প্রস্তুতি করছেন।

 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫শে নভেম্বর শহরের আলী আহমেদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে জেলা বিএনপি’র সর্বশেষ সম্মেলনে তাকে বাদ দেয়া হয়। সর্বশেষ সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকারকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধরণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। যার ফলে ২০১৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

 

পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ না দেখায় সাড়ে ৩ বছর পর জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে পুনরায় এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। নির্দেশনা ছিল ৩ মাসের মধ্যে থানা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও এই আহ্বায়ক কমিটি সবগুলো ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি।

 

এরমধ্যে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র নির্বাচন করায় তৈমূর আলমকে আহ্বায়কের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় মনিরুল ইসলাম রবিকে। দুই বছরের মাথায় একই বছরের ১৫ই নভেম্বর মনিরুল ইসলাম রবি ও মামুন মাহমুদের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্র থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

 

তার সাথে সাথেই দীর্ঘ দেড় যুগে জেলা বিএনপির দায়িত্বে আসা নেতাকর্মীরা যে ব্যর্থ হয়েছিলেন সেখানে নতুন আলো ছিটিয়ে দেয় নতুন আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে ১০টি ইউনিটে কমিটির ১৫১ জন করে কাউন্সিলর রয়েছে। সে হিসেবে সারা জেলাজুড়ে ১ হাজার ৫১০ জন কাউন্সিলর ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সেই সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সামনেই এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

 

তাদের ইউনিটগুলো হলো রূপগঞ্জ উপজেলা, সোনারগাঁ উপজেলা, আড়াইহাজার উপজেলা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, ফতুল্লা থানা, সোনারগাঁও পৌরসভা, কাঞ্চন পৌরসভা, তারাব পৌরসভা, গোপালদী পৌরসভা ও আড়াইহাজার পৌরসভা। বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা বিএনপির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে বর্তমান আহ্বায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের বিপরীতে কারও প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে গোলাম ফারুক খোকনের রয়েছে নানা প্রস্তুতি।

 

এছাড়াও নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল রাজীব যিনি বিগত দিন থেকেই বিএনপির একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত। অপর দিকে ফতুল্লা এলাকার আরেক পরীক্ষিত নেতা লুৎফর রহমান খোকা ও নানা লবিং করে যাচ্ছে। অপর দিকে কমিটির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ কোন পদের জন্য নির্বাচন করবেন তা নিয়ে নানা সংশয়ে রয়েছেন। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সম্মেলনের দিন আহ্বায়ক কমিটির বাইরে থাকা একাধিক নেতারা প্রার্থী হিসেবে জাহির করতে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত কারও নাম আলোচনায় আসেনি।

 

আর জেলা বিএনপির কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন মনিরুল ইসলাম রবি, শহিদুল ইসলাম টিটু, মোশারফ হোসেন ও জুয়েল আহমেদ। তারাও যে যার যার যার লবিং করে একটা ভালো পদে পদায়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ অবহ্যত রেখেছে। জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, সম্মেলনে আনন্দ উদ্দীপনা ও তরুণ নেতৃত্বের একটা চমক থাকার সম্ভবনা রয়েছে। দীর্ঘদিন পর এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সম্মেলনের মাধ্যমেই জেলা বিএনপির রাজনীতি অনেকটাই গর্জে উঠবে। আর আন্দোলন সংগ্রামে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারবে।

 

এদিকে বিএনপির স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিল সফলভাবে করার জন্য এরইমধ্যে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এদিকে ৩০ মে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির কাউন্সিল করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা যায়। এই লক্ষ্যে জেলা বিএনপির নেতারা এখন কাউন্সিল আয়োজন করার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নেতাকর্মীরা এই কাউন্সিল জাকঁজমকপূর্ণভাবে পালন করার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন।

 

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন বলেন, আমি বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব পদে রয়েছি। আর বর্তমান কাউন্সিলে আমমি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনের নানা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর এছাড়াও আরো একাধিক নেতাকর্মী লবিং করে যাচ্ছে সাধারণ সম্পাদকের পদে পদায়ন হওয়ার জন্য। আমরা আশা বাদী যোগ্য ও কর্মী বান্ধব নেতাকর্মী দ্বারাই সকল পদ পদায়ন হবে।

 

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ যুগের চিন্তাকে বলেন, জেলা বিএনপির যে কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। সেই কাউন্সিলে অংশগ্রহণ করতে বর্তমানে আমি ব্যাপকভাবে প্রস্তুত আছি। আর এখন পর্যন্ত আমি কোন ডিসেশন নেয়নি যে সভাপতি পদে নাকি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করবো।

 

কিন্তু কাউন্সিলের ডেলিগেটার যারা থাকবে তারা যদি আমাকে সভাপতি পদে দাঁড় করাতে চায় আমি সেই পদেই নির্বাচন করবো আর তারা যদি বলে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে আমি সেই পদেই নির্বাচন করবো। আমি এখন পর্যন্ত কোন পদে দাঁড় হবো এ বিষয়ে কোন নিজস্ব ইচ্ছা পোষন করিনি। আর আমি আশা করছি একটি বৃহত্তম সম্মেলন হবে এই জেলা বিএনপির সম্মেলন।  

 

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব যুগের চিন্তাকে বলেন, কাউন্সিলকে ঘিরে নানা ধরণের অপপ্রচার হচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদে আমার নাম প্রস্তাব করলে কাউন্সিলরা ৮০ ভাগ ভোট আমাকে দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি।এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর