শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সিদ্ধিরগঞ্জে হত্যার পর লাশ কাঁধে নিয়ে গায়েবের চেষ্টা খুনির(ভিডিও)

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

যুগের চিন্তা ২৪ : মাদক ব্যবসায়ীদের পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে এমন সন্দেহে সিদ্ধিরগঞ্জে শুভ (১৮) নামে এক মটর শ্রমিককে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে সংঘবদ্ধ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা। হত্যার পর শুভর লাশ কাঁধে নিয়ে গুম করার চেষ্টা করেছিল খুনিরা।

 

তবে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে খুনিদের  চেষ্টা ব্যর্থ হয়। খুনিরা লাশ কাঁধে নিয়ে কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করলেও তাদের লাশ গুমের মিশন সফল হয়নি। ঘটনা স্থলের পাশর্^বর্তী একটি বাড়ীর সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এমন তথ্য মিলেছে।

 

 এ সময় শুভকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে মাদক ব্যবসায়ীরা ফারুক, জুম্মন, রফিক, মোজাম্মেল ও মিথুন নামে যুবকদেরকেও তারা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। এদের মধ্যে জুম্মনের অবস্থা আশংকাজনক।

 

হত্যাকান্ডের মিশনে জড়িত মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে জনি, আনিস, বিথি, অনিক, শাকিল, হৃদয়, রবিন, নজরূল, হাসু বেগম, সেলিম, টুনি ও সজিবের নাম জানা গেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের এমন আস্ফালনে এলাকায় চরম আতংক বিরাজ করছে।

 

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এলাকায় লাশ নিয়ে আসলে স্বজনদের আহাজারিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। নির্বাক হয়ে পড়ে উপস্থিত এলাকাবাসি। 

 

গত শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মধ্যপাড়া বৌ বাজার আমির স্বর্ণকারের বাড়ীর পিছনে রাস্তার গলিতে এ নির্মম হত্যান্ডের ঘটনাটি ঘটে। 

 

খবর পেয়ে রাতেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রুবেল, উপ পরিদর্শক হাফিজুর, মুজিবুর, গৌতম, সহকারি উপ পরিদর্শক মোমেন ও হুমায়ুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় রাত ১২টার দিকে পুলিশ মারিয়া ও অনিক নামে দুজনকে আটক করেন।

 

এ ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজ জানান নিহতের মাথার পিছনে রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে শুভর মৃত্যু হয়।   

 

নিহত শুভ শিমরাইল দক্ষিনপাড়া এলাকার রেজা মেম্বারের বাড়ীর ভাড়াটিয়া মৃত আব্দুর রবের ছেলে। সে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুর পূর্বপাড়ের সাজেদা হাসপাতাল সংলগ্ন একটি ট্রাকের গ্যারেজে মেকানিকের কাজ করতো।

 

হামলাকারী জনি শিমরাইল উত্তরপাড়া এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার পিতার নাম তাহের আলী। জনির স্ত্রী বীথি, শাশুড়ি ধেন্দি নাজমা এবং শ্যালক আনিস চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী।  এই পুরো পরিবারটি এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। 


নিহতের বোন রুমা ও স্থানীয় সূত্রে জানা জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গ্যারেজ থেকে কাজ শেষ করে বাসায় যাচ্ছিলেন শুভ। পথিমধ্যে শিমরাইল মধ্যপাড়া বৌ বাজার এলাকার আমির স্বর্ণকারের বাড়ীর পিছনে গলির রাস্তায় দেখা হয় ইয়াবা ব্যবসায়ী জনি ও আনিসসহ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর।

 

এসময় তাকে একা পেয়ে কিছু দিন আগে জনির শ্যালক আনিসকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে সে সন্দেহে তারা তাকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে।

 

এলাকার কয়েকজন যুবক শুভকে উদ্ধার করতে গেলে মাদক ব্যবসায়ী জনি, আনিস, অনিক, শাকিল, হৃদয়, রবিন, হাসু বেগম, বিথি, সেলিম, টুনি, নজরুল ও সজিবসহ অজ্ঞাত কয়েকজন নারী পুরুষ তাদের উপর হামলা চালায়। হামলায়  ফারুক, জুম্মন, রফিক, মোজাম্মেল ও মিথুন আহত হয়। এদের মধ্যে জুম্মনের অবস্থা আশংকাজনক।


পরে স্থানীয় লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। পরে আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় সাজেদা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

 

ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় শুভর মৃত্যু হয়।  জুম্মনকেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদেকর বিরুদ্ধে পুলিশে জিহাদ ঘোষনা হলেও এ এলাকাটিতে রহস্যজনক কারনে মাদক রোধ হচ্ছে না। আর মাদককে কেন্দ্র করে প্রায়ই অপরাধ কর্মকান্ড ঘটছে।

 

এই পরিবারটি এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী হওয়া সত্ত্বেও কাউকে তোয়াক্কা না করে বীরদর্পে এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই মিথ্যে মামলাসহ হামলার শিকার হতে হয়।

 

এ ছাড়াও জাহাঙ্গীরের বাড়িতে নিয়মিত মাদক সেবনের আড্ডা বসে। গানবাজনার অন্তরালে এখানে মাদক সেবন ও বিক্রি হয়। পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালালেও তাদের অপরাধের কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। জাহাঙ্গির ও তার স্ত্রী সুমি এ ঘটনাটি ধামাচাপা ও আপোষ মিমাংসা করার চেষ্টা করছে।

 

এ ঘটনায় হামলার শিকার আহত ফারুক জানায়, আমরা একটি মাঠে প্রতিদিন ক্রিকেট খেলতাম। সেই মাঠে জনি  ও আনিসসহ মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করার জন্য আড্ডা দিত। তাই বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিকরা গাঁজা ও ইয়াবা নেয়ার জন্য সেখানে ভিড় জমাতো।

 

এতে করে পুলিশ তাদেরকে ধরতে এসে আমাদেরকেও হয়রানী করতো। এ কারনে ২/৩ দিন আগে তাদেরকে ওই মাঠে এসে এসব বিক্রি না করার জন্য বলি। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে শুভর পাশাপাশি আমাদেরকে মাদক ব্যবসায়ীরা মারধর করেছে। 


হত্যার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: কামরুল ফারুক জানায়, এ ঘটনায় (শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত) থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। গত রাতেই দুজনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

এই বিভাগের আরো খবর